ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক নাসিম

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২০, ১৬:৪৩  
আপডেট :
 ০১ অক্টোবর ২০২০, ১৯:০৪

৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক নাসিম

প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে নাসিম রিয়েল এস্টেটের মালিক ইমাম হোসেন নাসিম (৬০) ও তার স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমাকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিলো।

সাভারের কাউন্দিয়ায় জমি সংক্রান্ত প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত তিনশ কোটি টাকা লোপাট করেছেন নাসিম। তিনি অন্যের জমি ও সরকারি খাস জমি দখল করে আবাসিক এলাকা গড়ে দেয়ার নামে প্রায় ৫ হাজার মানুষের সাথে বায়না করেন। এরপর প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা এবং ২৫০ জনের সাথে ভূয়া চুক্তিপত্র করেন। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ২০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন নাসিম।

বুধবার রাতে রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসা ও চিড়িয়াখানা রোডের নাসিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, ১ লাখ ৩৫হাজার টাকার জাল নোট, ১ হাজার ৪শ’ পিস ইয়াবা, দুই বোতল বিদেশি মদ, ৪ টি ওয়াকিটকি সেট, ৬ টি পাসপোর্ট, ৩৭ টি ব্যাংক চেকবই এবং ৩২ টি মোবাইল সিম জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

এ সময় তিনি জানান, ইমাম হোসেন নাসিম ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঠিকাদারির কাজ করে আসলেও ২০০২ সাল থেকে অভিনব প্রতারণামূলক কৌশলে নিজেকে নাসিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক পরিচয় দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে ও ক্ষেত্রবিশেষে অস্ত্রের ভয়-ভীতি দেখিয়ে নানা অপরাধ চালিয়ে আসছিলো। ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক আরো জানান, রাজধানীর শাহ আলী এলাকার ২৫/২৯, চিড়িয়াখানা রোডের নাসিম গ্রুপের অফিসে অভিযান চালানোর সময় তার মালিকানাধীন ১৬ টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলো হলো, নাসিম রিয়েল এস্টেট লি., নাসিম ডেভলপার লি., নাসিম এগ্রো ফুড লি., নাসিম বাজার, এস বি ফাউন্ডেশন, ডা. বেলায়েত হোসেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নাসিম পার্সেল ও কুরিয়ার সার্ভিস, ইমারত অর্থ, নাসিম শিপ বিল্ডার্স, নাসিম ইঞ্জিনিয়ারিং ও কন্সাল্টেন্সি, নাসিম ট্রেডিং লি., সাহানা আই হাসপাতাল, বাংলানিউজ ১৬, নাসিম ড্রিংকিং ওয়াটার, নাসিম রিফাইন্ড সুগার ও নাসিম বেভারেজ লি.।

তিনি নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার শিকার মানুষদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যেতেন। বিভিন্ন সময় অস্ত্র ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিজের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতো। গ্রেপ্তার এড়াতে আন্ডারগ্রাইন্ডে তার ফিঙ্গারপ্রিন্টের দরজাযুক্ত গোপন অফিসে আত্মগোপন করতেন। এসময় তার তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। নাসিমের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা, ভূমিদস্যুতা, মাদক ও জালটাকা মামলায় অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে বলে জানান তিনি।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নাসিম দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহ করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা মাদক কারবারীদের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জাল টাকার ব্যবসাসহ অন্যান্য অভিযোগ স্বীকার করেছেন।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, ইমাম হোসেন নাসিমের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান থানাধীন মেদুয়া গ্রামে। তার বাবা ১৯৫০ সালের দিকে ঢাকায় চলে আসেন। তিন ১৯৬০ সালে ঢাকার বাড্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। আজিমপুরস্থ একটি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে মিরপুরের একটি হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার ২ টি কলেজ থেকে এইচএসসি ও গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে ৩ টি বিয়ে করেন এবং চার সন্তানের জনক। ১৯৯৬ সালে প্রথম বিয়ে, ২০০৪ সালে দ্বিতীয় বিয়ে এবং ২০১৩ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন।

আরো পড়ুন ৫৫ মামলার আসামি নাসিম গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত