ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

এখনো চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হংকংয়ের অর্থনীতি

এখনো চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হংকংয়ের অর্থনীতি
হংকংয়ে তিন মাস ধরে চলছে বিক্ষোভ

হংকংয়ে গত তিন মাস ধরে যে বিক্ষোভ চলছে তার বিরুদ্ধে চীন কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে। এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র বলে পরিচিত এই বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল থেকে গত দুই দশক ধরে বেইজিং ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে। সুতরাং কীভাবে তারা সঙ্কটকে আরো বাড়িয়ে তুলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিবিসির চীনের সম্পাদক হুয়ার্ড ঝাং বলছেন লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে বেইজিং হংকং এর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে বেইজিং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ মনোভাব দেখাচ্ছে। সম্প্রতি চীনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিক্ষোভ বিরোধী পোষ্ট বেড়ে গেছে।

এক বিরল সতর্কবার্তা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেছেন, ‘যদি হংকং সরকারের দ্বারা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায় তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার সেটা বসে বসে দেখবে না।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন তিনি উদ্বিগ্ন।

বিক্ষোভের প্রভাবে কী হচ্ছে?

দ্বীপটির অর্থনীতি ইতিমধ্যে এই ১১ মাসের বিক্ষোভের প্রভাব বুঝতে পারছে। স্থানীয় অর্থনীতির ২০ শতাংশ আসে পর্যটন এবং খুচরা ব্যবসা থেকে। এই খাতগুলো বিক্ষোভের কারণে সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে। ব্যবসায়ী, বিমানবন্দরের কর্মী এবং সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার হল সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। যার ফলে এশিয়ার বাণিজ্যিক কেন্দ্রেটিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে।

দক্ষিণ চায়না মর্নিং পোষ্ট খবরের কাগজের হিসেব অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট, মাত্র একদিনের বিক্ষোভে ৩'শ মিলিয়ন থেকে দুই দশমিক ৬ বিলিয়ন হংকং ডলার খরচ হয়েছে। কিন্তু যদি চীন সিদ্ধান্ত নেয় বিক্ষোভ কারীদের হটিয়ে দেবে তাহলে আরো বড় অংকের লোকসানের মুখে পরতে হবে বলছিলেন ঝাং।

তিনি বলছিলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং খরচ বিহীন বন্দর হিসেবে হংকং এর যে মর্যাদা আছে সেটা অপূরণীয় ভাবে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বেইজিং আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখে পরবে। সব পশ্চিমা সরকার চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়ন করবে এবং চীনের অর্থনীতি আর বিশ্বে তাদের যে মর্যাদা সেটার জন্য ভুগতে হতে পারে।

অর্থনীতির প্রবেশপথ

হংকং চীনের জন্য অর্থনীতি উভয়- বাণিজ্য এবং আর্থিক খাতের চাবিকাঠি। ২০১৭/১৮ সালে চীন ১২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বিদেশি বিনিয়োগ পায় যেটা ৯৯ বিলিয়ন ডলার আসে হংকং হয়ে। এর অর্থ মোট অর্থ প্রবাহের ৮০ শতাংশ আসছে হংকং থেকে।

এর কারণ হংকংয়ের আইন এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ কোম্পানিগুলোর জন্য একটা নিরাপদ বিনিয়োগের স্থান করে দিয়েছে।

ঝাং বলছিলেন এই অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটা বিশেষ সুবিধা পায়। সেগুলো বাণিজ্য, প্রযুক্তি, শুল্কের ক্ষেত্রে।

আর এই সুবিধাটা চীন ভোগ করে অন্যভাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপর যে শুল্ক নির্ধারণ করেছে, চীন যদি সেটা হংকং হয়ে ব্যবসাটা করে তাহলে তাদের উপর আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐ শুল্কের বোঝা বইতে হয় না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিক্ষিপ্ত অবস্থা কি কোম্পানিগুলোকে ভীত করবে এবং অর্থ চীনের বাইরে চলে যাওয়া বেড়ে যাবে?

ঝাং বলছেন, হংকং এ জনসংখ্যা ৭ মিলিয়ন। তাদের রিজার্ভ রয়েছে ভারত,দক্ষিণ কোরিয়া এবং ব্রাজিলের চেয়ে বেশি।

চীনের বৈদেশিক অর্থের রিজার্ভ বিশ্বের সবচেয়ে বড় যেটা পরিমাণ তিন দশমিক এক ট্রিলিয়ন ডলার। যাই হোক বাণিজ্য যুদ্ধ চীনের অর্থনীতিকে বড় ধরণের ঝাঁকুনি দিয়েছে। এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষের দরকার সব সম্পদ দিয়ে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের অবস্থা স্থিতিশীল রাখা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কোম্পানিগুলোর জন্য আরো উৎসাহিত করেছে তাদের ব্যবসাকে অন্য দেশে নিয়ে যেতে। প্রতিযোগিতার বাজারে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং ফিলিপিন্সে তাদের ব্যবসার একটা অংশ পূনস্থাপন করতে চাইবে।

গতবছর মার্কিন চেম্বার অব কর্মাস একটা জরিপ চালিয়ে দেখে দক্ষিণ চীনের তাদের ৭০ শতাংশ সদস্য দেশটির বাইরে ব্যবসা পূনস্থাপন করার কথা বিবেচনা করছে।

ব্যবসার জন্য খারাপ খবর কোম্পানিগুলোর জন্য হংকং ব্যবসার একটা প্রবেশপথ দুই দশক আগে হংকংকে চীনের যেমন প্রয়োজন ছিল এখন আর নিশ্চিতভাবেই তেমনটা নেই।

সাবেক এই ব্রিটিশ কলোনি যখন ১৯৯৭ সালে চীনের নিয়ন্ত্রণে আসলো তখন চীনের সমগ্র অর্থনীতির ১৮ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করতো তারা।

ক্যাপিটাল ইকনোমিক্স ইন লন্ডন এর সিনিয়র এশিয়া বিষয়ক অর্থনীতিবিদ গ্যারেথ লেইদার বলছেন, ‘আমার বিশ্বাস চীনের সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হংকংকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। আমি মনে করি তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে হংকংয়ের কিছু সাফল্য তারা ছেড়ে দেবে। ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ তারা চীনের মূল ভূখণ্ড এবং হংকংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।’

কিন্তু চীনের যে কোন পদক্ষেপ যদি হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের উপর আঘাত করে, সেটা ব্যবসার জন্য খারাপ খিুব খারাপ ফল বয়ে আনবে। আর বিষয়টি যে চীনে মাথায় নেই তেমন কিন্তু নয়। এখন চীন হংকংয়ের বিদ্রোহ দমনে কী পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার বিষয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত