ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

‘বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা রাখতে চাই’

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ২১:১৬  
আপডেট :
 ১৩ নভেম্বর ২০২১, ২১:১৮

‘বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা রাখতে চাই’

রেইনট্রি হোটেলের মামলায় বিচারক বলেছেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশ যেন মামলা না নেয়। কারণ, ৭২ ঘণ্টা পর মেডিকেল টেস্ট করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। তাতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।

এখানে বিচারকের শেষ কথাটির সঙ্গে আমি একমত। ৭২ ঘণ্টা পর মেডিকেল টেস্ট করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। তাতে মামলা প্রমাণ করা আসলেই দুরূহ হয়ে পড়ে। কিন্তু এই দুরূহ কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করাই তদন্ত কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং বিচার কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব। সুতরাং ‘ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশ যেন মামলা না নেয়,’ বিচারকের এই বক্তব্যটি অগ্রহণযোগ্য।

বিচারক বলেছেন, ‘সেদিন ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হোটেলে তারা অভিযুক্তদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় শয্যাসঙ্গী হন। সেখানে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হলেও জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।’

তারমানে ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ায় ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়া সত্ত্বেও ভিকটিম এবং অভিযুক্তদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার বিষয়টি আদালতের সামনে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই এধরনের অপরাধ আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব। সুতরাং বিচারকের নিজের বক্তব্য অনুযায়ী তার ‘৭২ ঘণ্টা পর পুলিশ যেন মামলা না নেয়’ মর্মে যে নির্দেশনা তা অগ্রহণযোগ্য।

‘আগে থেকেই ভিকটিমরা ফিজিক্যাল রিলেশনে অভ্যস্ত ছিল। তারা তাদের বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশনে যান,’ –জজের এই বক্তব্যটি মারাত্মক, আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য। তিনি অপরাধের দায় ভিকটিম নারীদের উপর চাপিয়েছেন এবং তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার অস্বীকার করেছেন। তার এই বক্তব্য গ্রহণ করা হলে বিবাহিত নারীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বামীদের দ্বারা দিনের পর দিন ধর্ষিত হলে তারা বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন না। আধুনিক সভ্যতা এবং বিদ্যমান আইন অনুযায়ী স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করা ধর্ষণ। একজন যৌনকর্মীকেও তার অনিচ্ছায় আপনি জোর করতে পারবেন না। এটা রেপ। জজের বক্তব্য অনুযায়ী পেশাদার যৌনকর্মীদের উপর ধর্ষণের মতো জুলুম করা জায়েজ। কারণ যৌনকর্মীরা ফিজিকাল রিলেশনে অভ্যস্ত।

আলোচিত রেইনট্রি মামলায় ভিকটিম স্বেচ্ছায় অভিযুক্তদের সঙ্গে যৌনমিলনে গেছেন, নাকি বলপূর্বক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তা স্বাক্ষী-প্রমাণের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান নাও হতে পারে। কিন্তু লক্ষণীয়, এই মামলায় আসামি ছিলেন পাঁচজন। কোনো নারী সম্মতিতে তার বিশ্বস্ত পার্টনারের সঙ্গে মিলিত হতে পারেন; পাঁচজনের সঙ্গে নয়। পাঁচজন প্রত্যক্ষভাবে ইনভলভ্ হলে এটি গ্যাঙরেপ– যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

আদালত যখন বলেছেন, ঘটনার দুই ভিকটিম স্বেচ্ছায় সেখানে ফিজিক্যাল রিলেশনে গেছেন, তাহলে একটি গ্যাঙকে কিভাবে দায়মুক্তি দেওয়া যায়? ঘটনায় কার ভূমিকা কিরকম ছিল তা বিস্তারিত না জেনে এ বিষয়ে নিশ্চিত অভিমত দিচ্ছিনা। তবে বিচারক যেমন বলেছেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে এ মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন। … ৩৮ দিন পর এসে তারা বললো ‘রেপড হয়েছি’, বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তার বিবেচনা করা উচিৎ ছিল;’ অনুরূপ ভাষায় ‘বিচারক প্রভাবিত হয়ে এ মামলায় রায় দিয়েছেন’ মর্মে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টির কারণ ঘটেছে। বিচারক নিজেই তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে সন্দেহ সৃষ্টির কারণ তৈরি করে দিয়েছেন। এরকম জজ থাকলে বিচারবিভাগের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়। তাই এ ঘটনায় সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে গেছে। বিচারবিভাগের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। মানুষের ভরসার শেষ ঠিকানা অটুট থাকুক। (পুলক ঘটকের ফেসবুক থেকে)

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত