ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যর্থতার জন্য আরেকটি গণশুনানি দরকার’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:২৮

‘কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যর্থতার জন্য আরেকটি গণশুনানি দরকার’

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘কারচুপি ঠেকাতে’ না পারার জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাঁঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন অনেক প্রার্থী। ২৯ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতির’ পরও কেন কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছেন- সেই কথাও জানতে চান।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের শফিউর রহমান মিলনায়তনে গণশুনানিতে অংশ নিয়ে এসব কথা বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।

নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যর্থতার বিষয়ে কুমিল্লা-১০ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ৫২ বছর রাজনীতি করেছি। আমি কখনো জেল খাটিনি। এই নির্বাচনের সময় প্রথম জেল খাটতে হয়েছে। সদ্য জেল খেটে বের হয়েছি। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, আমাদের প্রতি জনসমর্থন ছিল শতভাগ। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা কিছু করতে পারেনি কেন? তা জানা দরকার।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যর্থতার জন্য আরেকটি গণশুনানি বা সমাবেশ দরকার। আমি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, ড. কামাল হোসেন, মান্না, আ স ম আবদুর রব, মোস্তফা মোহসীন মন্টুর কাছে জানতে চাই, কেন পারলাম না কিছু করতে? এই বিষয়ে একটি জবাবদিহি দরকার বলে মনে করি। আগে কেন্দ্রীয় নেতারা কেন পারলেন না তা জানার জন্য একটি সমাবেশ দরকার।

মনিরুল হক বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবরা যদি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সমাবেশ দেন। যারা প্রোগ্রাম দেবেন তারা যদি বলেন প্রোগ্রাম দেন, তাহলে প্রোগ্রাম দেবেন কে? বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া কিছুই সম্ভব হবে না। আর কিছু না করে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করুন।

গণশুনানিতে নোয়াখালী-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, আমি ড. কামালকে বিশ্বাস করি, আমি আমার দলকে বিশ্বাস করি। কিন্তু আমার মা, আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কেন কোনো কিছু করতে পারছি না? নির্বাচনে এতো বড় ডাকাতি হলো। সব জানার পরও কেন আমরা কিছু করলাম না? ৩১ ডিসেম্বর কেন খালেদার জিয়ার মুক্তির জন্য সমাবেশ করলাম না?

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ২৭ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার মওদুদ ও ড. মোশাররফের ফোনালাপের পর নির্বাচন বয়কট করা উচিত ছিল। আমি ধন্যবাদ জানাই মওদুদ আহমদকে। সেদিন আমরা নোয়াখালীর ছয়জন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে নির্বাচনের আগে অভিযোগ করে অনেক চিঠি দিয়েছেন। একটি চিঠির উত্তরও দেননি হুদা। আপনারা আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছেন। ২৭ তারিখ সমাবেশের না দেওয়ার পর ব্যারিস্টার মওদুদের কথা রাখা যেতো। তখন নির্বাচন বয়কট করার দরকার ছিল।

সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে বলেন, মাননীয় মহাসচিব বলেছেন বলে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন বলে মামলা দায়ের করেছি। ঐক্যফ্রন্টের দাওয়াত পেয়ে এখানে এসেছি। আমি সব করে যাব। সব করতে পারি। আমি সব কিছু ভুলতে পারি। কিন্তু আমার মাকে জেলে রেখে কিছু করতে বড্ড কষ্ট পাচ্ছি।

কুষ্টিয়া-২ আসনের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কাজী জাফর অংশের আহসান হাবিব লিংকন বলেন, আমরা জানি আমাদের অনেক ভুল ছিল। এখন আমরা সকল ভুল-ত্রুটি ভুলে গিয়ে ড. কামাল হোসেন ও মহাসচিবের নেতৃত্বে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং শেখ হাসিনাকে বিদায় করব।

গণশুনানিতে সাত সদস্যের বিচারক প্যানেলে প্রধান হিসেবে ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। অন্যদের মধ্যে ছিলেন ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. নুরুল আমিন বেপারী, ড. মহসিন রশীদ, ড. আনিসুর রহমান খান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ও ড. আসিফ নজরুল।

এর আগে সকালে গণশুনানিতে অংশ নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিচারক না, কোনো বিচার করার ক্ষমতা আমাদের নাই। সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে গণশুনানি জনগণের জন্য। যাতে তারা নিজ বিবেচনায় বিচার করতে পারেন। মূলত বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে। গণআদালত যেটা বলা হয়, সেটার বিচার জনগণ করবে।’

ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক আরো বলেন, ‘আমরা গণশুনানিতে এসেছি অনুষ্ঠানটা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য। এখানে যে বক্তব্যগুলো আসবে, সবার বক্তব্য রেকর্ড করা হবে। সেগুলো পরে প্রকাশ করা হবে। বই আকারেও প্রকাশ করা হবে বক্তব্যগুলো।’

ড. কামাল বলেন, ‘এবার যে নির্বাচন হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রার্থীদের অনেকে ট্রাইব্যুনালে মামলা আকারে ফাইল করেছেন। নির্বাচনে কী ঘটেছে, সেটা জনগণকে জানানো দরকার বলে মনে করছেন দলের নেতারা।’

গণফোরামের সভাপতি বলেন, ‘জনগণ, যারা ক্ষমতার মালিক হিসেবে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চেয়েছিলেন। নির্বাচনে কী ঘটেছিল, কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল, এটা তাদের জানানো উচিত।’

এই গণশুনানির মূল উদ্দেশ্য, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে লেখা আছে, জনগণই ক্ষমতার মালিক।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আজকের এই গণশুনানিতে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাস করা হয়। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় চকবাজার ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শোক প্রস্তাব উপস্থাপনের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা একইভাবে একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি। এই ফ্যাসিস্ট সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় যাওয়া।’

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকার কারণে দেশে যা ইচ্ছা তা-ই করছে সরকার। তাঁকে কোনো কিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হয় না।’

  • সর্বশেষ
  • পঠিত