ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

লক্ষ্মীপুরে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

  লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৪৪

লক্ষ্মীপুরে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

‘সয়াবিনের রাজধানী’ খ্যাত লক্ষ্মীপুর জেলায় বিগত কয়েক বছরগুলোর মতো এবারও সয়াবিনের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। সয়াবিন উৎপাদনে এখানকার মাটি অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এ জেলায় কৃষকরা রবিশষ্য জাতের এ ফলন উৎপাদনে খুব আগ্রহী থাকেন।

ফেব্রুয়ারী মাসের পুরোটা সময় সয়াবিন আবাদে ব্যাস্ত থাকেন এখানকার কৃষকরা। স্থানীয় কৃষিবিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন।

স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিনে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া সম্পূর্ণ অনুকূলে থাকায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকরা সয়াবিন আবাদে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, রায়পুর, কমলনগর ও রামগঞ্জ সহ জেলার ৫টি উপজেলায় আমন ধান কাটার পরই কৃষকরা সয়াবিন আবাদের উদ্দেশ্যে জমি প্রস্তুতির কাজ করছেন। জমিতে রস থাকতে থাকতে চাষ দেন। আইল কেটে নিয়ে জমির উঁচু-নিচু সমান করেন। আবাদ প্রস্তুতিতে আগাছা পরিষ্কার করা সহ জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। জমি শুকালে মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে করা হয়। সব প্রস্তুতি শেষে বীজ বোনেন কৃষকরা।

ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলবে সয়াবিনের বীজ বোনা। কৃষকরা সারি পদ্ধতি কিংবা এবং ছিটানো পদ্ধতিতে সয়াবিনের আবাদ করেছেন। বীজ থেকে চারা উঠতে শুরু হয়েছে। সামনে পরিচর্যার পালা-আগাছামুক্ত রাখা, প্রয়োজনে সেচের ব্যবস্থা করা। পোকা-মাকড় দমনে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়া। এসব যথাযথ হয়ে উঠলে এবং আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে এবারও বাম্পার ফলন আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সয়াবিন আবাদে খরচ কম। রোগ ও পোকার আক্রমণও কম হয়। চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় ধানের চেয়ে বেশিও। যে কারণে কৃষকরা সয়াবিন চাষে আগ্রহী।

জমির মালিক ও বর্গাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে চরাঞ্চলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমি পড়ে থাকতে দেখা যায় না। পরিত্যক্ত জমিতেও সয়াবিন চাষে সাফল্য আসছে।

কৃষি অফিসের পরিসংখ্যান মতে জানা যায়, সারাদেশে উৎপাদিত সয়াবিনের সিংহ ভাগ শুধুমাত্র লক্ষ্মীপুর জেলাতেই উৎপাদন হয়। ব্যাপক আবাদ ও বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্মীপুর জেলা ‘সয়াবিনের রাজধানী’ নামে খ্যাতি অর্জন করেছে।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৬ হাজর ৫৬০ হেক্টর, রায়পুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৮৫ হেক্টর, রামগতিতে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ১৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সয়াবিন বছরের সব সময় চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে ফলন বেশি হয়। যে কারণে রবি মৌসুমে সয়াবিনের আবাদ হয়ে থাকে। ৯৫ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি ১.৫ থেকে ২.৫ টন উৎপাদন হয়ে থাকে।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কাঙ্খিত ফলন পেতে কৃষি অফিস ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন।”

এসময় তিনি আরও জানান, সয়াবিন তেল জাতীয় শস্য। গাছ ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়। গাছের কা-ে ফুল হয়। ফুল থেকে শিমের বীজ জন্মায়। এই বীজগুলোকেই সয়াবিন বলা হয়। সয়াবিন ভোজ্যতেলের প্রধান উৎস। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। কচি ও শুকনো সয়াবিন বীজ সবজি ও ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। পরিণত সয়াবিন বীজ থেকে শিশুখাদ্য, সয়া দুধ, দই ও পনির, বিস্কুট ও কেকসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার তৈরি হয়ে থাকে। এছাড়াও পোল্ট্রি ও ফিশফিড তৈরি, রং , সাবান এবং প্লাস্টিক মুদ্রণের কালি ইত্যাদি দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সয়াবিন একটি অপরিহার্য উপাদান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশের সিংহ ভাগ সয়াবিন উৎপাদন করে সয়াবিনের রাজধানী খ্যাতি পাওয়ায় জেলার পরিচিতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এ কারনে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শহরের প্রবেশ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপিত সুদৃশ্য গোলচত্বরের নামকরন করা হয়েছে ‘সয়াল্যান্ড’ ব্রান্ডিং নামে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত