ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

লালফিতায় আর কতোকাল জাতীয় শিক্ষানীতি

  গুলশান আরা বেগম

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২১, ১৯:১০  
আপডেট :
 ১৩ জুলাই ২০২১, ০১:৩২

লালফিতায় আর কতোকাল জাতীয় শিক্ষানীতি

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়নের পর থেকেই শিক্ষা আইন প্রণয়নের প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়ে আসছিলো। খসড়া আইন ২০১১ এ তৈরি করা হয়েছিলো এবং তা মন্ত্রী পরিষদে উত্থাপন করাও হয়েছিলো। কিন্তু নানা প্রাসঙ্গিক জটিলতার কারণে অগ্রসর হতে পারেনি। বিগত দশ বছর যাবৎ বিষয়টি ঝুলে আছে। দেরিতে হলেও খুটিনাটি বিষয়াবলী সমাধানের পর আইনে পরিনত করার পর্যায়ে এসেছে। হয়তো-বা খুব দ্রুত সংসদে উত্থাপিত হলে শিক্ষক আইন চুড়ান্ত বাস্তবতা পাবে। মহামান্য রাষ্ট্রতির স্বাক্ষরের পর এটি কার্যকর আইনে পরিনত হবে।

জনগণ ভাবছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষার উন্নয়নকে বেগবান করতে হলে এই আইনটি আদৌ আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী হবে কি না? বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কোচিং, নোট- গাইড বই প্রসঙ্গগুলো বিষফোঁড়ার মত কাজ করে আসছিলো। বিভিন্ন সময়ে বিগত শিক্ষামন্ত্রী বেশ ক্রদ্ধ হয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। মান সন্মান ক্ষুয়া যাওয়ার ভয়ে অনেকে এ সব ব্যবসা থেকে সরে এসেছিলো। তারপরও এ ভাবে না সে ভাবে চুরা গুপ্তা পথে ব্যবসাটি চালু ছিলো, নির্মূল করা যায়নি।

আমরা জানি ১৯৮০ সালে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নোট গাইট একটি আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। কিন্ত সেই আইনকে পাশকাটিয়ে নোট গাইডের নামে অনুশীলন বা সহায়ক বই বাজারে চলছে (১৯ ফ্রেব্রুয়ারী ২০২১,দৈনিক সংবাদ)। শিক্ষা আইন ২০২০ এ নোটগাইডের পরিবর্তে বর্তমানে প্রকাশিত সহায়ক গ্রন্থ বা রেফারেন্স বুক এবং সব ধরণের কোচিং সেন্টারকে বৈধতা দেয়া হতে যাচ্ছে।তবে উভয়টিকে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের অধীনে পূর্বানুমোদনক্রমে পরিচালনা ও প্রকাশ করা যাবে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন–” সহায়ক বই থাকতেই হবে, কেন না এনসিটিবির একটি বই দিয়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানো যায় না”। প্রতেকটি কোচিং সেন্টারকে নিবন্ধিত হতে হবে।

সংবাদপত্রে বর্তমানে শিক্ষা পাতায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের অনুশীলন মূলক পাঠ বা কনটেন্ট প্রকাশ করছে। এটা প্রকাশ করতে হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। এ তো দেখি আর এক ধরনের মুসিবত বা যন্ত্রনার জন্ম দিবে।এই সব অনুমোদন নিতে গেলে দুর্নীতির রাহগ্রাস মাথার উপর চেপে বসবে। কোচিং সেন্টারগুলি সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিনত হবে।শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফ্যাশানের যুগে এমনিতেই হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিমুখী।

এখন তো লাফিয়ে লাফিয়ে হবে, পূর্ব থেকেই আকর্ষনীয় সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত কোচিং মুখী। যেখানে নিয়ম বা শাসনের বালাই নেই।নেই সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ।এ মতাবস্থায় রাজস্ব অর্থ ব্যয় করে সরকার নিয়ন্ত্রনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আছে কি? আইনটি অনমোদনের পূর্বে আবারও বিষয়গুলো প্রতি নজর দেয়ার বিনয় আবেদন রাখছি। কেন না শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের প্রাণ। দক্ষ জাতি গঠনের মূল চাবিকাঠি। পান থেকে চুন খসলে জাতীয় উন্নয়নে নানা যন্ত্রণা তৈরী হতে পারে।

শিক্ষা আইনে আরো বিধি রয়েছে — সরকার মনে করলে সব ধরনের মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা তদুর্ধ্ব পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ তিন বছরের জন্য নিয়োগ দিতে পারবে। এ ছাড়া সরকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্য থেকেও একই ধরনের পদে নিয়োগ দিতে পারবে। সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।কিন্তু বাস্তবায়ন করা কি সহজ সরল হবে। তাতে তৈরি হবে পড়ালেখার পরিবর্তে শিক্ষক ও রাজনৈতিক মহলে নানা ধরণের দলাদলি ও ষড়যন্ত্র।কাম্য শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হবে, কেন না আমাদের মধ্যে মানবীয় মূল্যবোধের ধ্বস নেমেছে।

শিক্ষা আইনের ৩০ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে কোন শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশানের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে অভিভাবকদের লিখিত সন্মতিতে স্কুল সময়ের পরে -আগে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা যাবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠান চলার সময়ে কোচিংএ যেতে পারবে না।বিষয়টি আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সরকার আরো বেশ কিছু বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। তন্মধ্যে পাঠ্যবইয়ের বিষয় বস্তুর আলোকে পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর লেখা থাকে যেসব পুস্তকে এবং যা বানিজ্যিক ভাবে বিক্রির জন্য প্রকাশ করা হয়ে থাকে, সে গুলোর প্রকাশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।বিধানের লঙ্ঘন করা হলে তিন বছরের কারা দন্ড,পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেয়া যাবে।

আরো একটি বিধানে বলা হয়েছে -বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কার্য পরিধির বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এবং এ কারণে কোন অনিয়ম বা পাঠদান বাঁধা গ্রস্ত হলে কমিটি সার্বিক ভাবে বা ক্ষেত্রমতে চেয়ারম্যান দায়ী হবেন। এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত কতৃপক্ষ উক্ত কমিটি বাতিল বা ক্ষেত্র মতে চেয়ারম্যানকে অপসারন করতে পারবে।

সাধুবাদ জানাই এই ধরনের বিধিবিধান সম্বলিত শিক্ষা আইন পণয়নের জন্য। কমিটির নিয়োগ বাণিজ্য,দুর্নীতি, শিক্ষকদের মাথায় ছড়ি ঘুরানোসহ বিধি বর্হিভুত নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে।যা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে অশণি সংকেত বহন করে। পরিশেষে বলছি আওয়ামী বর্তমান সরকার বহু সফল্যজনক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ও বাস্তবতা দিচ্ছে। এই আইনটিও অনুমোদনের পর লালফিতার ফাইলে বন্দি না রেখে প্রয়োগ করলে শিক্ষা ও শিক্ষক সমাজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

লেখক: শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ জার্নাল-ওআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত