ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

জন্মদিনে ৩০০ গোলাপ উপহার পেয়েছিলাম: চৈতি

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৭

জন্মদিনে ৩০০ গোলাপ উপহার পেয়েছিলাম: চৈতি

‘শোবার ঘরটা নীল হোক’, ‘আকাশের মতো’ বার্জার পেইন্টসের বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত এই সংলাপটি সবার কাছে খুবই পরিচিত। নব্বই দশকে প্রচারিত এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন লামিয়া তাবাসসুম চৈতি ও মনির খান শিমুল। সেসময়ে যে ক’জন মডেল ও অভিনেত্রী দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম চৈতী। জুঁই নারকেল তেল, বার্জার পেইন্টসের বিজ্ঞাপন দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন এই সুন্দরীতমা। ঐ সময়টাতে প্রচার হওয়া বিজ্ঞাপনগুলোও ছিলো বেশ নান্দনিক। যার ফলে খুব দ্রুতই সেগুলো দর্শকপ্রিয়তা পেতো। সেইসব বিজ্ঞাপনের বদৌলতে অনেক মডেল ও অভিনয়শিল্পীরাই পেয়েছেন তারকাখ্যাতি।

অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে কাজ করেছেন গুটিকয়েক বিজ্ঞাপনে। সংখ্যায় কম হলেও মানে ও অভিনয়ের স্বকীয়তায় জনপ্রিয়তার আকাশ ছুঁয়েছিলেন চৈতি। স্বল্প এই ক্যারিয়ারে ২০০০ সালে বিটিভিতে প্রচার হওয়া ‘ছবির মতো মেয়ে’ শিরোনামে মাত্র একটি টেলিফিল্মে দেখা গিয়েছিল তাকে। ইমদাদুল হক মিলনের লেখা গল্পে এটি নির্মাণ করেছিলেন নন্দিত নির্মাতা ও অভিনেতা আফজাল হোসেন। সেখানে চৈতীর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন আফজাল হোসেন ও মনির খান শিমুল।

এই টেলিফিল্মের পর আর ক্যামেরার সামনে তাকে দাড়াতে দেখা যায় নি। তখনকার সময়ে এটাই ছিল তার শেষ কাজ। প্রায় ১৯ বছরের বিরতির পর কিছুদিন আগেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন নব্বই দশক মাতানো চিরচেনা সেই বিজ্ঞাপনের মুখ চৈতি। ২৫ বছর আগে নিজেরই করা বার্জার পেইন্টসের সেই রঙ মাখানো বিজ্ঞাপনের সিক্যুয়েলে মডেল হয়েছেন।

নব্বই দশকে প্রচার হওয়া ‘ভালবাসার রঙ’ স্লোগান নিয়ে সেই বিজ্ঞাপনের দুই মডেল শিমুল ও চৈতী দর্শকের মনে আজও স্মৃতির আয়নায় প্রিয়মুখ হয়ে আছেন। সেই জুটিই আবার দেখা দিয়েছেন ২৫ বছর পর। দাম্পত্যের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মনের মাধুরী মেশানো রঙে রঙিন হয়েছিলো যে সংসার সেই সংসারের বসার ঘরটা আবারও গোলাপি আর শোবার ঘরটা আকাশের মতো নীল হয়ে উঠলো। বিজ্ঞাপনটি প্রচারে আসার পর দারুণ সাড়া পড়েছে।

এদিকে আজ বুধবার সেই মন মাতানো মডেল ও অভিনেত্রীর জন্মদিন। গতকাল রাত থেকেই ভক্ত অনুরাগিসহ সকলের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা পাচ্ছেন। জন্মদিন নিয়ে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই তবে পরিবারের সাথেই দিনটি উদযাপন করবেন বলে জানান তিনি।

চৈতী বলেন, একটু আগে স্কুল থেকে বাসায় আসলাম। তেমন কোন পরিকল্পনা নেই তবে পরিবারের সাথে রাতে বাহিরে ডিনার করবো, এখন পর্যন্ত এটাই জানি। পরিবার থেকে কোন সারপ্রাইজ আছে কিনা এখনও বলতে পারছিনা।

জন্মদিন নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বছর দুয়েক আগের ঘটনা অর্থাৎ ২০১৭ সালে, আমি মনে হয় আমার জন্মদিনে সেরা সারপ্রাইজটা পেয়েছিলাম। বাপ্পা মজুমদার দা আমার ভীষণ পছন্দের একজন শিল্পী। আমার সঙ্গে উনার তেমন কোন পরিচয় ছিল না। জন্মদিনের আগের রাতে বাহির থেকে ডিনার করে বাসায় এসে দেখি বাপ্পা দা আমার বাসায়, সঙ্গে ছিল হাবিব ওয়াহিদ। আমি তো পুরাই অবাক হয়ে গেলাম। আমার স্বামী উনাকে অনেক রিকুএস্ট করে তারপর রাত ১২টার সময় বাসায় নিয়ে এসেছেন আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। আর হাবিব আমার ছোটবেলার বন্ধু। সেদিন বাসায় ঢুকে আমি নিজেই চিনতে পারছিলাম না যে এটা কি আমার বাসা! আমি এতটাই চমকে গিয়েছি যে প্রিয় শিল্পী বাপ্পা দা এসেছেন তাকে কেক খাওয়ানোর কথা বলেছিলাম কিনা সেটাই ভুলে গেছি।

তিনি আরও বলেন, আরেকটা ঘটনা সেটা অনেক বছর আগের কথা। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। আমি আর আমার স্বামী সেই স্কুল বয়স থেকেই পরিচিত। আমরা একসাথে পড়তাম। তখন আমার জন্মদিনে রাত ১২টার সময় সে আমার বাসায় ৩০০ গোলাপ পাঠিয়েছিল। আমি তো পুরা অবাক। তখন আমার আব্বু বলে, আমার বাসায় এতগুলা গোলাপ পাঠালো কোন ছেলে! সেই সময়ে কোন মেয়েকে একটা গোলাপ দেওয়ায় ছিল অনেক বড় ব্যাপার, আর সে আমাকে ৩০০ গোলাপ দিল। বলা যায় এটাই আমার পাওয়া সেরা উপহার এখন পর্যন্ত।

বার্জারের সেই বিজ্ঞাপনের সিক্যুয়েলে মডেল হয়ে কাজে ফিরলেও এরপর আর কোন কাজে দেখা যায় নি তাকে। তবে খুব শিগগিরই নতুন কাজ নিয়ে জাহির হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

চৈতি বলেন, দীর্ঘদিন পর আমার প্রত্যাবর্তনে দর্শকরা যেভাবে রেসপন্স করেছেন সেটা সত্যিই আমার জন্য বিরাট আনন্দের ও প্রেরণার। আমি কিন্তু খুব বেশি কাজ করিনি। যে দু-চারটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি সেগুলো দর্শক এখনও মনে রেখেছেন। এটা দেখে সত্যি আমি অনেক আনন্দিত। এটাই তো কাজের অনুপ্রেরণা।

অনেক কাজের প্রস্তাব কিন্তু পাই, কিন্তু করা হয় না। আমি যেরকম কাজ করেছি, যার জন্য দর্শকরা আমাকে মনে রেখেছেন এখন যদি তার চেয়ে কম মানের কাজ করি তাহলে তো আমার মানের জায়গাটা হারাবো। তাই অনেক বিজ্ঞাপন বা নাটকের প্রস্তাব পেলেও ফিরিয়ে দিয়েছি। তবে শিগগিরই নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব। বার্জারের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়ে আছে বেশ কিছু কাজের এবং এছাড়া বেশ কিছু নাটকের জন্যও কথাবার্তা চূড়ান্ত হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই হাজির হবো।

শোবিজ জগত ছেড়ে দেওয়ার পর ২০০০ সাল থেকেই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন চৈতি। প্রায় ১৮ বছর ধানমন্ডির সানবীম স্কুলে শিক্ষকতা করছেন সেইসাথে নিজের সংসার সামলেছেন যার কারণে শোবিজ থেকে দূরে সরে থাকতে হয়েছে তার। চৈতির স্বামী ইমরান আসিফের বেশ সুখেই কাটছে দাম্পত্যজীবন। সেই দাম্পত্য জীবন আলো করে আছে দুই কন্যা। বড় মেয় ‘এ লেভেল’ করছে। ছোট মেয়ে পড়ছে প্রথম শ্রেণিতে। সংসার, স্বামী ও সন্তান এই তিন ‘স’ তেই এখন নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছেন নিজেকে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত