ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবার কারণ নাই!

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৩৭

নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবার কারণ নাই!

আহার-মৈথুন-মল-মূত্র ত্যাগ, হিংসা, সুখের প্রচেষ্টা করা, প্রাণীর বৈশিষ্ট্য। মানুষ নামের প্রাণীটি নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী দাবি করার পেছনে আমার কাছে অকাট্য নিরঙ্কুশ কোনো যুক্তি মনে ধরেনি।

মানুষ নামের প্রাণীটি যা যা আবিস্কার যুক্তি মত প্রকাশ করেছে, সবকিছু নিজেরই সুরক্ষা ভোগের নিমিত্তে করেছে। প্রকৃতির কিংবা অন্য প্রাণীর সুরক্ষা বলয় নিয়ে মানুষ কখনও চিন্তা করেনি। প্রখর বুদ্ধিমত্তা শুধু মানুষের আছে, তা কিন্তু ঠিক না। অন্য প্রাণীরও আছে। বিজ্ঞানীরা সবেমাত্র মৌমাছির সুখ-দুঃখের কালচক্র বের করতে পেরেছেন। পৃথিবীতে অনাবিষ্কৃত অনাবাসী অনেক প্রাণী রয়েছে, যাদের পৃথিবী ধ্বংসের আগে পর্যন্ত কালচক্র বের করতে পারবেন না। এটা সেটার দোহাই দিয়ে মানুষ ভোগের উপাচার সাজিয়ে অন্য প্রাণীর অধিকার ন্যায়গুলো কেড়ে নেন। ভোগ সহজে না পেলে চিরতরে ধ্বংস করতেও পিছপা হয় না। মাংসাশী প্রাণী আহার মৈথুন প্রজন্ম রক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও মানুষ নামের প্রাণীটি তাতেও সন্তুষ্ট নয়। সে ‘আরো আরো পেতে চাই’ অতৃপ্ত হৃদয়ে মরণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

মাঝে মাঝে স্বর্গের লোভে সে কিছুটা সময় টেস্টোস্টেরন হরমোন লেবেল মেপে সৎ থাকার চেষ্টা করে। বেড়ে গেলে আবারও শূঁয়োর কুকুর পাঁঠা হয়ে চরিত্র মর্যাদানাশ করে নরক ভুলে সবকিছু একাকার করে দেয়। জৈবিক হরমোনের লেভেল মেপে মৈথুন সুখে শূকরী কুকুরী কামড়াকামড়ি করে রক্তাক্ত করে। নিজের পছন্দসই সাথী বানিয়ে নেয়। মানুষ নামের মর্দা-মাদি প্রাণীটিও বেশ্যাগমন করে, পুরুষবেশ্যা পোষে। চুপিচুপি যে যার মতোন করে মৈথুনপরায়ণ হয়ে ওঠে।

পশুমনে বিচারক, কোর্ট, উকিল পুলিশ ডাক্তার ব্যারিস্টার মানবাধিকার সংবিধান নাই, তাতে কী? নিজের স্বভাবের বিন্দুবৎ পরিবর্তন করে না। ওদের শক্তি একমাত্র বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ব্যবহার করে। খাবার, যৌনতার বিনিময়ে ঘুষ উপহার পশু সমাজে নাই। সিংহ হতে কীট পতঙ্গ নিজের কাজ নিজেরই করে নিতে হয়। মানুষ নামের প্রাণীটির চিত্র-বিচিত্র স্বভাব মুহূর্তে ভোল পাল্টে নেয়া বহুরূপী কামান মাইন ট্যাঙ্ক টর্পেডো যুদ্ধবিমান মেশিনগান পারমাণবিক হাইড্রোজেন ফিউশন ধূর্তামি ভণ্ডামি অন্য প্রাণীরা বুঝতে পারে না বলেই মানুষ নিজেদের মহামানব সর্বশ্রেষ্ঠ জীব দাবি করে এবং পৃথিবীতে সুরক্ষিত থাকছে। উদোম যৌবন ফুরিয়ে গেলে শূঁকর কুকুর বাঘ সিংহ সংসারের বোঝা না হয়ে অগস্ত্য যাত্রা করে নীরবে হারিয়ে যায়। মানুষ নামের প্রাণীটি পরিবার সংসারের বোঝা হয়ে সঙ সেজে নানান রঙে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যায়।

প্রচণ্ড ভীতু চাহনি নিয়ে পৃথিবীতে থেকে যেতে যায়। মৃত্যুর ধ্রুব সুন্দর হাসিমুখে আলিঙ্গন করে পশু পাখি কীট পতঙ্গ নিজেদের সঁপে দিতে পারলেও মানুষ নামের প্রাণীটি সারাজীবন পৃথিবীতে তার কী কী কাজ ছিলো সে কী কী করেছে? হিসাব মেলাতে গিয়ে থরহরি কাঁপুনিতে হাসি দূরে থাক; পায়খানা পেশাব করে পরিবারের বারোটা বাজিয়ে দেয়।

মানুষ নামের প্রাণীটি যতোক্ষণ নিজেদের শূঁকর কুকুর বাঘ সিংহ নেকড়ে ধূর্ত শেয়াল সরীসৃপ হতে নিজেদের আলাদা করতে না পারবে; ততোক্ষণ নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব,পণ্ডিত মহাজ্ঞানী নোবেল বিজয়ী, মহামানব, সাধু বৈরাগী সুফি সম্রাট দরবেশ মহাজন বৈষ্ণব বিচারক বিশেষজ্ঞ ভাবার কোনো কারণ নাই।

কবির ভাষায়- ‘মানুষের চেয়ে কুৎসিত বহুরূপী মনের একটি প্রাণী ও নাই।’

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক,বাংলাদেশ পুলিশ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত