ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

আজ উপকূলে আঘাত হানবে ‘নিসর্গ’, রেড অ্যালার্ট জারি

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২০, ০৬:৩৭

আজ উপকূলে আঘাত হানবে ‘নিসর্গ’, রেড অ্যালার্ট জারি

প্রায় ১৪০ বছর পর ঘুর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে পড়তে যাচ্ছে ভারতের রাজধানী মুম্বাই। এই শহরে সর্বশেষ ঘুর্ণিঝড়ের তাণ্ডব দেখা যায় ১৮৮২ সালে। সম্প্রতি দেশটিতে তাণ্ডব চালায় সুপার সাইক্লোন আম্পান। সেই তাণ্ডবের আঘাত শুকানোর আগেই দেখা দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘নিসর্গ’।

ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির বাণিজ্যনগরীর উপকূলে ‘নিসর্গ’ আছড়ে পড়লে তা বিরল ঘটনা হিসেবে ঠাঁই পাবে ইতিহাসের পাতায়। প্রায় ১৪০ বছরে মুম্বাইয়ে কোনও ঘূর্ণিঝড় হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুম্বাইয়ে ঘুর্ণিঝড় না হওয়ার মূলে একাধিক ভৌগোলিক কারণ। এমনিতেই আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, আবার তৈরি হলেও ভৌগোলিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক কারণে তা মুম্বইয়ে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না।

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, আরব সাগরের উপকূল বরাবর গড়ে ওঠা মুম্বই শেষ ঘূর্ণিঝড় দেখেছিল ১৮৮২ সালে। এখনকার মতো সেই সময় ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা করে নামকরণ করা হত না। মূলত যেখানে উপকূলে আছড়ে পড়ত, সেই জায়গার নামানুসারেই নাম হত। তাই সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘বম্বে সাইক্লোন’। বম্বে সাইক্লোনে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ মানুষের।

মুম্বাইয়ে ঘুর্ণিঝড় কেন কম হয়?

আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ও প্রধান কারণ, আরব সাগরের জলবায়ুর প্রকৃতি। এমনিতেই আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি খুব কম তৈরি হয়। সেখানে বঙ্গোপসাগরে বছরে গড়ে ৫-৬টি সাইক্লোন তৈরি হয়। তার মধ্যে আবার ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় দু’টি। অন্যদিকে আরব সাগরে একটি বা দু’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও তা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব কম।

আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহ ও আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির কারণে কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে তা ওমান বা আডেন উপসাগরের দিকে ঘুরে যায়। কখনো গুজরাট উপকূলের দিকে ঘুরে যায়।

মুম্বাই আইআইটির মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শ্রীধর বালাসুব্রহ্মনিয়ণ জানান, আরব সাগরের পূর্বমুখী বায়ুপ্রবাহ ঘূর্ণিঝড়কে ওমান ও আডেন উপসাগরের দিকে অথবা গুজরাটের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। যেমন ২০১৯ সালে আরব সাগরে সৃষ্ট সাইক্লোন ‘কিয়ার’ আছড়ে পড়েছিল ওমানে। একই কারণে ২০১৭ সালে সাইক্লোন ‘বায়ু’ তাণ্ডব চালিয়েছিল গুজরাটের উপকূলে।

প্রাক বর্ষার সময় সক্রিয় মৌসুমি বায়ুপ্রবাহও কার্যত দেওয়াল তুলে দিয়ে রক্ষা করে মুম্বাইয়ের উপকূল। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের জেরে গোটা পশ্চিম উপকূল জুড়ে উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়। আবহবিদ্যার পরিভাষায় যার নাম ‘সাবট্রপিক্যাল রিজ’।

বালাসুব্রহ্মনিয়ণ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতাই হল এই সাবট্রপিক্যাল রিজ বরাবর প্রবাহিত হওয়া। কিন্তু সাইক্লোন তৈরি হলেও এই উচ্চচাপ বলয় তার শক্তি উপকূলে আসা পর্যন্ত একেবারে কমিয়ে দেয়।

২০১৭ সালের সাইক্লোন ‘ওচখি’ মুম্বইয়ের উপকূলে প্রভাব ফেলেছিল বটে, কিন্ত কিন্তু উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় তা সাধারণ ঝড়ে পরিণত হয়েছিল। ফলে মুম্বাইয়ের উপকূল ঘূর্ণিঝড় থেকে কার্যত নিরাপদই।

কিন্তু এই নিরাপদ উপকূলেই ১৮৮২ সালের পর ফের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটতে চলেছে। এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া দফতরের যা পূর্বাভাস, তাতে ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই আছড়ে পড়তে চলেছে বাণিজ্যনগরীতে। সঙ্গে বিপুল জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতাও রয়েছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী। মহারাষ্ট্র-গুজরাট মিলিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১০টি দল মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে হাসপাতালগুলোতে বিকল্প বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুম্বাই, ঠাণে, পালঘর, রাইগড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা রয়েছে সিন্ধুদুর্গ, রত্নগিরি, পালঘর, ঠাণে, মুম্বাই ও নাসিকে। এছাড়া গুজরাটেও জারি হয়েছে সতর্কতা।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত