ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাংবাদিক জামাল খাশোগির শেষ কলাম

সাংবাদিক জামাল খাশোগির শেষ কলাম

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় সৌদি আরবের নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাশোগির লেখা শেষ আর্টিক্যাল প্রকাশিত হয়েছে। মতামত পাতায় প্রকাশিত নিজের শেষ কলামেও আরব বিশ্বে অবাধ মত প্রকাশের সুযোগ চেয়েছেন ওই সাংবাদিক।

সৌদি রাজপরিবারের নীতির সমালোচনা করে মত প্রকাশের জন্য খাশোগি রিয়াদ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু এতেও রক্ষা পেলেন না। গত দু সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি।

গত ২ অক্টোবর তালাক সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহের জন্য ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন ৫৯ বছর বয়সী খাশোগি। এরপর তাকে আর দেখা যায়নি। তুরস্ক বলছে, সৌদি কনস্যুলেটের অভ্যন্তরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের ওপর ১০ মিনিটের একটি অডিও টেপ আছে বলেও দাবি করেছে তুরস্ক।

রিয়াদ এ অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে ‘খাশেগিকে খুন করা হয়েছে’ এমনটাই উন্মোচিত হচ্ছে বলে ধারণা পশ্চিমা গণমাধ্যমের।

এর মধ্যেই বুধবার ওয়াশিংটন পোস্ট নিখোঁজ হওয়ার আগে তাদেরকে পাঠানো খাশোগির সর্বশেষ কলাম ছাপায়। ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে প্রবেশের আগেই ৭০০ শব্দের ওই নিবন্ধটি সহকারীকে পাঠিয়েছিলেন আল-আরব নিউজ চ্যানেলের সাবেক এ প্রধান সম্পাদক।

খাসোগির নিখোঁজ নিয়ে আঙ্কারা ও রিয়াদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের মধ্যেই ৩ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে কলামটি পৌঁছায়। সপ্তাহ দুয়েক অপেক্ষার পর সেটি ছাপার সিদ্ধান্ত হয়।

৭০০ শব্দের এ কলামে খাসোগি আরব বিশ্বে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ উন্মোচনের জোর দাবি জানান। বলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চাওয়া অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোই মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে এ ধরনের ‘লোহার পর্দা’ চাপিয়ে দিয়েছে।

তথ্য ও ধারণার অবাধ বিনিময় চেয়ে লেখা কলামটির শিরোনাম হচ্ছে- ‘আরব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যা দরকার, তা হল অবাধ মতপ্রকাশ’।

রাজনৈতিক অধিকার ও বেসামরিক নাগরিকদের স্বাধীনতা নিয়ে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেন খাশোগি। বেশিরভাগ আরব রাষ্ট্রই এ ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা দেয় না বলে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আরবের সরকারগুলো গণমাধ্যমের মুখচেপে ধরলেও সেখানে খুবই অল্প প্রতিবাদ হয় বলেও জানান খাশোগি। সাধারণ মানুষও এ দেখে আরও চুপ মেরে যায়।

ভিন্নমতাবলম্বী লেখক, চিন্তাবিদ ও প্রতিবেদকদের জন্য বিকল্প গণমাধ্যমের কথাও ভাবতে বলেন এ সাংবাদিক।

সোভিয়েত আমলে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপিত ‘রেডিও ফ্রি ইউরোপের’ মত কিছু আরব বিশ্বকে লক্ষ্য করে বানানো যায় কিনা, তারও প্রস্তাব করেন এক সময়ে সৌদি রাজপরিবারের উপদেষ্টা ও অঘোষিত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা খাসোগি।

পরের দিকে ইয়েমেনের যুদ্ধ, নারী আন্দোলনকর্মীদের আটক এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিষয়ে রিয়াদের অবস্থানের সমালোচক হিসেবেও আবির্ভূত হন এ সাংবাদিক।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান লেখালেখিতে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন খাশোগি, এরপর থেকে ভার্জিনিয়াতেই বাস ছিল তার।

তুর্কি বাগদত্তা হেতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে ঢুকেছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের এ কলামনিস্ট।

নয় ঘণ্টা অপেক্ষার পরও খাশোগি কনসুলেট থেকে বেরিয়ে না আসায় তুর্কি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান হেতিস। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে সৌদি সাংবাদিককে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আঙ্কারা।

সূত্র: আল জাজিরা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত