ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

‘সংসার চলে স্ত্রীর টাকায়, সন্তানদের কাছে মুখ দেখাতে লজ্জা হয়’

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:২৪  
আপডেট :
 ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৯:২৭

‘সংসার চলে স্ত্রীর টাকায়, সন্তানদের কাছে মুখ দেখাতে লজ্জা হয়’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছে সরকার স্বীকৃত নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। টানা তিনদিন অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় এ অনশনের হুমকি দেন তারা। নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে এ অবস্থান কর্মসূচি চলছে গত মঙ্গলবার থেকে।

সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান বিন সোলায়মান বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে টানা তিনদিন এমপিওভুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি আমরা। সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে সাড়া না দিলে আমরা আমরণ অনশনে যাবো। প্রয়োজনে দাবি আদায়ে আত্মাহুতি দিতেও আমরা প্রস্তুত।

প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায়, গত দুদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীর সংখ্যা ছিল বেশি। শিক্ষকদের পাশাপাশি বেড়েছে নারী শিক্ষিকদের উপস্থিতি। সবাই খবরের কাগজ বিছিয়ে বসে আছে মূল সড়কে। অনেকে তিনদিনের টানা কর্মসূচির ক্লান্তির ফলে কাগজের ওপর শুয়ে আছেন। সড়কে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অনেকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। তবে ব্যাপক উপস্থিতির ফলে কিছুটা যানজট দেখা গেলেও সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষকরা।

আরো পড়ুন:এমপিভুক্তির আন্দোলন : দ্রুত আলোচনা করে সমাধান করুন

পটুয়াখালী থেকে তিন বছরের শিশু রেখে এসেছেন চর বয়রা মডেল বালিকা দাখিল মাদরাসার শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদাউস। ১৪ বছর আগে শিক্ষিকা হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিলেও সরকারের পক্ষ থেকে এক টাকাও পাননি এ শিক্ষিকা। ৮ সদস্যের পরিবার খুব দুরবস্থায় দিনাতিপাত করছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, স্বামীর তেমন আয় নাই। দু’সন্তান লেখাপড়া করে। তন্মধ্যে আবার সংসার চালাতে হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে যা পাই তা দিয়ে পরিবার চালানো খুব কষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তার মতো দুর্বিষহ অবস্থা নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন খুলনার আই.আই. কলেজের শিক্ষক প্রকাশচন্দ্র সরকার। প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পাসের হার থাকলেও সরকার আমাদের কোনো বেতন-ভাতা দেয় না। এমতাবস্থায় সাত সদস্যের পরিবারের দুঃখের কথা জীবন চালাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। ২০০৪ সালে কলেজে চাকরিতে যোগ দিই তখন সংসারে ছিলাম তিন জন। এখন পরিবারে সদস্য সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি টাকার পরিমাণ। প্রতিষ্ঠান থেকে যে সামান্য টাকা পাই তা দিয়ে আর জমি চাষ করে কোনো মতে বেঁচে আছি। সরকার দাবি পূরণ না করলে মরে যেতে রাজি তবুও ঘরে ফিরে যেতে রাজি নন বলে জানান প্রকাশচন্দ্র সরকার।

একই জেলা থেকে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক আবুল বাশার। ১৫ বছর আগে খুলনা শারাফপুর কলেজে যোগ দিলেও সরকারের থেকে পাচ্ছেন না এক টাকাও। টাকা ধার করে তিনদিন ধরে অবস্থান করছেন তিনি প্রেস ক্লাবের কর্মসূচিতে। অনাহার অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় শারীরিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে তার। আবুল বাশার বলেন, সরকার বেতন না বাড়ালে মরে যাব তবুও ঘরে ফিরে যাব না। সন্তানরা আশায় আছে, সরকার বেতন দিবে। সংসারের কষ্ট আর থাকবে না।

আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিলেন নন এমপিও শিক্ষকরা

তবে ১৯ বছর ধরে ভোলা সদর কলেজে শিক্ষকতা করলেও সরকারের কাছ থেকে কোনো অনুদান না পাওয়ায় খুব কষ্ট করে প্রেস ক্লাবের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার যে আয় তা দিয়ে নিজের খরচই চলে না। সংসার চলে স্ত্রীর প্রাইভেটের টাকা দিয়ে। সন্তানদের কাছে মুখ দেখাতে লজ্জা হয়। সরকার দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না। যদি মরতে হয় এখানেই মরে ঘরে লাশ হয়ে ফিরার কথা বলেন শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।

যে সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সরকারের পক্ষ থেকে বেতন-ভাতা পায় সে সকল প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হিসেবে পরিচিত। দেশে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন ৪ লাখেরও বেশি। আর যেসব প্রতিষ্ঠান সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পায় না দেশে সেসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজার ২৪২টি। এতে শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার। এদিকে একইভাবে সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষক সমিতি ফাউন্ডেশন। আন্দোলনরত শিক্ষকরা সরকারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে আগামী নতুন বছরের ২৯ তারিখ পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আবার তারা কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুল ওহাব।

আরো পড়ুন: নন-এমপিও শিক্ষকদের ভাগ্যের দুয়ার কবে খুলবে?

  • সর্বশেষ
  • পঠিত