ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বাগত ১৪২৫: নতুন বছরের প্রতিটি দিন হোক সুন্দর

  ফিচার ডেস্ক

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ০১:১৮  
আপডেট :
 ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:১৯

স্বাগত ১৪২৫: নতুন বছরের প্রতিটি দিন হোক সুন্দর

বিদায় নিলো ১৪২৪। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো বাংলা বর্ষপঞ্জির আরেকটি বছর। আজ থেকে আরেকটি নতুন বছরের পরিক্রমা শুরু হলো বাঙালির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিতে। নতুন বছরের সূচনায় সবার মনে থাকে জীবনের জরা-অন্ধকার ঝেড়ে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। আর সেই লক্ষ্যে সবার মনে অফুরন্ত জীবনীশক্তি নিয়ে আসুক বৈশাখের রুদ্র তাপস বাতাস। নতুন বছরের প্রতিটি দিন হোক সুন্দর।

‘জাগো ফুলে ফলে নব তৃণদলে/তাপস, লোচন মেলো হে।/জাগো মানবের আশায় ভাষায়,/নাচের চরণ ফেলো হে।/জাগো ধনে ধানে, জাগো গানে গানে,/জাগো সংগ্রামে, জাগো সন্ধানে,/আশ্বাসহারা উদাস পরানে/জাগাও উদার নৃত্য।’ রবিঠাকুর এভাবেই আবাহন করেছেন বাংলা নতুন বর্ষকে।

পহেলা বৈশাখ জাতির এক অনুপ্রেরণার দিন। সবচেয়ে বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক ও সর্বজনীন উৎসবও। বাংলার ঘরে ঘরে আজ উৎসব হবে। সব জনপদ, লোকালয়, সমতলে, পাহাড়ে বর্ণিল রঙে রাঙাবে বাংলা। প্রাণে প্রাণ মিলে মেতে উঠবে বৈশাখী উল্লাসে।

আজকের উৎসবে থাকবে নানা রং। গ্রাম থেকে শহর, নগর থেকে বন্দর সব জায়গায় আজ দোলা দেবে বৈশাখ। মুড়ি মুড়কি, মণ্ডা মিঠাইয়ের সঙ্গে নাচে-গানে, ঢাকে-ঢোলে, শোভাযাত্রায় পুরো জাতি বরণ করবে নতুন বছরকে।

বাংলা নববর্ষের উৎসবের কথা এক শিরোনামহীন কবিতায় জীবনের শেষশয্যায়ও লিখে গিয়েছিলেন কবি সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক। তিনি লিখেছেন ‘আর কিছু নয়/একটুখানি/ওতেই আছে সব/একটি বাঁশির সুরে/আমার বাংলার উৎসব/গ্রামের ঘরে ঢুলি যাচ্ছে/বের করছে ঢোল/ঢোলের বুকে বাড়ি পড়ছে/চক্ষু মেলে তোল/এই তো আমার দেশের বাড়ি/এই তো উৎসব।’

পহেলা বৈশাখে বাঙালি আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে আবার জেগে উঠবে, এক সুরে গেয়ে উঠবে বাঙলির জয়গান। পহেলা বৈশাখে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নানা বয়সের মানুষ উৎসবের আলোয় রঙিন হয়ে উঠবে। পোশাক-পরিচ্ছদ, খানাপিনা, গানবাদ্যসহ সব কিছুতে থাকবে বাঙালিয়ানার প্রাধান্য। দিনভর ঘোরাঘুরি, আড্ডা, আমন্ত্রণ ও তুমুল উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে জাতি। যান্ত্রিক শহর ঢাকার মানুষ সাতসকালেই বের হবে ঘর থেকে। নারীরা পরবে লাল-সাদা শাড়ি, ছেলেদের পরনে থাকবে রংবেরঙের পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ বৈশাখের সাজসজ্জা। মা-বাবার সঙ্গে বেরিয়ে পরবে শিশু-কিশোরের দল। রাজধানীতে আজ বসবে নানা সাংস্কৃতিক উৎসব। মানুষ দল বেঁধে তাতে অংশ নেবে।

রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ : বাঁশিতে ভোরের রাগালাপে এবার বাংলা নববর্ষ বরণ করবে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। বাংলা নববর্ষ ১৪২৫-এর প্রথম প্রহরে সকাল সোয়া ৬টায় বাঁশিতে ভোরের রাগালাপ দিয়ে বরণ শুরু হবে বর্ষবরণের এ প্রভাতি আয়োজন। ১৬টি একক গান, ১২টি সম্মেলক গান, দুটি আবৃত্তি এবং সব শেষে ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুনের নতুন বছরের আবাহনী কথন দিয়ে শেষ হবে এ বছরের অনুষ্ঠান। প্রভাতি এ আয়োজনে দেড় শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। ছায়ানটের বর্ষবরণের এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শিকড়ের সন্ধান’। সকাল সোয়া ৬টায় শুরু হয়ে সোয়া দুই ঘণ্টার ব্যাপ্তিকালের এ আয়োজন শেষ হবে সকাল সাড়ে ৮টায়।

চারুকলার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ : নববর্ষ বরণে চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। সকাল সাড়ে ৮টায় চারুকলা অনুষদ থেকে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যের এই শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রায় থাকবে পাঁচ শতাধিক শিল্পকর্ম। শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হবে।

শিল্পকলার আয়োজনে পাঁচ মঞ্চে উৎসব : বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে রাজধানীর পাঁচ মঞ্চে হবে অনুষ্ঠান। সকাল ৭টায় মিরপুর, সকাল ৯টায় উত্তরার রবীন্দ্র সরণি বটতলায়, বিকেল ৩টায় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাড়ে ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং বিকেল ৫টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

চ্যানেল আই-সুরের ধারার আয়োজন : নতুন বছরকে গ্রহণ করে নিতে আজ পহেলা বৈশাখের প্রভাতের প্রথম প্রহরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সারা দেশ থেকে নির্বাচিত হাজারও শিল্পীর কণ্ঠে পরিবেশিত হবে বর্ষবরণের গান। অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে বাঙালির হাজার বছরের বিভিন্ন ঐতিহ্যের উপাদান দিয়ে সাজানো বৈশাখী মেলার হরেক রকম স্টল। উৎসব চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজন : সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ধানমণ্ডি রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : সকাল ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান। এতে নৃত্য পরিবেশন করবে নৃত্যজন ও সংগীতাঙ্গন মণিপুর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে কল্পরেখা, ইউসেপ স্কুল, আগারগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও বধ্যভূমির সন্তানদল এবং বাউল গান পরিবেশন করবেন রঞ্জিত দাস বাউল ও মমতা দাসী।

বাংলা একাডেমি : বক্তৃতানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। সকাল সাড়ে ৭টায় একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে নববর্ষ বক্তৃতা প্রদান করবেন প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল মোমেন। বক্তৃতা পর্ব শেষে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে ১০ দিনের বইয়ের আড়ং ও বৈশাখী মেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চলবে। প্র্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন : নববর্ষ উপলক্ষে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে থাকছে ‘পরান ভরি দাও’ গানের আসর। লালমাটিয়ার বেঙ্গল বই ঘরের এই অনুষ্ঠানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবে পথিক বাউলের বাঁশি ও গান।

নতুন বছর সারাদেশে সবার জন্য শুভ হোক, মঙ্গল বয়ে আনুক। নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার প্রেরণা নিয়ে আসুক নববর্ষ। পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে আসুন গাই রবিঠাকুরের গান, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...’।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত