ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

তিন শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি: শিক্ষক বরখাস্ত

  ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৮, ১৫:৪৮  
আপডেট :
 ১৮ জুলাই ২০১৮, ১৫:৫৮

তিন শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি: শিক্ষক বরখাস্ত
অধ্যাপক রুহুল আমিন

ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এবার থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন একই বিভাগের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন শিক্ষিকা। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোর ড. জাহিদুল করিমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বুধবার সকালে শিক্ষক নেতারাসহ অভিযোগকারী শিক্ষকরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক নেতৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে আলাদা বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, এটি অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়। আসল কথা হচ্ছে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের প্রথম ব্যাচের এমএ মৌখিক পরীক্ষায় ৯ শিক্ষার্থীর ফেল নিয়ে মঙ্গলবার বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনাকালে আমি এর প্রতিবাদ করি। এর জের ধরে এ ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে। যদি আমি কাউকে যৌন হয়রানি করে থাকি তাহলে এর আগে কেন অভিযোগ করা হয়নি?

সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমিন ২০১১ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তার বাড়ি জামালপুর জেলায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইসমত আরা ভুঁইয়া ইলাসহ সহকারী অধ্যাপক নীলা সাহা ও নুসরাত শারমিন উপাচার্যের কাছে সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়।

অভিযোগকারী শিক্ষিকারা জানান, সহকর্মী মোহাম্মদ রুহুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে নারী শিক্ষকদের গায়ে হাত দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। নানা ছলছুতোয় সহকর্মীদের চুলে, গালে ও মাথায় অশালীনভাবে হাত দিতেন। তার আচরণ ও চোখের চাহনিও ছিল অশোভন। এ নিয়ে বিব্রত সহকর্মীরা এর আগেও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উর রহমানের কাছে নালিশ করেছিলেন। কিন্তু কোনও প্রতিকার হয়নি। সর্বশেষ মঙ্গলবার অফিস কক্ষে শিক্ষক রুহুল আমিনের এমন আচরণে হতভম্ব ও হতবাক খোদ বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলা। তিনি সহকর্মী একজন শিক্ষকের এমন অশালীন আচরণে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ বলে জানান।

হয়রানির শিকার শিক্ষিকারা জানান, এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। শিক্ষকের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ ক্যাম্পাসের শিক্ষকসমাজসহ শিক্ষার্থীরাও। প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে সমাবেশ করে অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

অভিযোগপত্রে ইসমতআরা ভূঁইয়া ইলা বলেন, আমরা যোগদানের পর হতে আজ অবধি একই বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ রুহুল আমিনের দ্বারা প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। গত মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভার সমাপ্তি ঘোষণার পর আমি (ইসমতআরা ভূঁইয়া ইলা), বিভাগের শিক্ষক আল-জাবির, মাজহারুল হোসেন তোকদার, অফিস সহকারী সাইদুর রহমান ও অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিন পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম এমন পরিস্থিতিতে রুহুল আমিন আমার সামনে থাকা অবস্থায় উপরে বর্ণিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সামনে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চোঁখ টিপ দিয়ে খারাপ ইঙ্গিত করেন। এ অবস্থায় আমি তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করি এবং বিগত দিনের কিছু অশালীন, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করে তাকে অবহিত করলে তিনি অকপটে বিভাগের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সামনে স্বীকার করেন যে, তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে উত্ত্যক্ত করেছেন। উত্ত্যক্তের ধরণগুলো হলো, তিনি বিভিন্ন সময়ে আমার ছবি এডিট করে কুরুচিপূর্ণভাবে পাঠান এবং বিভিন্ন নোংড়া ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা সম্পন্ন লেখা আমাকে টেক্স করেন। যা এতবছর যাবৎ আমি সহকর্মী ভেবে সহ্য করে আসছিলাম এবং তাকে একাধিকবার সতর্কও করেছিলাম। বিভাগের একটি ফলাফল প্রস্তুত করার সময় ডেমোনস্ট্রেটর আরিফ হাসান এর সামনে আমার শরীরে হাত দিয়ে খারাপ ভাষা ব্যবহার করেন। আমি সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করি। প্রতিনিয়ত অনেক নোংড়া, অশালীন, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আচারণ আমিসহ বিভাগের অন্য নারী সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক নীলা সাহা এবং নুসরাত শারমীনের সাথেও তিনি করে যাচ্ছেন।

অভিযোগ পত্রে নীলা সাহা বলেন, বিভাগে যোগদানের পর থেকে শিক্ষক রুহুল আমিন তার সাথে একই আচরন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তিনি একদিন অফিস কর্মকর্তার কক্ষে আমার চুল ও গালে হাত দিয়েছিলেন। তৎক্ষনাৎভাবে আমি তার প্রতিবাদ করি। কিন্তু তার পরেও তিনি সাবধান না হয়ে প্রতিনিয়ত একই ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অশালীন দৃষ্টিই নিক্ষেপ করে চলেছেন।

অভিযোগ পত্রে নুসরাত শারমিন বলেন, বিভাগে শাড়ি পরে আসলে অভিযুক্ত শিক্ষক আমার দিকে নোংড়াভাবে তাকিয়ে থাকেন এবং নোংড়া মন্তব্য করেন। যার প্রতিবাদ স্বরূপ সাবেক উপাচার্যের কাছে সহকর্মী নীলা সাহাসহ মৌখিকভাবে অভিযোগ করে এসেছিলাম, কিন্তু সাবেক উপাচার্য এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেননি।

এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এর আগেও শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত