ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিসিবির বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে বিতর্ক

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৫৯

বিসিবির বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে বিতর্ক

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন ৬ ক্রিকেটার। স্থায়ী চুক্তিতে ১৬ থেকে একলাফে ১০ জন-এ কমিয়ে আনা হয়েছে। বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (১৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকদের সভায় এই সিদ্ধান্ত আসে। বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকছেন ১৩ জন ক্রিকেটার। যার মধ্যে স্থায়ী ভিত্তিতে ১০জন ও অস্থায়ী চুক্তি হবে ৩জন ক্রিকেটারের সাথে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা মনে করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কোনো ব্যাপারেই সুস্পষ্ট উত্তর দেয়নি এই সভা থেকে বের হয়ে। তিনি বলেন, 'চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার কমানো কোনো আদর্শ হতে পারে না, এটা ভুল বার্তা ছড়াবে।'

সাবেক অধিনায়ক বলেন, অন্য যে কোনো দেশের ক্রিকেট দলের চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কম টাকা বেতন পান। ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার চেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটাররা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অনেক বেশি টাকা আয় করেন। অতএব এই চুক্তিতে অনিশ্চয়তা হয়তো জাতীয় ক্রিকেটে আগ্রহ কমাবে।

শফিকুল হক হীরা বলেন, যে কারণে দেশের অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে তেমন আগ্রহী নন। এর কারণ যে ম্যাচ ফি দেয়া হয় তা খুব নগণ্য, সাড়ে তিন ঘন্টার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আয় এর চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে চার-পাঁচদিন ক্রিকেট খেলে আয় কম।

'পারফর‍ম্যান্স খারাপ' বলে যে যুক্তি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দিয়েছে তার সাথে একমত নন শফিকুল হক হীরা। কারণ এক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের সাবধান করে দেয়া যেতে পারতো বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'সিনিয়র যারা ক্রিকেটার আছেন, তাদেরও বেতন বৃদ্ধি হয়নি, প্রতি পেশাদার ক্রিকেটারই বেতন বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করেন, এটা না দেয়া অন্যায়, এটা অসন্তোষ সৃষ্টি করে।'

এই প্রসঙ্গে টাইগার দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘সিদ্ধান্তটা বোর্ডের। কজনকে বেতন দেবে না দেবে এটা তাদের সিদ্ধান্ত। তবে একটা খেলোয়াড়ের জন্য বেতন (চুক্তিতে থাকা) গুরুত্বপূর্ণ। একই সময়ে তাকে ততটুকু আবেগ দিয়েও খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস, সবাই সেভাবে খেলছে। পারফরম্যান্স সব সময়ই একই গ্রাফে চলে না। কারও কখনো ভালো যায়, কারও কখনো খারাপ। বেতনের বিষয়টা নির্ভর করে পারফরম্যান্সের ওপর, এটাও সত্য।’

বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়াটা একজন ক্রিকেটারের জন্য অবশ্যই বড় ধাক্কা। মাশরাফি জানালেন, বাদ পড়া ক্রিকেটাররা যেন এ ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারে তাঁরা সব সহযোগিতাই করবেন।

বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ ক্রিকেট প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম রনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইতিবাচক বা নেতিবাচকও হতে পারে। তবে এটা বেশি বিস্ময়কর। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে যে বেতন বা ম্যাচ ফি দেয়া হয় তা খুব বেশি নয়। এখানে কেন্দ্রীয় চুক্তিটাই বড় ভূমিকা রাখে ক্রিকেটারদের জীবনমানে। ১০ থেকে ১৩ জনের সংখ্যাটাই বিস্ময়কর।

এই প্রতিবেদকের মতে, খারাপ খেলার বিপরীতে গ্রেডিংটা কমিয়ে আনা যেতে পারতো। বাংলাদেশে ক্রিকেট প্রতিভা খুব বেশি নেই। সৌম্য বা তাসকিনের মতো যারা নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে পারছেন না, এক্ষেত্রে তাদের বিশেষভাবে দেখভাল করাটাই বিসিবির দায়িত্ব।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরাও অবাক হয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডের এই সিদ্ধান্তে। টাইগারদের একটি ক্রিকেট সমর্থক ফোরাম 'দৌড়া বাঘ আইলো' এর প্রধান নির্বাহী তানভীর প্রান্ত বলেন, এটায় যারা বাদ পড়েছে তারা এই ঘটনায় প্রণোদনা পেতেও পারে নাও পেতে পারে। সরাসরি বাদ দেয়াতে মানসিক ধাক্কা পেতে পারে, আবার ভাল খেলে দলে আসার প্রেরণাও পেতে পারেন। তবে একবারে বাদ না নিয়ে, গ্রেডিং কমানো যেতে পারতো।

প্রসঙ্গত, বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মোসাদ্দেক হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি। এর আগেই শৃঙ্খলাজনিত কারণে বাদ পড়েছিলেন সাব্বির আহমেদ। এবার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা দশ ক্রিকেটার হচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, মুমিনুল হক, রুবেল হোসেন ও তাইজুল ইসলাম।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত