ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

নিরাপত্তার চাদরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০২  
আপডেট :
 ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:১২

নিরাপত্তার চাদরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনার এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাবের সরব উপস্থিতি রয়েছে।

একুশের প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর পরপরই শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ ভিআইপিদের যাতায়াত যথাযথ ও সুশৃঙ্খলভাবে করতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও থাকছে।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘২১ শে ফেব্রুয়ারি পালন নির্বিঘ্ন করতে ৬ হাজার পুলিশের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির সিদ্ধান্ত নেওযা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আর্চওয়ে, সিসিটিভি ক্যামেরা, পেট্রোলিং ব্যবস্থা, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি, ওয়াচ টাওয়ারও ডগ স্কোয়াড এছাড়া রায়ট কার ও এপিসি কারো প্রস্তুত থাকবে।’

মাসুদুর রহমান আরো বলেন, ‘নিরাপত্তার ঘাটতি বলতে কোনো কিছু রাখা হয়নি। চলাচল নির্বিঘ্ন করতে শহীদ মিনারের আশেপাশের সড়কে যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাহিনীর পোশাক ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ডিবি পুলিশ, এসবি ও সিআইডির সদস্যরাও নিরাপত্তা রক্ষার কাজ করবেন।’

একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালন উপলক্ষে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। জনসাধারণ নির্বিঘ্নে মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করবে বলে আশা করেন কমিশনার।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য র‌্যাবের পক্ষ থেকেও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি র‌্যাবের গোয়েন্দারাও কাজ করবে। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রয়োজনে আকাশ পথে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে।’ সেই প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই মুখপাত্র।

বুধবার ঢাকা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র। একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে শহীদ মিনার এলাকা জুড়ে কর্মব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা। ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে মূল বেদি, তাতে রক্তে রাঙ্গা তুলির আঁচড় দিচ্ছে প্রাণের সঞ্চার। পাশাপাশি আশেপাশের এলাকার দেয়াল জুড়ে লেখা হয়েছে একুশ নিয়ে নানান কথা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানালেন, দেয়ালে আমাদের জাতীয় বীরদের ফুটিয়ে তুলছি। যাতে শিশু-কিশোররা সহজেই ভাষা শহীদের সাথে পরিচিত হতে পারে।

আরেক শিক্ষার্থী জানালেন, একুশ মানেই যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। শেকড় ভাঙার দিন। সেটা ফুটিয়ে তুলছি দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে।

একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি। কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেছি, বিষয়টি তারা দেখছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটসহ কিছু তরুণ শিক্ষক শৃঙ্খলার জন্য কাজ করবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবাই সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করব। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা আর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে কেউ যাতে মূল বেদিতে না উঠে পড়েন, সে বিষয়টি সকলের খেয়াল রাখতে হবে।’

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয় না। সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও ভাষা শহীদদের যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে।

১৯৯৯ সালের এই দিনটিকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো)।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। সেই ছাত্র-জনতার মিছিলে পাকিস্তানি পেটোয়া বাহিনী-পুলিশের গুলিতে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ আরও অনেকে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত