ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

গাজীপুরে জমি দখলে নিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মুরগী লুটের মামলা

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২২, ১৪:৪১  
আপডেট :
 ২৩ মে ২০২২, ১৫:১৫

গাজীপুরে জমি দখলে নিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মুরগী লুটের মামলা

গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানায় এক শিক্ষকের জমি দখলে নিতে তার বিরুদ্ধে পোল্ট্রি ফার্মের মুরগী ও নির্মাণ সামগ্রী লুট, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করেন ঢাকার ইমতিয়াজ করিম নামের এক ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ওই স্কুল শিক্ষক হলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাগবাড়ী এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে কফিল উদ্দিন আহমেদ (৭৯) ও তার ভাতিজা শফিজ উদ্দিনের ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে রাজু (৩৭)। তবে তাকে গ্রেপ্তারের দু’দিন পরে আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি টিমও গঠন করেছে মহানগর পুলিশ।

স্কুল শিক্ষকের মেয়ে কামরুন্নাহার বলেন, আমরা চার বোন ও এক ভাই। বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন। এখন তার বয়স ৭৮ বছরের বেশি। তিনি ২০০১ সালে ঢাকার সাভারের নাল্লা-বুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসরে যান। বেশিরভাগ সময় তিনি অসুস্থ থাকেন।

তার মেয়ে আরও বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বাগবাড়ী এলাকায় পৈত্রিকসূত্রে জমি পেয়েছেন আমার বাবা। সেই জমি রাজধানীর গুলশান এলাকার ফজলুল করিমের ছেলে ইমতিয়াজ করিম তার সহযোগীরা নানা কৌশলে দখল করার চেষ্টা করে আসছে। তারা জমি দখলে নিতে না পেরে আমার বাবা (শিক্ষক) সহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা ভাবে হয়রানি, মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। জমি দখলে না নিতে পেরে এ পর্যন্ত তারা আমাদের হয়রানি করতে বিভিন্ন থানায় ২৬টি মামলা দায়ের করেছে।

এরমধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তি ইমতিয়াজ করিম ৬টি মামলার বাদি বাকিগুলোর বাদি অন্যরা। বর্তমানে ১৩টি মামলা এখনও চলমান রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ মে ইমতিয়াজ করিম বাদি হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করে গাজীপুরের কাশিমপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় শুক্রবার সকালে কাশিমপুর থানা পুলিশ আমার স্কুল শিক্ষক বাবা ও আমার চাচার ছেলে জহিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। আদালত রোববার শুধু আমার বাবাকে জামিন দিয়েছেন। মামলার পর থেকে পরিবারের অন্যসদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ইতোপূর্বে ২০১৮ সালে আমার ছোট বোন নুরুন্নাহার সাথীকে অপহরণ করার অভিযোগে কুমিল্লায় ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যা চলমান রয়েছে।"

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সেখানে মুরগি থাকার কোন আলামত নেই। পরিত্যক্ত খামারে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর স্থান নির্মাণ করা থাকলেও সেখানে নেই কোনো গরু। আম, কাঠাল, লিচুসহ শতাধীক ফলের গাছ আগের মতোই আছে। তবে একটি আমড়া গাছ গত দুই দিন আগে ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে একটি জলপাই গাছের ডালা। রাস্তা সংলগ্ন একটি সীমানা প্রাচীর কে বা কারা ভেঙেছে তা কেউ নিশ্চিত নয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ইমতিয়াজ করিম তার পরিচিত বেলায়েত হোসেন , জসিম উদ্দিন চিশতী ও লায়লা আরজুমান বানু ১১ বছর আগে কাশিমপুর থানাধীন পূর্ব বাগবাড়ী মৌজায় ১ একর ৮০ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে মালিক হন। সেখানে বাউন্ডারী ওয়াল করে একটি গরুর খামার, একটি মুরগীর খামার, একটি পাকাঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলফলাদির গাছপালা রোপণ করে বলে মামলায় উল্লেখ করেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, 'ওই জমি দেখাশুনা করার জন্য আল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে কেয়ার টেকার হিসেবে নিয়োগ করে। জমি মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উল্লেখিত আসামিগণ তাদের (ইমতিয়াজ) বর্ণিত জমি জোর পূর্বক জবর দখল করার পায়তারা করে আমার জমি দেখাশুনা করার কেয়ার টেকার আল আমিনকে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করিয়া বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি হুমকি প্রদর্শন করে। ১২ মে আসামিরা ‘ইমতিয়াজ করিমের কাছে ২০ লাখ টাকা টাকা চাঁদা দাবি করে। ১৫ মে রাতের অন্ধকারে কাশিমপুর থানাধীন পূর্ব বাগবাড়ী সাকিনস্থ আমার ক্রয়কৃত জমিতে গিয়ে মুরগীর ফার্মের দরজা ও বেড়া ভাঙচুর করে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং নির্মাণ সামগ্রি দুই টন রড, মুরগীর ফার্মের চালের ১২ পিস টিন, ফার্মে থাকা ২০০ পিস বয়লার মুরগী লুট করে নেয়।

ইমতিয়াজ করিম সাংবাদিকদের বলেন, তারা লোক ভালো নয়, খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা আছে। তার বিরুদ্ধে জমি দখলের যে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে তা মিথ্যা। আমরা কয়েকজনে ২০০৯ সালে এবং ২০১১সালে কফিল উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে এক একর ৮০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি। আমাকে হয়রানির জন্য ২০১৮ সালে কফিল উদ্দিনের ছোট মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে কুমিল্লার একটি থানায় নারী শিশু দমন নির্যাতন আইনে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। যা ছিল মিথ্যা ও সাজানো। পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই কথা বলা হয়েছে।

পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. জাকির হাসান জানান, ওই ঘটনা তদন্তে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে শনিবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশিনার মো. বরকতুল্লাহ খান, এবং কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- উপ-পুলিশ কমিশনার (এস্টেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট ) মিজানুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার খায়রুল আলম। তদন্ত কমিটি রোববার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কাশিমপুর থানার ওসি মো. মাহবুবে খোদার কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পোল্ট্রি ফার্মে মুরগি নেই, গরুর খামার নাই, গাছও কাটে নাই তাতে কি। ওয়াল যে ভাঙা ছিল এটাতো ঠিক আছে। কেউ মামলা করলে কি সব সত্যি কথা লেখে? কে বা কারা ওয়াল ভেঙেছে কিংবা প্রকৃত ঘটনা কি তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশিনার মো. বরকতুল্লাহ খান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের কাজ শুরু করা হয়েছে। মামলা গ্রহণে কারো কোনো অবহেলা থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/স্বর্ণ/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত