ঢাকা, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইডেনছাত্রীর আত্মহত্যা: প্রেমিক পলাতক

  ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:০১

ইডেনছাত্রীর আত্মহত্যা: প্রেমিক পলাতক

ইডেন কলেজের ছাত্রী সায়মা কালাম মেঘা (২০) আত্মহত্যার ঘটনায় কথিত প্রেমিক মাহিবী হাসানের প্ররোচনা রয়েছে বলে অপমৃত্যুর মামলায় দাবি করেছেন তার চাচা আবুল কালাম। মাহিবী হাসান (২৫) ঘটনার পর ঝালকাঠির বাসায় তালা লাগিয়ে পরিবারসহ পালিয়ে গেছেন।

গত রোববার রাতে ঢাকার কাঁঠালবাগান এলাকার ৭৪/১ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এর চার তলা বাড়ির চতুর্থ তলার একটি কক্ষ থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ইডেন কলেজ ছাত্রী মেঘার লাশ উদ্ধার করে কলাবাগান থানা পুলিশ।

সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মেঘার লাশ হস্তান্তর করে কলাবাগান থানা পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে ঝালকাঠি শহরের মুসলিম পৌর কবরস্থানে মেঘার দাফন সম্পন্ন হয়।

জানা গেছে, ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় শহরের পূর্বচাদকাঠি এলাকার মৃত মো. নফিসুর রহমানের ছেলে বরিশাল হাতেম আলী কলেজের ছাত্র মাহিবী হাসানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেঘার।

২০১৭ সালে মেঘা ঢাকা ইডেন কলেজে ভর্তি হয়। কাঁঠালবাগান এলাকায় এক বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতেন মেঘা। ঢাকায় গিয়ে মাহিবী হাসান প্রায়ই মেঘার সঙ্গে দেখা করতেন। মাস ছয়েক আগে মেঘা এবং মাহিবী বিয়ের ব্যাপারে একমত হলেও বাধ সাধেন মাহিবীর মা ঝালকাঠি কির্ত্তীপাশা হাসপাতালের নার্স সেলিনা বেগম।

শবে বরাতের দু’দিন আগে শুক্রবার ঢাকায় কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করার কথা ছিল মেঘা ও মাহির। এ জন্য মেঘা কিছু কেনাকাটাও করেছিলেন। কিন্তু মাহিবী কথা দিয়েও বিয়ের জন্য আসেননি। এ নিয়ে মোবাইল ফোনে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়।

ঘটনার দিন রোববার বিকেলে মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও মেঘা এবং মাহিবীর ইমোতে কথা হয়। ভিডিও কলে কথা বলার সময়ই মেঘা তার প্রেমিক মাহিবীকে জানান তিনি যদি বিয়ে না করেন তাহলে আত্মহত্যা করবেন এবং মাহিবীকে ভিডিও কলে রেখে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে মেঘা ঝুলে পড়েন। মর্মান্তিক এ দৃশ্য দেখেও মাহিবী হাসান মেঘাকে বিয়ের আশ্বাস দেননি। মেঘার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে মাহিবী ঝালকাঠিতে মেঘার মা রুবিনা আজাদকে মোবাইল ফোনে মেঘার মৃত্যর খবর জানান।

মেঘার মা বিষয়টি ঢাকায় মেঘার বান্ধবী আনিকাকে জানালে আনিকা তার সহপাঠীদের নিয়ে কাঁঠালবাগানের বাসায় যান এবং বাড়ির মালিকের সহায়তায় দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় মেঘাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেঘাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মেঘার পরিবার ঝালকাঠিস্থ পূর্ব চাঁদকাঠির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলন করে মেঘার কথিত প্রেমিক মাহিসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ঝালকাঠি শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি বিআইপি কলোনি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাহির বাবা জেলা জজ আদালতের পেশকার নফিসুর রহমান মারা যাওয়ার পর কিছুটা বখে যান সুদর্শন মাহিবী হাসান। একাধিক মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।

মেঘার মা রুবিনা আজাদ বলেন, মাহিই আমাকে ফোন করে মেঘার আত্মহত্যার ঘটনা জানায়। পরে আমি মেঘার বান্ধবীদের এ ঘটনা জানালে ওরা মেঘাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলেও আমার মেয়েকে আর বাঁচানো যায়নি। ঘটনার পর থেকে আমি মাহির সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওর ফোন এখন পর্যন্ত বন্ধ।

মেঘার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এসআই সেলিম রেজা বলেন, মেঘার চাচা যে ইউডি মামলা করেছেন তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। মেঘার আত্মহত্যার পেছনে কারো প্ররোচনা থাকলে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তখন দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় প্ররোচনা দানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত