ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ভিটেমাটি দখল করে বৃদ্ধাকে গ্রামছাড়া!

  হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:২৫

ভিটেমাটি দখল করে বৃদ্ধাকে গ্রামছাড়া!

আঙ্গুরা বেগমের বয়স ৮০। স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। কানে কম শোনেন, চোখেও ঠিকমতো দেখতে পান না। অসুখে পড়লে এক মেয়ে ছাড়া দেখার আর কেউ নেই।

নিজের গর্ভের এক মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর স্বামীর ভিটে আকড়ে ধরে অনাহারে অর্ধাহারে পড়ে আছেন। কিন্তু সৎ মেয়ে ও জামাইয়ের চক্রান্তে ভিটেহারা হয়ে ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন এই বৃদ্ধা। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আঙ্গুরা বেগমের ভিটেমাটি দখল করে নিয়েছেন সৎমেয়ে ও জামাতা। অসহায় এই বৃদ্ধাকে শুধু নিজের ঘর বাড়ি থেকেই নয়, গ্রাম থেকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কামারগাওঁ পুড়াদিয়া গ্রামের মৃত আব্দাল মিয়া চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী আঙ্গুরা বেগম (৮০)। আব্দাল মিয়ার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আঙ্গুরা বেগমকে বিয়ে করেন।

জানা যায়, আঙ্গুরা বেগমের কোনো ছেলে সন্তান নেই। সাংসারিক জীবনে তাঁর দুই মেয়ে রয়েছে। একটি তার নিজের গর্ভের, আরেকজন সৎমেয়ে (আঙ্গুরা বেগমের স্বামী আব্দাল মিয়া প্রথম স্ত্রীর গর্ভের)। দুই মেয়েকেই ভালো পরিবার দেখে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর নিজের গর্ভের মেয়ে উপজেলার কলিমপুর গ্রামে স্বামীর বাড়িতে থাকেন। আর সৎমেয়ে জহুরা খাতুন পরিবারসহ থাকেন লন্ডনে।

অন্যদিকে আঙ্গুরা বেগম স্বামীর ভিটেতে ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া টিন-রেশন, পাড়া-প্রতিবেশি ও স্বজনদের সহযোগিতার ওপর ভর করে বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি তার এই ভিটেতে কু-নজর পড়ে প্রবাসী সৎমেয়ে জহুরা ও তার জামাতা তুলা মিয়ার। তারা অসহায় এই বৃদ্ধার ভিটেমাটি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর সহযোগিতায় তারা বৃদ্ধার মাথা গোজার এই আশ্রয়টি দখলে নিয়েছে।

আঙ্গুরা বেগম জানান, অসহায় অবস্থায় থাকলেও সৎমেয়ে কোনো দিন তাদের খোঁজ খবর নেয় না। সম্প্রতি সৎমেয়ে তাকে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। প্রথমে আঙ্গুরা বেগম রাজি না হলেও পরে স্থানীয় কয়েকজন লোকের কথায় তিনি রাজি হয়ে যান। কিন্তু ঘর নির্মাণ করে দেয়ার পর আঙ্গুরা বেগমকে আর সেই ঘরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টা তালাবদ্ধ থাকে ঘরটি।

বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। বর্তমানে তিনি একই উপজেলার চাঁনপুর গ্রামে ভাই শফিক মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

আঙ্গুরা বেগম বলেন, আমার একমাত্র চাওয়া স্বামীর ভিটেয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। এ ব্যাপারে আমি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

অভিযুক্ত সৎমেয়ে জহুরা ও তার জামাতা তুলা মিয়া দেশের বাইরে থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় দীঘলবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। স্থানীয় মেম্বার বিষয়টি আমাকে জানায়নি।

ইউপি সদস্য খালেদ হাসান দুলাল বলেন, উনি কাজপত্র নিয়ে এলে আমরা বিষয়টি দেখে দেব। এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন হাসান বলেন, এ ধরণের কোনো বিষয় আমাদের জানা নেই। যদি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অথবা তার স্বজনরা লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয় দেব।

তিনি বলেন, জায়গা যদি কেউ দখল করে থাকে তাহলে সেটা আমাদের করার কিছু নেই। এটি আইনের মাধ্যমে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত