ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ: আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার আসামি সাংবাদিক!

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ মে ২০১৯, ২১:০৪  
আপডেট :
 ১২ মে ২০১৯, ২১:০৭

দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ: আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার আসামি সাংবাদিক!

কুলাউড়ার ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় আসামি করা হয়েছে বাংলাদেশ জার্নালের মৌলভীবাজারে জেলা প্রতিনিধি এম এ. কাইয়ুমকে।

উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে অপকর্ম আড়াল করতে কুলাউড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমান, ইউএনও আবুল লাইছ ও এসিল্যান্ড জাদিদ ষড়যন্ত্র করে সাংবাদিকের নাম যুক্ত করিয়েছেন বলে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের অভিযোগ। কারণ মামলায় ঘটনার যে তারিখ দেয়া হয়েছে সেই দিন এমএ কাইয়ুম ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার আবু জাফর রাজুর সফর সঙ্গী হয়ে সিলেট শহরে।

মামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুলাউড়া উপজেলা ও মৌলভীবাজার জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ কাজে অনিয়ম ও লুটপাট এবং কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একসনা বন্দোবস্ত প্রদানের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশ করেন বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধি এম এ কাইয়ুম। এসব প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ কাজে অনিয়ম তদন্ত করতে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয় আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজের গুণগত মানের প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠাতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুলাউড়ায় চলমান প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ কাজে করা হয়েছে সীমাহীন অনিয়ম। যার নেতৃত্বে আছেন কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল লাইছ। প্রকল্প থেকে লুটপাটের জন্য ঘর নির্মাণে প্ল্যান, ডিজাইন প্রাক্কলন মোতাবেক গুণগত মান বজায় রাখা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।

আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর কাজে এক বস্তা সিমেন্টের সাথে ২০ টুকরি বালু মিশিয়ে কাজ করেছে মিস্ত্রি। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো অপদস্থ হতে হয়েছে উপকারভোগীকে। এতে ফেটে গেছে খুঁটি, ঘর ও বারান্দার ফ্লোর। ফলে ঘরের টেকসই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। ল্যাট্রিন নির্মাণে ৮টি করে রিং স্লাব ব্যবহারের কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ৫-৬টি করে।

প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়োগ দেয়া হয় ইউএনওর পছন্দের ঠিকাদার। নিয়োগকৃত রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রিরা ইচ্ছে মতো কাজ করেছেন। উপকারভোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন। এমনকি দরজা-জানালা তৈরিতে শাল, গর্জন, জামরুল, কড়াই, শিশু, আকাশমণি গাছের কাঠ ব্যবহারের কথা থাকলেও অল্প বয়সী ও অসার ইউক্যালিপটাস কাঠ দিয়ে তড়িঘড়ি কাজ করেছেন।

অন্যদিকে কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একসনা বন্দোবস্ত প্রদানের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশ হয়। উপজেলার রবিরবাজার থেকে প্রায় ৪৫টি দোকান বন্দোবস্ত দেয়ার নামে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিউর রহিম জাদিদ। উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে লিজ নেয়ার প্রস্তাব দিয়ে কৌশলে এই টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে লিজ গ্রহিতারা জানান।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজারে প্রায় ৪৫টি দোকান একসনা লাইসেন্স ভিত্তিক বন্দোবস্ত প্রদানের লক্ষ্যে চুক্তিনামা সম্পাদন করা হয়। এক বছরের লিজ ফি বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দোকানকোটা প্রতি মাত্র একশ থেকে দেড়শ টাকা জমা করা হয়। অথচ প্রতিটি দোকান মালিকের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়।

মামলায় যেভাবে নাম যুক্ত করা হলো

কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে চুরির দায়ে ৫ সদস্যের বিচারিক প্যানেল অভিযুক্ত আসামি ইছরাইল আলী নামের এক যুবককে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। গ্রাম আদালতের রায়ের পর আদালতের বারান্দায় ইছরাইল আলী তার বাবা আছদ আলী সাক্ষী দিয়ে তাকে চোর সাব্যস্ত করেছেন বলে বাবাকে দোষারোপ করে। এরপর বাড়ি ফিরে বাবা ও ছেলে পরস্পরকে অভিযুক্ত করেন।

ঘটনার দিন বিকেল ৫টায় এক পর্যায়ে বাবা আছদ আলীর বিরুদ্ধে অভিমান করে ছেলে ইছরাইল আলী কীটনাশক পান করেন। প্রথমে কুলাউড়া হাসপাতালে ও পরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করলে পরদিন ৬ মে সকাল ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ইছরাইল আলী।

ইছরাইল আলীর মৃত্যুর পর একটি প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে ৭ মে রাতে আছদ আলী কুলাউড়া থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যান ও গ্রাম আদালতের বিচারক হাবিবুর রহমান ছালাম, গ্রাম আদালতের মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা চৌধুরী পাবেল ও বাদী পক্ষের মনোনীত গণ্যমান্য ব্যক্তি নজরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনের নামে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলায় প্রথমধাপে ৩ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমানের নেতৃত্বে সাংবাদিক এম এ কাইয়ুমের নাম যুক্ত করা হয়। যদিও সেই ঘটনা কিংবা বিচারিক কার্যালয়ে এম এ কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন না।

এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান (শফি আহমদ সলমান) নাম দিলে আমার কী করার আছে?

গ্রাম আদালতের বিচারক কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালাম বলন, গত ৫ মে আমার ইউনিয়নে এ বিচার কার্যসম্পন্ন হয়। সেসময় ৫ সদস্যের বিচারিক প্যানেল অভিযুক্ত আসামি ইছরাইল আলীকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ঘটনার সাথে সাংবাদিক কাইয়ুমের সম্পর্ক কোথায়? সেখানেত সাংবাদিক কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন না। তাহলে তাকে কেন মামলায় যুক্ত করা হয়েছে প্রশ্ন রাখেন এ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। এ মামলাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধি এম এ কাইয়ুম জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ কাজে অনিয়ম এবং একসনা বন্দোবস্তের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের নিউজ করায় ষড়যন্ত্র করে আমাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার নাম সংযুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ধানমন্ত্রীর প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে, সেই নিউজ করা কি আমার অপরাধ?

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত