ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

মার্কিন ভোটের লড়াই কি আদালতে গড়াবে?

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১০:২৭  
আপডেট :
 ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১০:৩৪

মার্কিন ভোটের লড়াই কি আদালতে গড়াবে?

মাত্র কয়েকঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। কিন্তু এবার ভোটের মধ্য দিয়ে কোনও একজন প্রার্থী জয় ছিনিয়ে আনবেন, নাকি নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াই শেষমেশ আদালত পর্যন্ত গড়াবে তা নিয়ে গভীর সংশয় আছে। রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো আগেই বলেছিলেন, নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি রায় মেনে নাও নিতে পারেন। প্রয়োজনে যেতে পারেন উচ্চ আদালতে। এজন্য প্রস্তুতিও নিয়েছেন। খবর রয়টার্সের।

ডাকযোগে রেকর্ড সংখ্যায় ভোট, ইলেকটরেটদের মধ্যে বেশিমাত্রায় মেরুকরণ কিংবা সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের প্রস্তুতির যে আভাস যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো দিচ্ছে, তাতে নতুন প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত হওয়ার লড়াই আদালত পর্যন্ত যাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে। এখন শুধু যে কোনও একটি ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্যের ফলাফল সমান-সমান বা চুল পরিমাণ পার্থক্য হলেও হয়। সেক্ষেত্রে হয়ত উভয় পক্ষই আদালতের দ্বারস্থ হবেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি ল’ স্কুলের নির্বাচনী আইন বিষয়ের শিক্ষক জেসিকা লেভিনসন বলেন, ‘যদি পেনসিলভানিয়া ও ফ্লোরিডায় ফলাফল সমান হয় বা ব্যবধান খুব সামান্যও হয়, তহলেই হয়ত আমরা প্রাণপন আইনি লড়াইয়ে পড়ে যেতে পারি।’

তাছাড়া, এবার ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে আদালতের রায়ের কারণেও নির্বাচনের পর আইনি লড়াইয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। বিশেষ করে পেনসিলভানিয়া এবং আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মিনেসোটায় নির্বাচনের ফল কাছাকাছি হলে এই লড়াইয়ের আশঙ্কা আছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান শিবির মেইল-ইন বা ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট ভোট অনুষ্ঠানের কয়েকদিন পরও গ্রহণ করার বিরোধিতা করে আসছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে একের পর এক মামলায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট শিবির।

গত ২৯ অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প শিবিরের বিপরীতে গিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য-নর্থ ক্যারোলাইনা এবং পেনসিলভানিয়ায় ভোট অনুষ্ঠানের পরও ব্যালট গ্রহণে অতিরিক্ত সময় অনুমোদনের পক্ষে রায় দেয়। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খায় ট্রাম্প শিবির।

যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম সার্কিট কোর্ট অব আপিলও ২৯ অক্টোবরে মিনেসোটায় এবং এর আগে ২৮ অক্টোবর পেনসিলভানিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট ডাকযোগ আসা ব্যালট নির্বাচনী দিনের (৩ নভেম্বর) পর গ্রহণের সময়সীমা নিয়ে একইরকম দুটি রায় দিয়েছে।

ব্যালট নিয়ে এই আইনি লড়াইয়ের মতো ভোটের লড়াইও আদালত পর্যন্ত গড়ানোর আভাস আগেভাগেই দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প । তবে সেখানে তিনি এগিয়ে থাকার ব্যবস্থা এরই মধ্যে করে রেখেছেন রক্ষণশীল বিচারপতির সংখ্যা বাড়িয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে গত ১৪০ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে মাত্র একবার আদালত চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ২০০০ সালে আদালতের হস্তক্ষেপে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী আল গোরকে হারিয়ে বিজয়ী ঘোষিত হন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ। আল গোর ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ভোট পুনঃগণনার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। আদালতে হেরে যাওয়ার পর আল গোর নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে নেন।

ভোটের লড়াই আদালতে গড়ালে কী হতে পারে:

ভোটের লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়ালে সেখানে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতির মধ্যে ৬:৩ ব্যবধানে রক্ষণশীলরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থী এমি কনি ব্যারেটের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বিগুণ ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন রক্ষণশীলরা। এই ছয় জনের মধ্যে তিনজনই আবার ট্রাম্পের নিয়োগ দেওয়া।

গত সেপ্টেম্বরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, ভোটের আগে সুপ্রিম কোর্টের খালি হওয়া পদে তিনি তার পছন্দের প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে চান। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে নির্ধারিত হতে পারে এবং আমার মনে হয়, এ সময়ে সুপ্রিম কোর্টে নয়জন বিচারপতিই থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে এতটা সহজ করে দেখছেন না। এমন একজন এডাভ নোটি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের কিছু কিছু বক্তব্যে মনে হচ্ছে তিনি ভাবছেন, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে কে বিজয়ী হয়েছেন এবং সুপ্রিম কোর্ট একটা রায় দিয়ে দিবে। কিন্তু বিষয়টা আসলে এতটা সহজ না। নির্বাচনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এভাবে কাজ করে না।’

তবে বিশ্লেষকরা যাই বলুন, ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের পক্ষপাতের কারণেই ৫:৪ ব্যবধানে জিতে গিয়েছিলেন। পক্ষপাতমূলক সেই রায়ে মাত্র ৫৩৭ ভোটের ব্যবধানে বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নিপাট ভদ্রলোক আল গোর গণতন্ত্রের স্বার্থে সে রায় মেনে নিলেও পরবর্তীতে দেখা যায়, ফ্লোরিডার ভোট যদি সঠিকভাবে গণনা করা হত, তাহলে আল গোরই হতেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট।

তবে এবারের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রথম থেকেই। ফলে চূড়ান্ত রায় আদালত থেকে আসলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

বাংলাদেশ জার্নাল/নকি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত