ঢাকা, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

কিশোর গ্যাং যেভাবে তৈরি হয়, যা করে

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:০৬

কিশোর গ্যাং যেভাবে তৈরি হয়, যা করে

সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে একাধিক খুনের ঘটনার পর এ নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সন্দেহে সপ্তাহ দেড়েক আগে শুধু ঢাকা থেকেই একদিনে শতাধিক কিশোরকে আটকের পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও চালানো হচ্ছে অভিযান।

এমতাবস্থায় অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাবে তৈরি হচ্ছে এসব গ্যাং। আর কিইবা করে তারা?

এরই জবাব দিয়েছেন তামিম আহমেদ (ছদ্মনাম) নামের এক কিশোর। যিনি নিজ এলাকায় সমবয়সীদের নিয়ে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছিলেন।

তামিমের সাথে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। তামিম জানায় কিভাবে তিনি এর শুরু করেছিলেন। তারপর কিভাবে তাদের এই গ্যাংগ্রুপ বেড়ে ওঠে। আর কি কি কার্যক্রম ছিলো।

তামিম বলেন, শুরুতে মূলত অন্যদের হামলা থেকে নিজেদের প্রটেক্ট করার জন্যই আমরা কয়েকজন বন্ধু একত্র হই। পরে বেশ বড় একটি গ্যাং তৈরি হয় আমাদের। আমরা দেখলাম, এটি একটি ট্রেন্ড। সবাই গুন্ডামি করছে, গ্যাং বানাচ্ছে, দেয়ালে দেয়ালে স্প্রে দিয়ে গ্যাংয়ের নাম লিখছে। তখন আমরাও শুরু করলাম। ৫/৬টি গাড়ি নিয়ে একসঙ্গে মুভ করতাম। একসময় বেশ বড় একটি গ্যাং তৈরি হয় আমাদের।

তবে গ্যাং তৈরি হওয়ার পর অন্য এলাকার গ্যাংগ্রুপগুলোর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় তামিমদের গ্রুপের। অনেক সময় তুচ্ছ কারণেও ঘটত মারামারির ঘটনা। এক এলাকার ছেলে অন্য এলাকায় গেলেই মারধরের ঘটনা ঘটত। কাউকে গালি দিলে, যথাযথ সম্মান না দেখালে, এমনকি বাঁকা চোখে তাকানোর কারণেও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মেয়েলি বিষয় এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব থেকেও অসংখ্য মারামারি হয়েছে।

তামিম বলেন, আমাদের গ্যাংয়ে একসময় কয়েকটি আর্মস ক্যারি (অস্ত্র বহন) করা শুরু করি আমরা। এসব দিয়ে মাঝে মধ্যে ফাঁকা ফায়ারিং করা হতো। তবে আমরা কাউকে গুলি করিনি কখনো।

অস্ত্র আসার কিছুদিনের মধ্যেই তামিমদের গ্রুপে মাদক ঢুকে পড়ে। এ বিষয়ে তামিম বলেন, আমাদের গ্যাংয়ের কয়েকজনের মধ্যে একসময় লোভ চলে আসে। গ্রুপটাকে কাজে লাগিয়ে টাকা আদায়ের ধান্দা শুরু করে কেউ কেউ। এক পর্যায়ে ছিনতাইও শুরু হয়। মাদক এ সময় ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায়।

এরপর পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে দু-একজনকে বিভিন্ন অপরাধে জেল খাটতে হয়, একজন মারাও যায়। এ ধরণের পরিস্থিতিতে নিজের তৈরি গ্যাংগ্রুপ থেকে বেড়িয়ে আসেন তামিম।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে অনেক কিশোর গ্যাংয়ের নাম চোখে পড়বে। ধানমন্ডি লেকের পাশে কয়েকটি সড়কে ঘুরলে এরকম অন্তত ১৫টি কিশোর গ্যাংয়ের নাম দেখতে পাওয়া যাবে বলে জানান তামিম। মূলত স্কুলে পড়তে গিয়ে কিংবা এলাকায় আড্ডা দিতে গিয়ে শুরুতে মজার ছলে এসব গ্রুপ তৈরি হলেও পরে একসময় মাদক, অস্ত্র এমনকি খুনোখুনিতেও জড়িয়ে পড়ে তারা।

কিশোর গ্যাং কেনো তৈরি হচ্ছে?

সমাজবিজ্ঞানী রাশেদা ইরশাদ নাসির মনে করেন, মূলত দুটি কারণে কিশোররা এসব গ্যাং সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়ছে।

প্রথমত- মাদক, অস্ত্রের দাপটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত- এখনকার শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না। ফলে কিশোরদের কেউ কেউ যখন বন্ধুদের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংগুলোতে ঢুকছে এবং মাদক ও অস্ত্রের জোগান সহজেই পেয়ে যাচ্ছে তখন তার প্রলুব্ধ হওয়া এবং অপরাধপ্রবণ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

তিনি মনে করেন, একদিকে সমাজে অপরাধী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।

পুলিশের পদক্ষেপ

গত একমাসে কিশোর গ্যাং কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি অপরাধ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।

গাজীপুরে এক কিশোর হত্যার ঘটনায় ‘ভাই-ব্রাদার’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের ৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‌্যাব। অন্যদিকে ঢাকায় শুরু হয় কিশোর গ্যাং বিরোধী অভিযান।

একদিনেই অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় শতাধিক কিশোরকে। এর মধ্যে শুধু হাতিরঝিল থানাতেই আটক করা হয় ৮৮ জনকে। যদিও পরে অপরাধ খুঁজে না পাওয়ায় ৮০ জনকেই ছেড়ে দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে থানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কিশোর গ্যাং বিরোধী এ ধরনের অভিযানে ঢালাওভাবে কিশোরদের আটকের ঘটনার সমালোচনাও হচ্ছে।

রাশেদা ইরশাদ নাসির জানান, যেকোনো কিশোরকে আটক করে থানা হাজতে আনার আগে সে অপরাধী কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা উচিত পুলিশের।

তিনি বলেন, কোনো নিরপরাধ কিশোর কিংবা তার পরিবার যেন ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে, হয়রানির শিকার না হয়। নিরপরাধ কোনো কিশোরকে হুট করে সন্দেহের ভিত্তিতে আটক করা হলেও তা ওই কিশোরকে ট্রমার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। সে যদি তাৎক্ষণিক ছাড়াও পায়, এরপরও তার ওপর একটা প্রভাব পড়তে পারে। সেই সঙ্গে ওই পরিবারটিও সামাজিকভাবে হেয় হতে পারে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত