ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

যে দেশের এমপিরা কোনো সুবিধা পান না

যে দেশের এমপিরা কোনো সুবিধা পান না
সুইডেনের এমপি প্রি-অর্নে হাকানসন

ভোটে সংসদ সদস্য বা এমপি নির্বাচিত হওয়াটাকে অনেক দেশেই অর্থনৈতিকভাবে বেশ সুবিধাজনক একটি পেশা বলে ধরে নেয়া হয়ে থাকে। একই সঙ্গে এই পদের মাধ্যমে ক্ষমতা দেখানোরও বিরাট সুযোগ মেলে। কিন্তু সুইডেনের এমপিদের হজন্য ব্যাপারটা একেবারে আলাদা।

এই দেশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়াটাকে একটি চাকরির মতোই দেখা হয়ে থাকে। ফলে এখানকার এমপিরা মোটা অংকের হাতখরচ আর নানারকম বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারেন না। বরং জনগণের করের টাকা খরচের ব্যাপারে সুইডেনে অত্যন্ত কড়াকড়ি রয়েছে সংসদ সদস্যের ওপরে।

সাধারণ নাগরিক

সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংসদ সদস্য প্রি-অর্নে হাকানসন বলেন, ‘আমরা হচ্ছি দেশের সাধারণ নাগরিক। সংসদ সদস্যের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা পাবার বিষয়টি কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়, কারণ আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা। তারা যে অবস্থায় বা যেভাবে বসবাস করছেন, সেটাকেই তুলে ধরা।’

‘আমরা শুধু এটা বলতে পারি, আমাদের সুবিধা এটাই যে, আমরা এই কাজটি করতে পারছি আর দেশ পরিচালনায় প্রভাব রাখতে পারছি,’ বলছেন হাকানসন।

সুইডেনের সংসদ সদস্যরা পাবলিক পরিবহনে বিনামূল্যে যাতায়াত করার সুবিধা পান। কিন্তু অনেক দেশের মতো তারা নিজের জন্য কোন গাড়ি বা চালক পান না।

এমনকি সুইডেনের পার্লামেন্টের মাত্র তিনটি ভলভো এস-এইটটি আছে, যা শুধুমাত্র সরকারি অনুষ্ঠানের কাজে পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট এবং তিনজন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।

পার্লামেন্টের কর্মকর্তা রেনে পোডকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমাদের কোনো ট্যাক্সি সার্ভিস নেই। সংসদ সদস্যদের বাড়িতে বা কাজের স্থানে আনা নেয়া করার জন্য এসব গাড়ি নয়।’

আসলে দেশটিতে শুধুমাত্র যে একজন রাজনীতিবিদকে সরকারিভাবে গাড়ি দেয়া হয়েছে, তিনি হচ্ছেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী।

মজুরি

সুইডেনের সংসদ সদস্যরা মাসে আয় করেন গড়ে ৬৯০০ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের একজন কংগ্রেসম্যানের মাসিক বেতনের অর্ধেক। সুইডেনের কর্মীদের গড় মাসিক আয় প্রায় ২৮০০ ডলারের মতো।

অর্থনৈতিকভাবে আকর্ষণীয়

যেসব সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকা স্টকহোমের বাইরে, তারা ‘ট্রাটামেন্ট’ নামের একটি বিশেষ ভাতা দাবি করতে পারেন। সেটি হচ্ছে যে কদিন তারা রাজধানীতে থাকবেন, ততদিনের জন্য একটি দৈনিক ভাতা।

কিন্তু সেটা কতো? প্রতিদিনকার জন্য প্রায় ১২ ডলার, যা দিয়ে স্টকহোমে একবেলার জন্যও খুব বিলাসী কোন খাবার কেনা যাবে না। কফি কেনার জন্যও তাদের নিজেদের খরচ দিতে হয়।

তবে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সুইডেনের সংসদ সদস্যরা কোনো মজুরিও পেতেন না। তার বদলে দলের কর্মীরা এই সংসদ সদস্যদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন। ১৯৫৭ সাল থেকে সুইডেনের পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা ভাতা পেতে শুরু করেন।

পার্লামেন্টের নথিপত্রে দেখা যায়, বেতন দেয়ার বিষয়টি এজন্য চালু করা হয়েছে যাতে কোন নাগরিকের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে না পড়ে। কিন্তু সুইডিশরা এটাও চান না যেন এই বেতন আবার তাদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো সুইডেনের সংসদ সদস্যরা ভর্তুকি মূল্যের আবাসন পেতে পারেন। তবে শুধুমাত্র তারাই পাবেন, যারা স্টকহোমে থাকেন না।

সিঙ্গেল বেড

আর তাদের সেই থাকার জায়গাটি আহামরি কোন বিলাসবহুল স্থান নয়। প্রি-অর্নে হাকানসন বলছেন, তিনি থাকেন মাত্র ৪৬ বর্গমিটারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। সরকারি পরিচালনার অনেক স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের আকার মাত্র ১৬ বর্গমিটার। আর এসব ফ্ল্যাটে ওয়াশিং মেশিন বা ডিসওয়াশারের মতো আসবাবপত্রও থাকে না। আসবাব বলতে সেখানে শুধুমাত্র একজনের থাকার মতো একটি সিঙ্গেল বেড রয়েছে।

কারণ জনগণের অর্থ শুধুমাত্র একজন সংসদ সদস্যের খরচের জন্য, এসব অ্যাপার্টমেন্ট একরাত থাকতে হলে তার সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যদের অর্থ দিতে হবে। যদি কোন সংসদ সদস্য যদি তার সঙ্গীর সঙ্গে থাকতে চান, তাহলে ভাড়ার অর্ধেক তাকে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।

ভাড়ার সীমা

‘শুধুমাত্র সংসদ সদস্য ছাড়া আর কাউকে এসব অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচ আমরা দেবো না,’ বলছেন পার্লামেন্টের কর্মকর্তা আনা অ্যাস্পেগ্রেন।

সংসদ সদস্যরা চাইলে অন্য কোথাও থাকতে পারেন এবং সেটি ভাড়া নেয়ার জন্য পার্লামেন্টের একটি আবাসন তহবিল থেকে কিছুটা অনুদান নিতে পারেন। কিন্তু তার সীমা রয়েছে, প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৮২০ ডলার, যা স্টকহোমের কেন্দ্রস্থলের ভাড়ার হারের তুলনায় অত্যন্ত কম।

১৯৯০ সাল পর্যন্ত আবাসনের চিত্রটি ছিল আরো করুণ। তখন সংসদ সদস্যদের জন্য ভর্তুকি মূল্যের কোন আবাসন ব্যবস্থা ছিল না। তাদের তখন নিজেদের অফিসে ঘুমাতে হতো, যা ছিল মাত্র ১৫ বর্গমিটারের।

ব্যক্তিগত সহকারী বা উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সুইডিশ সংসদ সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।

বরং যে রাজনৈতিক দল থেকে এমপিরা আসেন, সেই দল একটি বিশেষ ভাতা পায়, যা দিয়ে তারা একটি কর্মী বাহিনী নিয়োগ করতে পারে, যারা সব দলের এমপিদের জন্যই কাজ করবে।

বিনামূল্যের কাজ

সুইডেনের আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে এই খরচের কড়াকড়ির ব্যাপারটি আরো কঠিন।

অনেক দলের কাছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তাদের মূল পেশার পাশাপাশি বলে বিবেচনা করা হয়। দেশটির প্রায় ৯৪ শতাংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কোন বেতন পান না শুধুমাত্র যারা নির্বাহী কমিটিতে কাজ করেন, তারা পার্টটাইম বা ফুল-টাইম হিসাবে ভাতা নিতে পারেন।

ক্রিশ্চিয়ানা এলফোর্স-জোডিন এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে বলছেন, ‘এটা একটি স্বেচ্ছামূলক কাজ, যা আমরা আমাদের অতিরিক্ত সময়ে ভালো মতোই করতে পারি।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত