ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

১৫ আগস্ট: ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন হোক

  অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২০, ১৮:৩০  
আপডেট :
 ০৪ আগস্ট ২০২০, ১৮:৪৪

১৫ আগস্ট: ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন হোক

শোকের মাসে স্বাভাবিক কারণেই বিচ্ছিন্ন অনেক ঘটনা মনে পড়ছে। মনটা খুব বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসে, সম্মান করে এবং যারা মনে করে যে, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, তাদের মনে হয়তো নানা ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই।

আমার বারবার একটা বিষয় নিয়েই ভাবছি যে, ১৫ আগস্ট যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল তার পেছনে যারা ছিল, তাদের মুখোশটা কেন খুলে দেয়া হচ্ছে না? জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার নিশ্চিত করেছেন। যারা এখনও সাজা এড়িয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছে, সেখান থেকে তাদের নিয়ে আসার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। নিশ্চয়ই তারাও শাস্তি পাবে। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে আমার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, সেটা হলো যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিবেশ যারা সৃষ্টি করলো, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য কারিগর সেই ব্যক্তিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল। শুধু যারা গুলিটা চালিয়েছে বা সাধারণভাবে যারা ষড়যন্ত্র করেছে বলে আমরা জেনেছি, তাদেরকে সাধারণ নিয়মে বিভিন্ন সাক্ষী সাবুদ নিয়ে অনেক কঠিন পথে বিচার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল, তাদেরকে এই সাধারণ আইনের মাধ্যমে যেভাবে বিচার করা হলে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকবে।

আমি নিজে মনে করি যে, এই নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের জন্য একটি কমিটি বা কমিশন করা দরকার। এটাকে তদন্ত কমিটি বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংই কমিশন যেটাই বলি না কেন এই কমিটির মূল দায়িত্ব হবে, বিভিন্ন স্তরের লোক নিয়ে তদন্ত করা এবং কারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে ছিল তা জাতির সামনে উন্মোচন করা। এই কাজে ঐতিহাসিক মুনতাসসীর মামুন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ নেতৃত্ব দিতে পারেন। এর সাথে সাবেক বিচারক মানিক সাহেব, যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় ছিলেন, তিনিও থাকতে পারেন। এদের সাথে অন্যান্য এজেন্সি যেমন এনএসআই আছে, ডিবি আছে, তাদের সদস্যদের নেওয়া যেতে পারে। তারা সবাই মিলে বিভিন্নভাবে এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করতে পারবেন।

একটি জিনিস আমার কাছে পরিষ্কার যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে আসল ষড়যন্ত্রকারী অথবা মূল কাজটি যারা করেছিল, তারা হচ্ছে আমলারা। আমার বক্তব্যের প্রমাণ স্বরূপ আমি হাজির করতে চাই যে, মাহাবুবুল আলম চাষী একজন ঝানু আমলা ছিল। এই মাহাবুবুল আলম চাষী পেছন থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য সর্বোতভাবে চেষ্টা করেছে। আমার ধারণা, বিপথগামী কিছু আর্মি, রাজনৈতিক নেতা, আমলাসহ বিভিন্ন মহলের বিভিন্নজনকে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সংঘবদ্ধ করেছে। তার সাথে একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী আমলা ছিল হোসেন আলী। যিনি ছিলেন কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধকালীন ডেপুটি হাই কমিশনার। সবসময় আমি দেখেছি যেকোনো ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আমলারা এমনভাবে থাকে যে ধরা ছোঁয়ার ভেতরে তারা থাকে না। উঁচুদরের আমলারা এই কাজগুলো করেন।

এদেরকে যদি ধরা হয় তাহলেই বের হবে জিয়াউর রহমানসহ অন্যরা ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে কে কি ভূমিকা পালন করেছিল। মাহবুবুল আলম চাষী যে খুনী মোশতাককে উদ্বুদ্ধ করেছে এর কিছু কিছু ইঙ্গিত বিভিন্ন জন দিয়েছে। এভাবে অনেকেই ওই ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন। যখনই দেশকে সংবিধান থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, তখন মূল নায়ক থাকে এই সিভিল আমলারা। কিন্তু এরা কখনই সামনে আসে না। যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকে তারাই এই কলকাঠিটা নাড়ে।

একটা গানের কথা আছে যে, ‘তোর মিষ্টি কথায় ভুলি না’। কিন্তু আমাদের সবার চরিত্র হচ্ছে এর উল্টোটা। আমরা সবাই কম বেশি মিষ্টি কথায় ভুলি। আমলাদের কথাবার্তা এত মিষ্টি এবং এত ভালো যে সবাই তাদের দ্বারা ভুল পথে চলে। ফলে এই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়।

আমরা অনেকেই পত্রিকায় দেখি রাজণীতিবিদরা বিদেশে বাড়ি গাড়ি করেছে। কিন্তু আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো যে, বাস্তবক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের কারোরই সেভাবে বাড়ি ঘর বিদেশে নেই। যাদের বাড়ি ঘর আছে, তারা উঁচু পর্যায়ের আমলা। যারা মোটামুটি দেশে একা বসে কাজ করেন। আর তাদের পরিবারকে পাঠিয়ে দেন বিদেশে। তাদের বাড়িঘর ছেলেমেয়ে সব বিদেশে। তারা যে বেতন পায়, যেই বেতনে অত দামি বাড়িই বা কেনে কীভাব আর ছেলে মেয়েই বা কীভাবে চলে। আমার মনে হয় এগুলো ভালো করে দেখা উচিৎ। তাহলে অন্তত পক্ষে ভবিষ্যতে আমাদের দেশ বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।

আমি মনে করি যে, বঙ্গবন্ধুর আসল খুনি যারা তাদের খুজে বের করতে হবে। হয়তো অনেকে মারা গেছে। কিন্তু জীবিতও কিন্তু আছে, যারা সেদিন সমস্ত ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল। এই ধরনের একটি গবেষণা বা তদন্ত যদি করা হয়, তাহলেই বঙ্গবন্ধুর আসল খুনিদের পরিচয় দেশবাসী জানতে পারবে। নাহলে শুধু অল্প কয়েকজনের নামই জাতি জানবে কিন্তু ইতিহাসে আসল খুনিরা বঙ্গবন্ধু হত্যার ইতিহাস থেকে বাইরে থেকে যাবে। এটা আমরা কেউ চাই না। আমাদের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, প্রকৃত যারা এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে ছিল তাদের চেনা। যেমন জাসদ বঙ্গবন্ধু হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল না। কিন্তু জনগণ যেন বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন সরকারকে ভুল বোঝে সে রকম একটা পরিবেশ তারা সৃষ্টি করেছিল। এই পার্থক্যটা আমাদের বোঝার দরকার আছে। এজন্যই আমাদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন দরকার। প্রকৃত সত্য জানতে এর বিকল্প নেই।

লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত