ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

বঞ্চিত ও চরম অবহেলিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয়করণ বিষয়ে

  মো. আজিজুর রহমান আযম

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:০৭

বঞ্চিত ও চরম অবহেলিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয়করণ বিষয়ে

শিক্ষকতা একটা মহান পেশা। দুনিয়াতে আর এমন একটি পেশা নেই যা সম্মানের দিক থেকে শিক্ষকতা পেশার সমান। শিক্ষকরা সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম। এখানে শিক্ষকগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদার জন্য পুলিশের লাঠি পেটা খেতে হয়। অনেকে পুলিশের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ময়মনসিংহ-এর ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে জাতীয়করণের আন্দোলন করার কারণে পুলিশের লাঠি পেটায় নিহত হতে হয় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সারা দেশের জনগণ জানতে পারে। আজও সে একই ব্যাপারে জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ তাদের বাচ্চাসহ আমরণ অনশন করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল, বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারক, শিক্ষামন্ত্রী, তথা কথিত সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী তাদের সমর্থনে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এটা শিক্ষক সমাজের জন্য রাষ্ট্রের এক চরম ট্রাজেডি।

একটি দেশ, জাতি ও সমাজ তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যে বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, দক্ষতা ও নৈতিকতা বোধ নিয়ে গড়ে তুলতে চান সেই কাজটা সম্পন্ন করেন সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দরা। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার ও জাতীয় উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন ব্যতিরেকে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রধান মাপকাঠি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার অধিকার পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হলে জনসাধারণের অন্যান্য অধিকার আদায়ের পথ সুগম হবে। অথচ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও আমাদের সংবিধানে শিক্ষা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত পায়নি। কারণ শিক্ষা খাতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বরাদ্দ হলো জিডিপির ৬ শতাংশ এবং বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে এ বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশের আশপাশেই উঠানামা করছে।

বিভিন্ন দেশের জিডিপিতে শিক্ষা খাতের অনুপাত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৬১টি দেশের মধ্যে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দিক থেকে বাংলাদেশ ১৫৫তম। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান যুদ্ধতাড়িত আফগানিস্তান ও ইরাক থেকেও অনেক কম। আইনগত অধিকার না থাকায় বেসরকারি শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট, পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মতো পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, শিক্ষা ভাতা, পাহাড়িয়া অঞ্চলে চাকরিরত শিক্ষকদের জন্য পাহাড়ি ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এটি একেবারেই অনভিপ্রেত।

বেসরকারি শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চত করতে সরকারি উদ্যোগ এবং পর্যাপ্ত সমর্থন না থাকায় তারা সর্বদাই বঞ্চিত হয়। উদাহরণস্বরূপ দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়িভাড়া পান ১০০০ টাকা। বাড়িভাড়াতো দূরের কথা বাড়ির বারান্দাও ভাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসা ভাতা পান ৫০০ টাকা। তা নিন্তাতই অপ্রতুল এবং উৎসব ভাতা পান স্ব-স্ব স্কেলের ২৫ ভাগ। পুরো চাকরি জীবনে মাত্র একটি ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন। যা বর্তমানেও বন্ধ রয়েছে। বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের পদোন্নতির কোনো সুবিধা ব্যবস্থা নেই। যা আজকের বিভিন্ন দৈনিকে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। যেমন বেসরকারি কলেজে এমন অনেক মেধাবী শিক্ষক/শিক্ষিকা আছেন যাদের এসএসসি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যন্ত অনেক বিষয়ে প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্ত এবং তাদের অনেকেই আবার এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী হয়েও পদোন্নতিতে অনুপাত থাকার কারণে সহকারী অধ্যাপক হতে পারেন না। তাদের এত উচ্চ মানের ডিগ্রি থাকার পরও ট্রাজেডিটা হলো তাদের অনেক হতভাগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকে পুরো চাকরি জীবনে প্রভাষক হিসাবে জীবন কাটিয়ে দিতে হয়। বেসরকারি কলেজে পদোন্নতির কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন এই সম্মানিত পেশায় আসতে চরম অনিহা প্রকাশ করেন। পৃথিবীর কোনো উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে এমন তুঘলকি প্রথা আছে বলে আমাদের জানা নেই।

আমরা আশা করি বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষক সমাজের ন্যায্য পাওনা সুনিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে দেশে জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও ভাষাগতভাবে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে হবে। আর এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বাস্তবায়িত করবেন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা। তাই এই পাঁচ লাখ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণ করা ব্যতীত সরকারের এই মহৎ উদ্দেশ্য সফল হবে না। বেসরকারি শিক্ষকদের উলি্লখিত যৌক্তিক দাবিগুলো বর্তমান সরকার পূরণ না করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে, রাষ্ট্র এবং সমাজে সকল পেশার মানুষের নিকট হেয়প্রতিপন্ন হবে, তার ফলস্বরূপ তারা ক্লাসে ঠিকমতো মনোযোগ দিয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তাহলে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিসমূহ যেমন সরকার ঘোষিত বাজেট প্রণয়নের সময় ন্যায্য প্রাপ্য বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট, পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মতো পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, শিক্ষা ভাতা, পাহাড়িয়া অঞ্চলে চাকরিরত শিক্ষকদের জন্য পাহাড়ি ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। সরকার যদি উপরোক্ত দাবিগুলো পূরণ না করেন তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকবৃন্দ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন চালিয়ে যাবে। তাতে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হবে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকার দলের প্রতি এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ এই শিক্ষকগণই নির্বাচনী কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকবে। সুতরাং তাদের অভুক্ত রেখে বর্তমান সরকার আগামী নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে পারবে না বলে সাধারণ জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।

লেখক: লেখক

  • সর্বশেষ
  • পঠিত