ঢাকা, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

যে সমাজে নারীরাই হর্তাকর্তা

যে সমাজে নারীরাই হর্তাকর্তা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীরা এখনও নিজেদের নানা অধিকার নিয়ে সোচ্চার। কেননা সমানাধিকার, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের কথা জোরেসোরে উচ্চারণ করা হলেও এখনও পুরুষের তুলনায় সমাজে অনেক দিক দিয়েই পিছিয়ে নারীরা। কিন্তু জেনে অবাক হবেন, এ অবস্থার মধ্যেও বেশ কিছু সমাজে কিন্তু নারীদের কর্তৃত্ব বহাল। পরিবার ও সমাজে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অবশ্যই সেগুলো মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। আর এখানে পরিবারের দায়িত্ব থাকে একজন নারীর উপর এবং বংশের ধারাও নির্ধারিত হয় নারীর দিক থেকে। এসব সমাজে সম্পদের দায়িত্বও মা থেকে মেয়ের উপর বর্তায় এবং বিয়ের পর পুরুষ নারীর ঘরে চলে আসে। তবে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব থাকে পুরুষের কাঁধে। আর তারা এটাকে বিবেচনা করে ক্ষমতার সুষম বণ্টন হিসেবে দেখে থাকে। এই প্রতিবেদনে এরকমই কিছু মাতৃতান্ত্রিক সমাজের কথা তুলে ধরা হলো।

মিনানকাবাও (ইন্দোনেশিয়া)

৪০ লাখ মানুষের সম্প্রদায় মিনানকাবাও দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। প্রথাগতভাবে নাস্তিক হলেও একসময় হিন্দু এবং বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এই সম্প্রদায়। বর্তমানে তাদের অনেকে আবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এই সম্প্রদায় মনে করে, কোরআন মেনেই মাতৃতান্ত্রিক সমাজ চালু রেখেছেন তারা। কেননা কোরআনে নারীর সম্পদের মালিক হতে বা কমিউনিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

মোসুও (চীন)

মায়ের নেতৃত্বে বড় পরিবারে থাকতে অভ্যস্ত মোসু সম্প্রদায়ের লোকজন। তাদের মধ্যে ‘স্বামী’বা ‘পিতা’বলে কিছু আসলে নেই। এই সম্প্রদায় ‘ওয়াকিং ম্যারেজে’বিশ্বাসী। অর্থাৎ একজন পুরুষ চাইলে একজন নারীর বাড়িতে যেতে পারেন এবং রাতটি তার সঙ্গে কাটাতে পারেন। তবে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসবাসের বিধান নেই এই সম্প্রদায়ের মধ্যে।

খাসি (ভারত)

খাসি সম্প্রদায়ের কাছে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া মানেই উৎসবের উপলক্ষ্য। আর ছেলে সন্তান এক সাধারণ ব্যাপার। সাধারণত পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে সব সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে। কোনো দম্পতির যদি মেয়ে না থাকে, তাহলে তারা একটি কন্যা দত্তক নেয় এবং সব সম্পদ তাকে দিয়ে দেয়। মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে অনেক খাসি পুরুষ বিভিন্ন সময়ে নিজেদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলনও করেছে।

গারো (ভারত, বাংলাদেশ)

গারো সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের মায়ের পদবী গ্রহণ করে আর পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে মায়ের সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। অতীতে ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হলে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে গ্রামের ব্যাচেলর ডর্মেটরিতে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। কিন্তু খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবের কারণে পরবর্তীতে এই চর্চা বাতিল হয়ে গেছে। বর্তমানে গারো বাবা-মায়েরা সব সন্তানকে সমানভাবে দেখার চেষ্টা করেন।

চাম (দক্ষিণপূর্ব এশিয়া)

কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে বিস্তৃত চাম সম্প্রদায়ের মানুষরাও মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অনুসরণ করেন। তারা মায়ের পদবি নেয় এবং সম্পদের উত্তরাধিকারী হন মা থেকে মেয়ে সবাই। আর স্বামী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই সম্প্রদায়ের নারীদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

তবে সময়ের সাথে সাথে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসছে। জীবনধারণের অন্যান্য সুযোগের চাপ ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পুরুষদের বাঁধার মুখে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা গুরুত্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত