ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১৪)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:২৮

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১৪)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -১৪)

এরমধ্যে এসে যায় ওয়ান ইলেভেন। সেনা তত্ত্বাবধানে ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার ক্ষমতায় আসে। শুরু হয় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। কর্তৃপক্ষের নীতি অনুযায়ী যুগান্তর ওয়ান ইলেভেন সরকারের পূর্ণ সমর্থক। প্রতিদিনই এ সরকারের কার্যক্রমকে তুলে ধরে সংবাদ ছাপা হয়। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হলে সমর্থন জানানো হয়। বিভিন্ন দুর্নীতির সংবাদও ছাপা হতে থাকে। এমন অবস্থায় একদিন রাত ৮টার দিকে বাবুল সাহেব ফোন করলেন। জানতে চাইলেন, দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের কোনো সংবাদ আছে কিনা। আমি বললাম না। তখন তিনি বললেন, হাসিনা-খালেদাসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র বড় নেতাদের ছবি দিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় একটি নিউজ দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে অতীতের দুর্নীতির মামলাসহ অন্যান্য দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সংবাদ দিতে হবে। বুঝাতে হবে তাদের কারণেই দেশের দুরাবস্থা। এমনিতেই বাবুল সাহেব প্রতিদিন একবার সকালে এবং রাতে ফোন করতেন। খবর জানতে চাইতেন। আমি মনে করেছি হয়তো এমনি নতুন কোনো খবর আছে কি-না জানতে ফোন করেছেন। কিন্তু তিনি যে এমনভাবে একটি খবর দিতে বলবেন ধারণা ছিল না। আমি সে-সময় নিউজ রুমে সারওয়ার সাহেবের সামনেই বসা ছিলাম। সাথে সাইফুল আলমও। বার্তা সম্পাদক তখন অরুণ দে। এখন যায়যায়দিনে কাজ করেন। আমি কোনো কথা না বলে সারওয়ার সাহেবকে ফোন দিলাম।

সারওয়ার সাহেব বললেন, এভাবে ঢালাও লেখা সম্ভব নয়। কিন্তু বাবুল সাহেব মানছেন না। তারপর কথা বলল সাইফুল। বোঝাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু হলো না। টেলিফোন ঘুরে আবার এলো আমার হতে। বোঝাবার চেষ্টা করলাম। কিছুই শুনছেন না তিনি। বললেন, আমি যেভাবে বলি সেভাবে দিতে হবে। তখন পত্রিকার ডামি হয়ে গেছে। বললাম, আজ থাকুক। কাল আপনার সাথে আলোচনা করে কীভাবে কী করতে হবে ঠিক করা যাবে। কিন্তু তাকে বোঝানো গেল না। অগত্যা নিউজ দিতেই হলো। বাবুল সাহেব বললেও শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ছবি ও তাদের নিয়ে কোনো লেখা দেয়া হলো না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের ১৬ নেতার ছবি দিয়ে নিউজ গেল। শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার ছবি না গেলেও দুর্নীতির অভিযোগে তাদের নাম গেল। ২০০৭ সালের ১ ফেব্র“য়ারি যুগান্তরের প্রথম পৃষ্ঠায় ডান পাশে তিন কলাম বক্স নিউজ হিসেবে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। যার শিরোনাম ছিল, ‘রাজনীতিবিদরা দুর্নীতির মামলায় পার পেয়ে যান।’ মাঝে সিঙ্গেল কলামে রঙিন শিরোনাম দিয়ে ছাপা হয় ‘দুর্নীতির খবর ছাপালেই মামলা’। ১৬ জন রাজনৈতিক নেতার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৮জন ও বিএনপির ৮জন সিনিয়র নেতার ছবি ছাপা হয়। শত চেষ্টা করেও আমরা সেদিন এই সংবাদ ছাপানো থেকে বাবুল সাহেবকে নিবৃত্ত করতে পারিনি। সেদিনই প্রথম মনে হলো, সম্পাদকসহ সাংবাদিকরা কত অসহায়।

সাংবাদিকতা জীবনে কোনোদিন এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি। এই প্রথম এক বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম। মহান পেশা সাংবাদিকতা, স্বাধীন পেশা সাংবাদিকতা, আগে কত যে শুনেছি। সেদিন আমার কাছে সবই ভুল মনে হয়েছে। একটি কথাই যেন সত্য, সংবাদপত্রে চাকরি করতে হলে মালিকের কথাই শেষ কথা। যুগান্তরে চাকরিকালে এ ধরণের আরো কয়েকটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

ওয়ান ইলেভেন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান তখন জোরে সোরে। রাজনীতিবিদদের ধর পাকড়ের পর তীর ছুটে গেল ব্যবসায়ীদের দিকে। প্রথম দফায় সম্পদের বিবরণী দেয়ার জন্য তালিকা প্রকাশ করা হলো। আর সে তালিকায়ই নাম এলো যমুনা গ্র“পের চেয়ারম্যান ও যুগান্তরের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুলের। আমাদের জানা ছিল বাবুল সাহেবের সঙ্গে দেশ পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তৎকালীন কোনো কোনো উর্ধ্বতন কর্তার ভাল সখ্য ছিল। যতটুকু জেনেছিলাম এ সখ্যের কারণেই রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি নিয়ে আমাদের নিউজ করতে বলা হয়। কিন্তু তালিকায় নাম আসার পর মনে হলো তাকে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। এটা আমরা বুঝলেও তিনি বুঝলেন না। তালিকা প্রকাশের পরও তিনি কয়েকদিন প্রকাশ্যে ছিলেন। আমাদের বলেছিলেন কোনো সমস্যা হবে না। দুদুকে হাজির হয়ে সম্পদের হিসাব দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, তালিকাভূক্তদের গ্রেফতার শুরু করলে তিনি পলাতক থাকেন। পলাতক অবস্থার মধ্যেই এক রাতে আবার আমাকে ফোন। জানালেন কাল তিনি সেগুনবাগিচায় দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) কার্যালয়ে যাবেন। সম্পদের হিসাব দেবেন। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করেছেন। তখনও কোনো ব্যবসায়ী সম্পদের হিসাব বিবরণী দেননি। তালিকার সবাই পলাতক। বাবুল সাহেবই প্রথম হিসাব দিতে যাচ্ছেন শুনে বললাম, আপনি নিজে যাবেন, না উকিলের মাধ্যমে দিবেন? তিনি বললেন, আমি নিজেই যাব। আমাকে বললেন, অফিসের কয়েকজনকে জানাতে। তারা যেন দুদক অফিসে থাকেন। আর আমি যেন থাকি একটি নির্দিষ্ট জায়গায়। সেখান থেকে একসঙ্গে আসব। কথামতো পরদিন সকালে আমি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছি। আমি গাড়িতেই বসি। কিছুক্ষণ পর বাবুল সাহেব একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে এসে থামলেন। আমার গাড়িতে থেকে আমি নেমে তার গাড়িতে উঠলাম। কথা হলো।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত