ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

সিআরবি রক্ষা: ধোঁয়াশা কাটছেই না

  মোস্তফা কামাল পাশা

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২১, ১৫:০৭

সিআরবি রক্ষা: ধোঁয়াশা কাটছেই না

চট্টগ্রামের সিআরবি নিয়ে নিজের লেখা নেই বহুদিন- সঙ্গত কারণেই। তালগোল কিছু বুঝিনা, তাই। অবশ্য এতে কিছু এসে যায়না- গুণতির কেউ না যে, চুপ বা সোচ্চার থাকলে লাভ-ক্ষতির পাল্লা ঝুঁকবে-উঠবে! জন সমাগমে না, সপ্তাহে রাতে ক'বার এমনিতেই চক্কর দেই, শুদ্ধ বায়ু গিলি।

কুকুর,গাছ, পেঁচা, বাদুর ও ভ্রাম্যমাণদের সাথে ভাব বিনিময়ও হয়। তৃপ্তি পাই-তাজা হই, এইটুকুই। অবশ্য অ্যাক্টিভিষ্টরা টানা সক্রিয় আছেনই। বিশ্বাস,থাকবেন। দেড় মাস পেরিয়ে দু'মাস ছুঁই ছুঁই। নেই আন্দোলনে কোন ফলাফল-এটাই বিস্ময়কর! বয়সী বৃক্ষে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম সাঁটানো, অক্সিজেন সিলিন্ডার শো, কাফনের কাপড় শো,, লাল কার্ড শো, ভাষণ, স্লোগান, মিছিল, মিটিং, মত বিনিময়, সংবাদ সম্মেলন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দফায় দফায় স্মারকলিপি, স্কুলশিশুর আবেগঘন চিঠিসহ আরও কতকিছু চলছেই ! আওয়ামী লীগ নেতারা নেতৃত্বের ফ্রন্ট লাইনে।

আন্দোলনের ঢেউ এরমাঝে আটলান্টিক, প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে বাঙালি কমিউনিটিতে আছড়ে পড়ছে। নিউইয়র্কসহ স্টেটের আরও কিছু নগরেও চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।

আফসোস, বিশাল ঢেউটি কাছের গণভবনের দেয়াল ভেদ করতে ব্যার্থ ! প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এখনো সিআরবি'র মত জাতীয় হেরিটেজ সাইট গিলে ফেলার আত্মঘাতী খেলা নিয়ে কিছু বলছেন না। অথচ তিনি শুধু দেশের না, চট্টগ্রাম উন্নয়নের অভিভাবকও।

সিআরবি'র নাকের ডগায় ৫০০ শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল, ১০০ ও ৫০ আসনের আলাদা মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইন্সটিটিউট হবে, কল্পনা করতেও কষ্ট। চট্টগ্রাম নগরীর প্রাকৃতিক অক্সিজেন ডিপো ধংস করে কীভাবে হাসপাতাল হবে? অসুস্থের জন্য হাসপাতাল কিন্তু পুরো নগরীর ফুসফুস কেটে শ্বাসকষ্টে ঠেলে দিয়ে হাসপাতাল কীসের বা কার চিকিৎসা দেবে! কোন ভাগ্যবানের সেবা ও লেখা পড়ায়?

আলিশান ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর প্রাণ-প্রকৃতির কী দুরাবস্থা হবে, বিশেষজ্ঞ মতামত প্রচুর, বাড়তি শব্দক্ষয় অপ্রাসঙ্গিক।

আমাদের রক্ত-ঘাম ও দীর্ঘ লড়াইয়ের নিট সুফল, আজকের আওয়ামী লীগ সরকার। নেত্রীকে দলের হোটেল ইডেন গার্ডেনের কাউন্সিলে আমরাই '৮১ সালে কাউন্সিলর হিসাবে শীর্ষ নেতৃত্বে এনেছি। এটা নিজের রাজনৈতিক জীবনের সবচে' বড় গৌরবের অংশ।

এরপর আরও বহু বন্ধুর পথ, বিপদ-আপদ পেরিয়ে ক্ষমতার ভিত তৈরির মূল কারিগরও আমরাই। আজ প্রিয় নেত্রী ক্ষমতায় আমরা সাইড লাইনে। সক্রিয় রাজনীতি থেকেও বিযুক্ত। কিন্তু নেত্রীর পথ মসৃণ রাখতে টানা বুদ্ধিবৃত্তিক সেক্টরে লড়াই জারি রেখেছি। প্রমাণ দেবে, মূলধারার মিডিয়া। রাজনৈতিক পদ অথবা স্বায়ত্তশাসিত বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় পদবী পুরস্কার পেতেও নয়।

চাইনি, চাইবোও না। যদ্দুর চিনি-জানি বঙ্গবন্ধুর মতই তাঁর প্রিয় কন্যা গণ-বান্ধব। দেশ এবং মানুষই তাঁর রাজনীতির শেষ কথা। খুবই সহজ-সরল তিনি। বৈশ্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ-প্রকৃতি সুরক্ষায়ও তাঁর আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। স্বীকৃতি হিসাবে অর্জন করেছেন, আন্তর্জাতিক "মাদার অব আর্থ' সম্মাননা। তাহলে কেন তিনি চুপ থাকবেন! নিশ্চয়ই কোন কিন্তু আছে! আছে তাঁকে ঘিরে মাফিয়া স্বার্থের বাধার কঠিন দেয়ালও।

সেটা কী? তিনিতো বোঝেন, চট্টগ্রামের হ্রদপিন্ড সিআরবি হেরিটেজ সাইট কোনমতেই সিন্ডিকেট স্বার্থের কাছে বলি দেয়া যায় না। দেবেনওনা। নিশ্চয়ই পিপিপি চুক্তি তাঁর জ্ঞাতসারে নয়, হলেও হাসপাতাল তৈরির জায়গাটা তাঁর অজ্ঞাতেই রাখা হয়েছে।

কথা হচ্ছে, ড. অনুপম সেনের মত বরেণ্যজন সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের মূল ব্যানার-নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান। তিনি নেত্রীর খুবই আস্থাভাজন এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী উপদেষ্টাও। সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল দলের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ সভাপতি। কো-চেয়ারম্যান পদে আছেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ আরও অনেক সরকারি দলের নেতা। আন্দোলনে টানা সক্রিয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও মহানগর শাখার দলীয় সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

সক্রিয় ভাবে সমর্থন দিয়েছেন, দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইন্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সিটি মেয়র ও সিনিয়র দলীয় নেতা এম, রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখা দলের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামসহ অসংখ্য সিনিয়র দলীয় নেতা।

মুষ্টিমেয় কজন বাদে আন্দোলনে আছে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবি, সংস্কৃতি কর্মী, সংগঠকসহ সর্বপেশা ও শ্রেণির মানুষ। তবুও কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বার্তা যাচ্ছে না! স্থানটির স্পর্শকাতরতা সম্পর্কে না জানলে তিনি কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন?

এত এত প্রভাবশালী নেতা, পদাধিকারীর সাথে দীর্ঘ সময়েও নেত্রীর যোগাযোগ হবেনা, এটাতো অবিশ্বাস্য! কিন্তু তাঁরা নগরবাসীকে অন্ধকারে রেখেছেন, কিছুই জানাচ্ছেন না। কোথায় তাঁদের বাধা, তাও পরিস্কার নয়। ভয়াল করোনা অতিমারিতে আন্দোলন, স্মারকলিপি,;এই-ওই অফিসে মত বিনিময় ও সংবাদ সম্মেলনের মত রুটিন কাজেই টানা ব্যাস্ত তাঁরা! স্বাভাবিক কারণে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

নেত্রীর ভূমিকা অনাবশ্যক প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেই। দায়টা কার? সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের নেতাদের নয় কী? বিষয়টি আরও তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছে কিছু বড় রেল কর্মকর্তা। তারাতো সরকার তথা জনগনের বেতনভুক খাদেম মাত্র। নীতিনির্ধারক নন, হুকুমের চাকর।

কিন্তু তারা "হাসপাতাল হবেই, কাজ চলছে, সব বাধাই অগ্রাহ্য করা হবে। রেলের সম্পদ রেলের, তাদের ইচ্ছায় সব হবে, চট্টগ্রামের মানুষ বাধা দেয়ার কেউ না"! এমন সব দম্ভোক্তি করে বিষয়টা আরো জটিল করে তুলছে। আন্দোলনে বাতাস ও কাটতি বাড়াতে আবার কিছু মিডিয়া অনাবশ্যক খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের বেফাঁস বক্তব্যও টেনে আনে।

সব মিলিয়ে সিআরবি'র অনিশ্চয়তা নিয়ে ধোঁয়াশার মাঝে অদ্ভুত সময় পার করছে চট্টগ্রামের মানুষ। দ্রুত ধোঁয়াশা মুক্ত করার দায়, সিআরবি রক্ষা আন্দোলন তথা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের উপর বর্তায়। তাঁরা দ্রুত নেত্রীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে নেত্রীর সবুজ বা লাল সংকেত জানিয়ে দিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা থেকে চট্টগ্রামের মানুষকে মুক্তি দেবেন, এই বিশ্বাস আমরা রাখতেই পারি।

প্রচুর সময়ক্ষেপ হয়েছে, দয়া করে আর হলুদ কার্ড ঝুলিয়ে রাখবেন না। নেত্রীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ রাখবেন না। পূর্ণ বিশ্বাস আছে, নেত্রী কখনো চট্টগ্রামবাসীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন না। যতদূর চিনি, তিনি তা করতে পারেন না, কখনো না।

মোস্তফা কামাল পাশা, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত