ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেপ্তার

নুসরাতের বাবা-মার শুকরিয়া নামাজ আদায়

  ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০১৯, ২১:৩২

নুসরাতের বাবা-মার শুকরিয়া নামাজ আদায়

সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারে নুসরাত জাহান রাফির পরিবার স্বস্তি জানিয়েছে। ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেপ্তারের খবর শুনে নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সুমনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারের খবর শুনে নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিনা আক্তার ও বাবা মাওলানা মোহাম্মদ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া নামাজ আদায় করেন। তবে চার্জশীটে ২১ জনের নাম তালিকাভুক্ত হলেও ওসি মোয়াজ্জেমের নাম তালিকায় না আসায় তারা অত্যন্ত মর্মাহত। নুসরাতের বাবা জানান, এই কর্মকর্তা তার মেয়েকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কলঙ্কিত করে হত্যাকারীদের হত্যাকাণ্ডে উৎসাহিত করেছেন।

নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ে হত্যার বিচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। ওনার কারণে নুসরাত হত্যা মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। ব্যারিস্টার সুমনের করা মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেপ্তার হয়েছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনসহ সমগ্র দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নুসরাতের মা বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আমার মেয়ের হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। তা প্রতিষ্ঠিত করতে অবৈধভাবে ভিডিও ধারণ করেছে। আমরা এর আগেও ওসি মোয়াজ্জেমের বিচার চেয়েছি। আমি তার সর্বোচ্চ শান্তি দাবি করছি।

নুসরাতের বড় ভাই ও নুসরাত হত্যা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতকে তার অফিসে নিয়ে যে আপত্তিকরভাবে নাজেহাল করেছেন সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিচার শুরুর মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ শান্তি প্রদান করা হোক।

নুসরাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে ওসি মোয়াজ্জেম অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছে। নুসরাত হত্যা মামলার আসামিরাও বেশি দিন পালিয়ে থাকতে পারেনি। পিবিআই ও পুলিশ তাদের অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা ন্যায়বিচারের মাধ্যমে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের পরিবার থানায় অভিযোগ করতে গেলে ওসি মেয়াজ্জেম নুসরতারকে জেরার ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে সে ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে।

পরে ১৫ এপ্রিল উচ্চ আদালতের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। পরে ২৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই দিন আদালত ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২৯ জুন উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তিনি। এরপর থেকে ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক রয়েছেন। তাকে ধরতে গ্রামের বাড়ি যাশোরের চাঁচড়া ও রাজধানীর সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ।

এর আগে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ১০ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে সোনাগাজী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।

২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার লোকজন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়ার পর মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের নির্দেশে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তার কয়েকজন সহপাঠী। পরে ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত