ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

পড়া না পারায় বেঞ্চের নিচে মাথা, শাস্তি পাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষিকা

  মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৪০  
আপডেট :
 ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৪৩

পড়া না পারায় প্রাথমিক শিক্ষিকার কাণ্ড!

পড়া না পারায় বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পৌর-পেয়ারপুর ১০৯নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ উলে্লখযোগ্য ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ভয়ে ও ক্ষোভে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে অভিবাবকরা স্কুল মাঠে বিক্ষোভ করে।

জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়শা সিদ্দিকা নামে এক শিক্ষিকা শ্রেণিকক্ষে গেলে ভয়ের মধ্যে থাকে শিক্ষার্থীরা। অনেকেই তার অমানুষিক অত্যাচারে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তার নামে একাধিক অভিযোগ করার পরও ক্ষমতার বলে এখনো সেই বিদ্যালয়ে চাকুরি করে যাচ্ছে এবং আগের মতোই শিক্ষার্থীদের অমানুষিক অত্যাচার করেছে।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ৫ম শ্রেণির একটি ক্লাশে পড়া না পারায় ৬জন শিক্ষার্থীকে বেঞ্চের নিচে মাথায় দিয়ে শাস্তি দেয়ায় দুই ছাত্রী ও একজন ছাত্রে নাখ দিয়ে রক্ত চলে আসে এরপর তাদের অভিবাবক বিষয়টি জনাতে পেরে তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের অভিবাবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়টি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে সে তাৎক্ষনিক একটি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে তিন দিনের সময় নেন। কিন্ত তিনদিন পার হলেও সেই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায়, অভিবাবকরা তাদের বিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং অভিবাবকসহ এলাকার সচেতন জনগন বিদ্যালয়ের আয়াশা সিদ্দিকা নামে ঔ শিক্ষিকার অপসারণের জন্য বিক্ষোভ করেছে।

তৃষার মা মিলি দাস বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, আমার মেয়েকে পড়া না পারায় আয়শা ম্যাডাম দীর্ঘসময় বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে শাস্তি দিয়েছে, এমনকি মাথা উঠাতে দেয়নি, মাথা উঠালেই স্কেল দিয়ে পিঠে আঘাত করেছে, এভাবে দীর্ঘসময় বেঞ্চের নিচে মাথা দিয়ে রাখায় নাক দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। আমি আমার মেয়েকে পড়াশুনা করতে দিয়েছি। মার খেতে দেই নাই।

ঐশি দাসের বাবা টিটু দাস জানান, এই ম্যাডাম এর আগেও বাচ্চাদের মারধর করতো। আজ আমার মেয়েকে শাস্তি দেয়ার কথা বলে অমানুষিক অত্যাচার করেছে। আমি এর শাস্তি চাই। এই ম্যাডাম স্কুলে আসলে আমি আমার সন্তানকে স্কুলে দেবো না।

নব মালো ৫ম শ্রেণির ছাত্র জানান, আমি পড়া না পারায় আমাকে বেঞ্চের নিচে মাথা রেখে স্কেল দিয়ে পিঠে ও কোমরে পিটিয়েছে এতে আমার অনেক সমস্যা হচ্ছে আর হাটতে কষ্ট হচ্ছে।

জেলা যুবলীগ নেতা সমুন তালুকদার বলেন, আমার বাড়ির পাশে স্কুল হওয়ায় আমি কয়েকবার এই বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়েছি তারা এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাছাড়া স্কুলে সরকারের বিধি নিষেধ না মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ান এই স্কুলের আয়শা ম্যাডাম। তাকে বাধা দিলেও সে কোন গুরুত্ব দেয়নি।

অর্পনা নানী শিউলি বেগম জানান, প্রধান শিক্ষিকা নাঈমা আক্তার বিদ্যালয়ে ঠিকমত আসেন না, অনেক দিন স্কুলে এসে কেবল হাজিরা দিয়ে চলে যান, আবার অনেকদিন দুপুর ১টার পর আর তাকে স্কুলে দেখা যায় না। এবং আয়শা ম্যাডাম কয়েকদিন আগে আমার নাতিকে প্রাইভেট পড়াতেন, বেতন দিতে দেরি হয়েছে বলে অর্পন্নাকে স্কুলে বই-খাতা রেখে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

ঘটনার পর বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে পাওয়া না গেলেও বিকেলে স্কুল ছুটির কিছু সময় আগে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন এরপর প্রধান শিক্ষিকা নাঈমা আক্তার অভিবাবকদের জানান আমি আয়শা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে ৩দিনের মধ্যে একটি ব্যবস্থা নেব। এবং তিনি আরও জানান তাকে বদলি করা হবে।

এই বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমেটির সভাপতি জালাল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, তিনি বলেন আমি এখন দূরে আছি কথা বলতে পারবো না, এই বলে মোবাইল বন্ধ করে রাখেন।

এইআরসিবিএম সংগঠনের সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী সবুল বিশ্বাস জানান, যেখানে সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার অমানুষিক অত্যাচার লাঠির আঘাত কারা নিষেধ করেছেন। তারপর সে যেটা করছে এটা সে মানবাধিকার বিরোধী কাজ করেছেন। আমি মনে করি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোখলেসুর রহমানের জানান, অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে (আয়েশা সিদ্দিকাকে) গৌরবদ্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হবে এবং প্রধান শিক্ষিকাকে শোকজ করা হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ জানান, আমি বিষয়টা শুনেছি, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে অভিযুক্ত প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত