ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

'অবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে জানি না': ভুতুড়ে ইতালি থেকে বাংলাদেশি নারী

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২০, ০০:১৯

'অবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে জানি না': ভুতুড়ে ইতালি থেকে বাংলাদেশি নারী

চীনের পর যে দেশের লোকজন করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে সেটি ইতালি। কিন্তু বড় ধাক্কার পর চীন ধীরে ধীরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে প্রাথমিক সামালের দিকেও থাকলেও আক্রান্তের পর ইতালি যেন দিনে দিনে এর উল্টো দিকে যাচ্ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে দেশটি ক্রমেই খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

এই ভাইরাসের কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ইউরোপের এই দেশটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতালি যেন এখন বেসামাল হয়ে পড়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটার এর তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট ৬শ' ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশ হাজার ১শ' ৪৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

পরিস্থিতি এখন এতটাই আয়ত্ত্বের বাইরে চলে গেছে যে, সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে পুরো দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে, নিষিদ্ধ করা হয়েছে জনসমাগম। জীবিকা নির্বাহ বা পারিবারিক জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সব ধরণের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

গতকাল সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের প্রাণ বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

যারা এসব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করবেন, তাদের জেল-জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি জুড়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এরকম ব্যাপক ব্যাঘাত আর দেখা যায়নি।

পরিস্থিতি কতটা গুরুতর তা বর্ণনা করতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতালির জন্য এটি হয়তো অন্ধকারতম সময়, কিন্ত সঠিক আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতালিয়ানরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে নিতে পারবে।

এ ছাড়া লম্বারদিয়া অঞ্চলসহ আরও ১৪টি প্রদেশে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা দেন। রেড জোন এলাকার অধিবাসীরা কেউ সেখান থেকে বের হতে পারবেনা এবং নতুন করে অন্যত্র থেকে আসা ব্যক্তিরাও প্রবেশ করতে পারবে না। দেশটিতে পাব ও ডিস্কো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইতালির ভাইরাসটি সংক্রমণের প্রধান কেন্দ্র মিলান নগরীতে থাকেন বাংলাদেশের সাংবাদিক ফেরদৌসি আক্তার। দেশজুড়ে জারিকরা নিষেধাজ্ঞার পর তাদের এখনকার জীবনযাত্রা সম্পর্কে তিনি বিবিসি'র এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা চীনের উহান শহরের কথা শুনেছিলাম। সেই শহরটি নাকি একদম আলাদা করে ফেলা হয়েছিল। এখন আমরাই সেরকম এক রেড জোনের বাসিন্দা। শনিবার রাতে যখন প্রথম এই ঘোষণা শুনি, আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভয় পাবো না কেন? শুধু আমাদের অঞ্চলেই আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬,০০০। হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হয়েছে ৬৯৫ জন মানুষকে। খুবই ভয়ে আছি। অবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে জানি না। আমি আজ কাজে যেতে পারিনি।

পরিস্থিতি তুলে ধর তিনি বলেন, বাইরে দোকানপাট-রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ। আমি গতকাল কাজে যাব বলে বেরিয়েছিলাম। তখন দেখেছি রেস্টুরেন্টগুলো ফাঁকা, কেউ নেই। মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি মেট্রো, বাস কিছুই সময়মত চলছে না। মনে হচ্ছে একটা ভুতুড়ে পরিবেশ। এরপর ভয়ে আর কাজে যাইনি। ডাক্তারখানায় গিয়ে দেখলাম সবাই ডাক্তারের কাছ থেকে অসুস্থতার ছুটি যাওয়ার জন্য চিঠি নিচ্ছে। ডাক্তার কিছু জিজ্ঞেস না করেই সবাইকে চিঠি দিয়ে দিচ্ছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সবাইকে সরকারের বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত