ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১২)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:১৯  
আপডেট :
 ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩১

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১২)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -১২)

চেষ্টা করলাম মূসা সাহেবকে যেকোনোভাবে রাখার। কিন্তু মূসা সাহেবও রাজি হননি। বাবুল সাহেবও সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিলেন। পরে চেষ্টা করি সম্পাদক ছাড়াও মূসা সাহেবকে সম্মানজনক কোনোভাবে রাখা যায় কিনা। তাও হলো না। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো শনিবার মূসা সাহেব যুগান্তর থেকে বিদায় নেবেন। অফিসে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হবে। মূসা সাহেব ও চেয়েছিলেন সবাইকে ভালভাবে বলে যাবেন। তার কথামতোই বিদায় পর্ব সমাপ্ত হলো। এভাবেই যুগান্তরের দুঃসময়ের কাণ্ডারি মূসা সাহেব চলে গেলেন। উল্লেখ্য, তৃতীয় দফা পদত্যাগপত্রও হয়তো গৃহীত হতো না। আরও অপেক্ষা করতেন বাবুল সাহেব। আগে হয়তো সম্পাদক ঠিক করতেন পরে সুযোগ বুঝে গ্রহণ করতেন। কিন্তু এবার তার সম্পাদক ঠিক করাই আছে। তাই আমার মনে হয়েছে সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি। এখানে বলে রাখি মূসা সাহেব যুগান্তরে যোগ দেয়ার কয়েক মাস পরই ভোরের কাগজ ছাড়েন আবেদ সাহেব। নতুন কাগজ বের করার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে তার বাবুল সাহেবের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়। মূসা সাহেবের পদত্যাগ আর আবেদ সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ কাকতালীয়ভাবে মিলে গেলো। মুসা সাহেবের পদত্যাগের দিনই জানিয়ে দিলেন, আবেদ সাহেবকে আনবেন। আগে আমাকে না জানালেও মূসা সাহেবের পদত্যাগপত্র গ্রহণের দিন আমাকে আবেদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে বললেন। রাতে ফোনে কথা বললাম আবেদ সাহেবের সঙ্গে। ঠিক হলো পরদিন সকালে হোটেল শেরাটনে বসব। যথারীতি আবেদ সাহেবের সঙ্গে আলোচনা হলো। বেতন-ভাতা ইত্যাদি নিয়ে কথা হলো। শেষ করে গেলাম বাবুল সাহেবের অফিসে। জানালাম সব। পরদিন আবার সেনাকল্যাণ ভবনে বাবুল সাহেব, আবেদ সাহেব, সালমা ইসলাম এবং আমি। সবকিছু ঠিকঠাক করে নিয়োগপত্র দেয়া হলো। যোগদান শনিবার। একই দিন মূসা সাহেবের বিদায় সংবর্ধনা। বিষয়টি মোটামুটি গোপনই ছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর গোপন রইলো না। কানাঘুষা থেকে সংবাদপত্রে খবর হয়। আবেদ সাহেবের সাক্ষাৎকারও মিডিয়ায় প্রচার হয়। তিনি জানিয়ে দেন যে, সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবারই যুগান্তরে সম্পাদক হিসাবে যোগদান করবেন। মূসা সাহেবের পদত্যাগপত্র তখন গৃহীত হয়ে গেছে আর আবেদ সাহেব সম্পাদক হয়েছেন। শনিবার একজনের বিদায় আরেকজনের যোগদান। বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হলো ১১টায়। আর যোগদান দুপুর ১টায়। বিদায় অনুষ্ঠানে মূসা সাহেব অভিভাবকসুলভ নির্দেশনা ও তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বক্তব্য রাখেন। আবেদ সাহেব এরই মধ্যে বাবুল সাহেবের অফিসে এসে পৌঁছেন। মূসা সাহেব বিদায় নিলে তিনি আবেদ সাহেবকে নিয়ে আসবেন আমাকে এভাবেই জানানো হলো। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মূসা সাহেবকে বিদায় দিলাম। তিনি চলে যাওয়ার পরপরই আবেদ সাহেবকে নিয়ে এলেন বাবুল সাহেব।

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক হিসেবে যোগদানের পর আবেদ খান ও আমি ঢাকা বহুমুখী হকার্স সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করি

যমুনা গ্র“প আর যুগান্তর অফিস তখন কাছাকাছি ছিল। আবার বৈঠক। সিনিয়র সাংবাদিক, কর্মচারী সবাই আছেন। বাবুল সাহেব বক্তব্য রাখলেন। আবেদ সাহেব বললেন, অনেক আশাবাদের কথা। দেখালেন অনেক স্বপ্ন। এবার যুগান্তরের কাণ্ডারি আমাদের আবেদ খান। আগেই বলেছি তার সঙ্গে ইত্তেফাকে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ইত্তেফাকে তিনি চিফ রিপোর্টার ছিলেন। চিফ সাব-এডিটর ছিলেন। সবশেষে সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাপরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ওপেন সিক্রেট’ কলাম লিখেছেন। এ কলামে তৎকালীন সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা হতো। একসময় তিনি বিটিভি’র জনপ্রিয় উপস্থাপকও ছিলেন। নামকরা কলামিস্ট। সেই আবেদ খান দৈনিক যুগান্তরের তৃতীয় সম্পাদক। আমারও সম্পাদক। নতুন করে আবার যাত্রা শুরু। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হলো। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অসন্তুষ্টির সুর। আমি জানি না আবেদ সাহেব যুগান্তর কর্তৃপক্ষকে কী স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষের কথায় মনে হয়েছে তিনি যা বলেছিলেন, যেভাবে বলেছিলেন যুগান্তর সেভাবে চলছে না। ব্যবসা, প্রচার বাড়ছে না। অবশ্য সে সময় সংবাদপত্র শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতিও ছিল প্রতিকূল। আবেদ সাহেব চেষ্টা করেছেন, আমরাও সবাই মিলে কাজ করছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাক্সিক্ষত ফল আসছে না। এমন অনুযোগের মধ্যে চলতে থাকে কিছুদিন। বারবার সম্পাদক বদল পত্রিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই যুগান্তরের সাংবাদিক কর্মচারীরা চান আর সম্পাদক বদল নয়। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেল অন্যভাবে।

এক সন্ধ্যায় হঠাৎ বাবুল সাহেব আমাকে ফোন করে বললেন, সারওয়ার সাহেবকে আবার আনলে কেমন হয়? আমি বললাম, তিনি আসবেন? জবাবে বললেন, কাল সকালে আমার অফিসে আসেন। কথা আছে। খবরটা শুনে আমি নিজেই চমকে গেলাম। বাবুল সাহেব কথাটা এমনিই বলেছেন, না কোনো যোগাযোগের ভিত্তিতে? কিছু না থাকলে তো এভাবে তার বলার কথা নয়। আসলে আমরা যতই বলে আসছি আর সম্পাদক পরিবর্তন নয়, কর্তৃপক্ষ কিন্তু মনে মনে তা গ্রহণ করে নেয়নি। যদি গ্রহণ করতো তাহলে হঠাৎ করে বাবুল সাহেব সারওয়ার সাহেবের কথা বলতেন না। তারা নিজস্বভাবে হয়তো নতুন সম্পাদক আনার চেষ্টা করে থাকতে পারেন। এমন নানা কথা মাথায় ঘুরপাকের মধ্যেই সকালে গেলাম বাবুল সাহেবের অফিসে। তিনি আছেন। আর যথারীতি ছেলে শামীম ইসলাম। বাবুল সাহেব তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, তাড়াতাড়ি সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দেখেন আসতে পারে। জানতে চাইলাম কীভাবে বুঝলেন? জবাব পেলাম, কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে। তবে সরাসরি কথা হয়নি। এখন কথাটা আমারই বলতে হবে। আমার সাথে অনেকদিন সারওয়ার সাহেবের তেমন যোগাযোগ ছিল না। মাঝেমধ্যে প্রেসক্লাবে দেখা হলে সালাম বিনিময় ছাড়া বেশি কথা হতো না। বাবুল সাহেবের কথামতো রাতেই সারওয়ার সাহেবকে ফোন করলাম। রিসিভ করেই বললেন, কেমন আছো শাহজাহান? তোমার তো কোনো খবরই নেই। উত্তর দিলাম, আপনি ব্যস্ত থাকেন তাই ডিস্টার্ব করি না। আরও কিছু কথার পর বললাম, সারওয়ার ভাই আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে। আপনি যদি সময় দেন তাহলে বাসায় আসব।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত