ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শ্বাসনালির পোড়া গন্ধে আকাশ ভারি হয়ে আসছে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:৪৪  
আপডেট :
 ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:৪৯

শ্বাসনালির পোড়া গন্ধে আকাশ ভারি হয়ে আসছে

সকালে যখন মানুষগুলোকে নামানো হচ্ছিল আমরা ভেবেছিলাম এরা সবাই মারা গেছে। তাদের শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আগুন লাগেনি। তারা কেউ কথা বলতে পারছিল না। ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছিল না। তাদের শরীর পুড়ে কালো হয়ে গেছে। তাদের শরীর থেকে পোড়া গন্ধ বের হচ্ছিল। কথাগুলো বলছিলেন শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটের নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্য আশরাফুল।

ওই বার্ণ ইউনিটটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া শ্রমিকদের পরিবারের লোকজন বাকহীন অবস্থায় বসে আছে। সবার চোখের জল শুকিয়ে গেছে। মাস ছয়েক আগে বিয়ে হয়েছে আকলিমা খাতুনের, এখনও ঠিক মত সংসার গোছানো হয়নি। এর আগেই স্বামীর জন্য আইসিউর বাহিরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাকে।

তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, ডাক্তার বলেছেন বাঁচার আশা অনেক কম। তারপরেও আশা নিয়ে বসে আছি, যদি সুস্থ হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ আগেই মারা গেছেনে আব্দুর রফিক। তার দাদা আর ছোট ভাই লাশ নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তার দাদা এক পা খোঁড়ায় খোঁড়ায় আইসিউর নিরাপত্তা কর্মিকে বারবার জিজ্ঞাস করছেন ‘লাশ দিতে আর কত দেরি’। রফিকের চাচা জানান, আমাদের সাথে এখনও মালিক পক্ষের কেউ যোগাযোগ করে নাই। আমরা জানি তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু আশাও করা যায় না। তাদের আশায় থাকলে আমাদের লাশ পঁচে যাবে। তাই এখান থেকে লাশ নিয়ে চলে যাচ্ছি।

লাশ ময়নাতদন্ত করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বাচ্চাটাকে আর কষ্ট দিতে চাইছি না, এমনিতেই মরার আগে অনেক কষ্ট পেয়েছে। প্রায় ৯৫ ভাগ পুড়ে যাওয়া সুজনের মামা বলেন, তার শ্বাসনালি একেবারেই পুড়ে গেছে। তাকে এখন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে বাচার আশা অনেক কম। সুজনের বয়স মাত্র ১৬ বছর। দুই মাস আগে এই কারখানাটিতে কাজ নিয়েছিলেন।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক সামন্তলাল বলেন, কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি কারও অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। সবার শ্বাসনালি পোড়া। চাকরিজীবনে এমন ভয়াবহ পোড়া রোগী দেখেননি। এই অধ্যাপক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জন মারা গেছে। এর আগে কারখানা থেকে এক জনের মৃতদেহ বের করা হয়। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১৩ জন মারা গেছে। যারা আইসিউতেে আছে তাদের বাচার সম্ভবনা অনেক কম। কারণ তাদের সকলের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। মেডিকেলের ভাষায় যদি বলতে হয় এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার সম্ভবনা অনেক কম।

এর আগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ হাসপাতালে পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছে, কেরানীগঞ্জের চুনখুটিয়ায় আগুন লাগা প্লাস্টিক কারখানাটির অনুমোদন ছিল না, সেখানে আরও অননুমোদিত কারখানা রয়েছে। কারখানার ভেতর থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তল্লাশি করে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। এখনও তল্লাশি চলছে। আহতরা কেউ শঙ্কা মুক্ত নন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত