ঢাকা, রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

২১৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধের নির্দেশ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৮, ২২:২৬  
আপডেট :
 ০৪ জুলাই ২০১৮, ২২:৪১

২১৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধের নির্দেশ

বছরের পর বছর শিক্ষার্থীশূন্য ও পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ ফেলা করা ২১৩টি ভুঁইফোঁড় মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার এমপিও সাময়িকভাবে বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। স্থায়ীভাবে এমপিও বন্ধ করতে বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও আড়াই শতাধিক মাদ্রাসা বন্ধের প্রক্রিয়া চলছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী থাকবে না আর বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠান চলবে, তা হতে পারে না। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

আরো পড়ুন: এমপিও নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

বুধবার কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব (মাদ্রাসা-২) মো. আব্দুল খালেক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৭ ও ১৮ সালের দাখিল পরীক্ষায় কোনো পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ না করায় মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ২০২টি মাদ্রাসার পাঠদানের অনুমতি স্থগিত ও একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ অনলাইন পাসওয়ার্ড, মাদ্রাসার কোড নম্বর ও ইআইআইএন (এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) নম্বর বন্ধ করেছে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার এমপিও সাময়িকভাবে বন্ধ করে এবং কেন তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে না কারণ দর্শিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত রোববার ছয়টি মাদ্রাসার এমপিও সাময়িকভাবে বন্ধ করে নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রণালয়। স্থায়ীভাবে কেন বন্ধ করা হবে না তার কারণ দর্শাতে মাদ্রাসা অধিদফতরে নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসাগুলো হলো- গোপালগঞ্জের করপাড়া ইউনিয়ন আলিম মাদ্রাসা, টাঙ্গাইলের কুড়িআটা দাখিল মাদ্রাসা, ডুবাইল ইমামবাড়ি দাখিল মাদ্রাসা, জয়পুরহাটের কাটাহার রউফিয়া দাখিল মাদ্রাসা, গাইবান্ধার শ্যামপুর মোহাব্বতিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও কুড়িগ্রামের কর্পুরা কারিমিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা।

গত ২১ জুন মন্ত্রণালয়ের ওপর এক নির্দেশনায় আরও পাঁচটি মাদ্রাসার এমপিও স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। এগুলো স্থায়ীভাবে কেন বন্ধ করা হবে না তার কারণ দর্শাতে মাদ্রাসা অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। মাদ্রাসাগুলো হলো- ঝালকাঠির মোকাররমপুর দরবার শরীফ দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ খাওক্ষির মোহেদিয়া দাখিলা মাদ্রাসা, কুমিল্লার শাহে মদিনা হরমুজের নেছা আমড়াতলী দাখিল মাদ্রাসা, আগানগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ভোলার দক্ষিণ ওসমানগঞ্জ মোজাফফরিয়া দাখিল মাদ্রাসা। ২০১৭ সালে দাখিল পরীক্ষায় এসব মাদ্রাসার একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। কারণ দর্শানোর জবাব পাওয়ার পরই স্থায়ীভাবে এমপিও বন্ধ করে দেওয়া হবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার লেমুয়া চন্দ্রকান্দা আলিম মাদ্রাসা থেকে গত ১৩ বছর কোনো শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণির জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) ও আলিম পরীক্ষায় পাস করনি। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাদ্রাসাটি চালাতো কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ব্যবস্থা নিতে দুই দফা চিঠি দেওয়া হয় বোর্ডে। মন্ত্রণালয়ের চাপে সম্প্রতি মাদ্রাসার পাঠদানের অনুমতি বাতিল করেছে বোর্ড। লেমুয়া চন্দ্রকান্দা আলিম মাদ্রাসার চিত্র দেখে মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা শাখার কয়েকজন দক্ষ কর্মকর্তা চমকে যান। তারা ধারণা করেন, সারা দেশে এ ধরনের আরও অনেক মাদ্রাসা রয়েছে। খতিয়ে দেখতে তারা মাদ্রাসা শাখার অতিরিক্ত সচিবকে অনুরোধ করেন। অতিরিক্ত সচিব রাজি হয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

আরো পড়ুন: অনশনে অসুস্থ দুই শতাধিক শিক্ষক

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, অতিরিক্ত সচিবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৭ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোন কোন মাদ্রাসায় কাম্যসংখ্যক শিক্ষার্থী বা কাম্য ফলাফলের ঘাটতি রয়েছে বা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, তা পরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বোর্ড তথ্য না পাঠালে পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠাতে ৮ মে ফের নির্দেশ দেওয়া হয়। দুই দফা চিঠি দেওয়ার পরেই বোর্ড সারা দেশের ভুঁইফোঁড় মাদ্রাসার তথ্য সংগ্রহ করে পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। আর এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার এমপিও বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। বোর্ডের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ভুঁঁইফোঁড় মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের দাখিল পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস না করায় ৯৬টি মাদ্রাসাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত মে মাসে নোটিশটি দেওয়া হয়েছে। তাতে, ২০১৮ সালের দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার শূন্য হওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর প্রাথমিক পাঠদান স্থগিত, একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ ইআইআইএন নম্বর কেন বন্ধ করা হবে না জানতে চাওয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার ২১ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের জবাব সন্তোষজনক নয়। জবাব পর্যালোচনা শেষে বন্ধ করে দেওয়া হবে সেসব প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আরও ১৮৯টি মাদ্রাসাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানও শূন্য শিক্ষার্থী ও পাস, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকাসহ এমপিও ও পাঠদান অনুমতির শর্তপূরণ করছে না। সবমিলিয়ে আরও আড়াই শতাধিক ভুঁইফোঁড় মাদ্রাসা বন্ধ হতে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন: শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনায় প্রবীণ শিক্ষক

  • সর্বশেষ
  • পঠিত