ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫২ মিনিট আগে
শিরোনাম

গ্রামবাসীর সাঁকো দেখিয়ে টাকা মারলেন চেয়ারম্যান

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৫১  
আপডেট :
 ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৪

গ্রামবাসীর সাঁকো দেখিয়ে টাকা মারলেন চেয়ারম্যান

দিনাজপুর বীরগঞ্জের উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের রাস্তায় খালের ওপর প্রায় দুইশ মিটার কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছে এলাকাবাসী। অভিযোগ উঠেছে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে তা নিয়ে গেছেন শতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা ডা. কে এম কুতুব উদ্দিন।

জানা যায়, উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নে ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় ঝাড়বাড়ি থেকে গড়ফতু যাওয়ার রাস্তায় খালের ওপরের একমাত্র ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে আশ্রয়ণ বাসী ও গ্রামবাসী। সে সময় এলাকাবাসী বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে ব্রিজের পাশেই একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে। তবে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল প্রকল্প থেকে শতগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেই রাস্তায় খালের ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণের জন্য ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিলো। প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে ঐ টাকা তুলে নেন ইউপি চেয়ারম্যান।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শতগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা শুকুর আলী (৬০) বলেন, মসজিদে ঘোষণা দিয়ে চেয়ারম্যান টাকা তোলে। কিন্তু এই টাকাটা দেয়নি। আমরা বিভিন্নভাবে চাঁদা তুলে নির্মাণ করেছি। পরে জানতে পারলাম সাঁকোর জন্য বরাদ্দ এসেছে আর এই টাকাটা চেয়ারম্যান উঠিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কিছু টাকা ঋণ পরিশোধ করলেও বেশিরভাগ টাকা চেয়ারম্যানের কাছেই আছে। আমরা টাকাগুলো মসজিদেও দিতে বলেছিলাম। কিন্তু চেয়ারম্যান দেননি। উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়াপাড়া

আশ্রয়ণ প্রকল্পের রাস্তায় খালের ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৬ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করা হয়েছিলো। ওই কমিটি দ্বারা কাঠের সাঁকো নির্মাণের কথা থাকলেও সেই কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে ছয়জন ইউপি সদস্যকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও রেজুলেশন বইতে স্বাক্ষরের পর সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটির গঠন করেন চেয়ারম্যান। প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প কমিটির সভাপতি শতগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল হোসেন বলেন, আমি প্রথমে কাঠের সাঁকো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলাম। পরে খাতায় রেজ্যুলেশন করার কিছুদিন পর আমাদের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। কমিটি ভেঙে দেয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আপনারা যদি সাঁকো নির্মাণের টাকা উত্তোলন করে খেয়ে ফেলেন! এ জন্য আপনাদের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

ইউপি সদস্য আরো বলেন, আমরা জানিই না কবে টাকা এসেছে, কবে উত্তোলন হয়েছে। বরং আমরা টাকা উত্তোলন করে মেরে খাবো বিধায় আমাদের কমিটি ভেঙে দিয়েছিলো চেয়ারম্যান।

শতগ্রাম ইউনিয়নের গড়ফুতু এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সালাম বলেন, গ্রামবাসীর কাছে চাঁদা তুলে ও আমাদের এলাকার সমিতি গাছ কেটে সেসময় সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। সাঁকোটি নির্মাণের পর শুনছিলাম যে সরকারি ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে, যা আমাদের চেয়ারম্যানের পকেটে ঢুকেছে।

তিনি জানান, ব্রিজ নির্মাণ শেষে আমাদের ৩৯ হাজার টাকা ঋণ ছিল। সেই ৩৯ হাজার টাকা ব্রিজ নির্মাণের ৫ থেকে ৬ মাস পর চেয়ারম্যান আমাদের দিয়েছিলেন’ এবং বাকি টাকা চেয়ারম্যানের কাছেই দুই বছর ধরে আছে।

তবে টাকা মেরে খাওয়ার অস্বীকার করে শতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম কুতুব উদ্দিন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে অর্ধেক ব্রিজ নির্মাণ করেছিলো। বাকি অর্ধেক ব্রিজ বরাদ্দের টাকায় করা হয়।

ব্রিজ নির্মাণের কতদিন পর বরাদ্দ দেওয়া হয় জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ব্রিজ নির্মাণের বেশ কয়েক মাস পরে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাকিতে গাছ, কাঠ, পেরেক, শ্রমিক নেওয়া হয়। বরাদ্দ আসার পর সেই বাকি টাকা পরিশোধ করা হয়।

এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। সাঁকো নির্মাণের টাকা কেউ মেরে খেয়েছে প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত