ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

জেএমবি কি পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে?

  জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৫১  
আপডেট :
 ১৮ আগস্ট ২০১৯, ১৯:০৩

জেএমবি কি পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে?

জেএমবির ঘাঁটি খ্যাত চরশী হাবিরুন্ননেছা হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনে ফজল (রহ.) একাডেমী এতদিন বন্ধ থাকলেও মাদ্রাসা দুটি নতুন করে চালু করার জন্য পরামর্শ সভা করায় ফের আলোচনায় এসেছে জেএমবি ও শায়খ আব্দুর রহমান। জেএমবির কার্যক্রম পরিচালনা এবং মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে ধরপাকড় শুরু হলে মাদ্রাসা দুটি ২০০৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়।

কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শায়খ আব্দুর রহমান ছোট ভাই মাওলানা ওবায়দুর রহমান ও শায়খের পুত্র নাবিলসহ তাদের আত্মীয় স্বজন, জেএমবি অনুসারী এবং এলাকাবাসীর সাথে জনসংযোগ করে প্রায় দুই শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে পরামর্শ সভা করেছে ১৬ আগস্ট শুক্রবার। ১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা দিবসের আগের দিন অনুষ্ঠিত এই পরামর্শ সভাকে ঘিরে জনমানুষের মনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ আর আতংক। মুখে মুখে ফিরছে ‘জেএমবি কি পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে’?

রোববার সরেজমিনে চরশি খলিফা পাড়া গ্রামে ঘুরে দেখা যায় শায়খ আব্দুর রহমানের জন্মস্থান ও জেএমবির উৎপত্তিস্থল নিভৃত পল্লী চরশি খলিফা পাড়া। গ্রামটি জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নে। গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে সড়ক। সড়কের এক পাশে শায়খের প্রতিষ্ঠিত দুটি মাদ্রাসা ও মসজিদ। অপর পাশে শায়খ ও তার ভাই আতাউর রহমান সানির কবর ও তাদের গ্রামের বাড়ি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানায়, জেলাখানা থেকে বের হওয়ার পর শায়খ আব্দুর রহমানের ভাই মাওলানা ওবায়দুর রহমান ও পুত্র নাবিলকে ঘন ঘন চরশি খালিফা পাড়াসহ আশপাশের গ্রামে ঘন ঘন যাতায়াত করতে দেখেছে তারা। মাদ্রাসা চালু ও শায়খ আব্দুর রহমানসহ পরিবারের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে এলাকার লোকজনের সাথে জনসংযোগ করছে। এই নিয়ে উদ্বেগ আতংকের ছাপ মানুষের মধ্যে। গ্রামের একাংশ মানুষ শায়খের অনুসারী। তারা এখনো বিশ্বাস করে শায়খ আব্দুর রহমান ভাল লোক ছিল। ইসলামের জন্য জিহাদ করে জীবন দিয়েছে। এলাকার সচেতন মানুষেরা শায়খকে ঘৃণার চোখে দেখে। তারা মনে করে শায়খ আমাদের গ্রামের কলঙ্কের তিলক। সারাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করে চরশি খলিফা পাড়াকে জঙ্গি ঘাঁটি হিসেবে কুখ্যাতি বয়ে এনেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমানের মৃত্যু কার্যকর হবার পর চরশি খলিফাপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শায়খ রহমান গ্রেপ্তারের পর তার প্রতিষ্ঠিত চরশি খলিফাপাড়ায় চরশি হাবিবুন্নেছা হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও আল মদিনা ক্যাডেট একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এই মাদ্রাসা ও একাডেমী থেকেই পরিচালিত হতো জেএমবির কার্যক্রম। আল মদিনা ক্যাডেট একাডেমীর নাম বদলে আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনে ফজল (রহ.) একাডেমী নামে পুনরায় চালু করতে তৎপরতা শুরু হয়েছে।

জেএমবির কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শায়খ রহমানের ছোট ভাই মাওলানা ওবায়দুর রহমানও কারাগারে ছিল। সম্প্রতি মাওলানা ওবায়দুর রহমান মুক্তি পেয়ে মাদ্রাসা ও একাডেমীর কার্যক্রম শুরু করার জন্য স্থানীয় ইউপি আওয়ামী লীগ ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রভাবশালী একাধিক আত্মীয় স্বজনের সাথে পরামর্শ করেন। ১৬ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে এই পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরামর্শ সভার সভাপতিত্ব করেন মাওলানা ওবায়দুর রহমান। সিলেটে গ্রেপ্তারকৃত শায়খের বড় ছেলে নাবিল, শায়খের অনুসারীরা, নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রে এসআই আমিনুল ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিসহ কয়েক’শ মানুষের উপস্থিতিতে পরামর্শ সভা সম্পন্ন হয়।

জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানের ছোট ভাই মাওলানা ওবায়দুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এই অঞ্চলে কোরআনের আলো ছড়ানোর জন্য ১৯৭৫ সালে এই মাদ্রাসা ও একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে তার বড় ভাইয়ের এক দুর্ঘটনার কারণে তা বন্ধ হয়। তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে এলাকার চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে পরামর্শ করে এই পরামর্শ সভা করেন।

ওবায়দুর রহমানের দাবি, এখানে কোনো জঙ্গি তৎপরতা হবে না, এখানে হবে কোরআনের আলো ছড়ানোর কাজ।

তিতপল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দৌলতুজ্জামান জানান, শায়খ আব্দুর রহমানের ছোট ভাই মাওলানা ওবায়দুর রহমান পরামর্শ সভার বিষয়ে গত ১৪ আগস্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একটি পত্র নিয়ে যান। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ব্যাপারে তিতপল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুণ-অর-রশীদ সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওবায়দুর রহমান বেশ কিছুদিন আগে তার সাথে দেখা করে এবং পরামর্শ সভা করার কথা বলে। সেখানে শায়খ রহমানের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজন থাকবে বলেও তাকে জানায়। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

নারায়ণপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ মিয়ার সাথে পরামর্শ সভার অনুমতি বিষয়ে কথা বললে তিনি দাবি করেন, পরামর্শ সভার জন্য কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওই দিন স্থানীয় এমপির প্রোগ্রামের ডিউটি থাকায় এসআই আমিনুলকে পরামর্শ সভায় পাঠিয়ে সভাটি পণ্ড করে দেওয়া হয়।

জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, শায়খ আব্দুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা দুটি চালুর ব্যাপারে পরামর্শ সভা করার খবর পেয়ে পরামর্শ সভার উদ্যোক্তা ও মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ পুলিশি নজরদারীতে রাখা হয়েছে। তাদেরকেও বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা দিবসের আগের দিন শায়খ আব্দুর রহমানের মাদ্রাসায় পরামর্শ সভার ঘটনায় স্থানীয় জনমনে আতংকসহ নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত