ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪১ মিনিট আগে
শিরোনাম

পাক-ভারত যুদ্ধে সাড়ে ১০ কোটি মানুষ প্রাণ হারাবে

২০২৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ!

ধরুন, এটা ২০২৫ সাল। পাকিস্তানি জঙ্গিরা ভারতীয় পার্লামেন্ট হামলা চালিয়ে দেশটির বহু নেতাকে হত্যা করলো। জবাবে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরে ট্যাঙ্ক হামলা চালালো ভারতীয় সেনারা। এরপরই দু দেশের মধ্যে শুরু হয়ে গেলো পরমাণু অস্ত্রের লড়াই। আর এরকম একটি যুদ্ধে নিহত হবে ১০ কোটির বেশি মানুষ।

আর যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমে এমন বিপর্যয়কর অবস্থায় চলে যাবে যে সর্বশেষ তুষার যুগেও যেটি দেখা যায়নি।

বুধবার মার্কিন গবেষকদের এরকম একটি কল্পিত যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সৌদি গেজেট।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল নাগাদ সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে পরমাণু শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সত্যিই যদি এরকম যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে এই পারমাণবিক যুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হবে ১০ কোটির বেশি মানুষ। এছাড়া মিলিয়ন টনের কালো ঘন ঝুলে সূর্যের আলো এক দশকেরও বেশি সময় আটকে থাকায় ব্যাপকসংখ্যক লোককে ক্ষুধায় মরতে হবে।

সত্যিই যদি এমনটি হয় তাহলে বলতে হবে, বিশ্ব এর আগে এতবড় যুদ্ধ দেখেনি। আর প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এত বেশি মানুষ মারা যায়নি, যেমনটা মারা যাবে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটির মধ্যকার পারমাণবিক যুদ্ধে।

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দু দেশের মধ্যে বরাবরই বাক-বিতণ্ডা হয়ে থাকে। তবে গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করার পর থেকে এ নিয়ে দু দেশের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় গত শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভারতের সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার ওই ভাষণের পরই দু’দেশের মধ্যে সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করলেন মার্কিন গবেষকরা।

ওই রিপোর্টে গবেষকেরা বলছেন, দুই দেশের প্রত্যেকের হাতেই প্রায় ১৫০টি করে ওয়্যারহেড আছে ২০২৫ সালের মধ্যে যার সংখ্যা ২ শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রটগেয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী বিভাগের অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলছেন, ‘দুর্ভোগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে লড়াই চলছে। প্রতি মাসেই সীমান্তে মানুষ মারা যাচ্ছে।’

কাশ্মীর ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে গত ফেব্রুয়ারিতেও যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলো নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। তখন পুলওয়ামা হামলাাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বালাকোটে হামলা চালিয়েছিলো ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো। এসময় এক ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপতিত করে পাকিস্তানি সেনারা, বন্দি করা হয় ওই বিমানের পাইলটকে। এ নিয়ে তখন দু দেশের উত্তেজনা এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছিলো যে, কোনো সময় যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। কিন্তু চলমান উত্তেজনার মধ্যেই আটক ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ঘোষণা অনুযায়ী ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়া হয় ওই পাইলটকে যার প্রেক্ষিতে উপমহাদেশে একটি অবশ্যম্ভাবী যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

কিন্তু মার্কিন গবেষকরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যদি যুদ্ধ শুরু হয় এবং এতে যদি ১শ কিলোটন বোমা-ও ব্যবহার করা হয়তাহলে সাড়ে ১২ কোটির মতো মানুষ প্রাণ হারাবে। কেননা এসব বোমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোসীমা শহরে যে বোমা ফেলা হয়েছিলো তার চেয়ে ছয় গুণ বেশি শক্তিশালী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মারা গিয়েছিলো সাড়ে ৭ থেকে ৮ কোটি মানুষ।

আর এটা তো কেবল শুরু। কেননা গবেষকরা দেখেছেন, প্রলয়ঙ্করী অগ্নিবিস্ফোরণ এক কোটি ৬০ লাখ থেকে তিন কোটি ৬০ লাখের মতো ঝুল (কালো কার্বন) বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে ছড়িয়ে দেবে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। পরবর্তীতে এই ঝুল ক্রমাগত সৌর বিকিরণকে শুষে নেবে। বাতাসের তাপ বেড়ে যাবে এবং ধোঁয়ার উত্থান বাড়তে থাকবে।

এতে পৃথিবীতে সূর্যের আলো ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে যাবে। ভূ-উপরিভাগ ৩ দশমিক ৬ থেকে ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট শীতল হয়ে যাবে। এছাড়া ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃষ্টিপাতও হ্রাস পাবে। এতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব দেখা যাবে। পরবর্তী ১০ বছর এই প্রভাব থেকে যাবে।

অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলেন, ‘আমি আশা করছি লোকজন এটা গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করবে যে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে ব্যাপক মানুষ নিহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের হাতে যে অল্প সংখ্যক পরমাণু অস্ত্র রয়েছে তা বিশ্বকে ব্যাপক হুমকিতে ফেলেছে। তাই আমরা এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারিনা।’

সূত্র: সৌদি গেজেট

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত