ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

এবার পারবেন মেসি?

এবার পারবেন মেসি?

বার্সেলোনার মেসি আর আর্জেন্টিনার মেসির মধ্যে পার্থক্য কী? উত্তর, বার্সার হয়ে মেসির পায়ে যেন ভর করেন ফুটবল 'ঈশ্বর'। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে শুধুই 'ফাইনালিস্ট' তকমা তার। দেশের হয়ে মাঠে নামলেই মেসি যেন গ্রিক মিথোলজির কোনো ‘ট্র্যাজিক হিরো’।

২০০৭ সালের কোপা আমেরিকা। তখন একেবারে তরুণ প্রতিভা মেসি। ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হেরে গেল আর্জেন্টিনা। এরপর ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই। বিশ্বকাপের ফাইনালে মারাকানার বিজয় মঞ্চে এসে পরাজিতের মেডেল গ্রহণ করেন মেসি। তার পাশেই শোভা পাচ্ছিল বিশ্বকাপ ট্রফি। কিন্তু তখন সেটা ছিল জার্মানির সম্পদ! ঠিক এক বছর পর ২০১৫ সালে সান্তিয়াগোর এস্তাদিও ন্যাসিওনেলের বিজয়মঞ্চে সিলভার মেডেল নিতে এলেন মেসি। পাশেই শোভা পাচ্ছিল লাতিনের সেরা, কোপা আমেরিকার ট্রফি। সেবার ওটার দখল গেল 'রেড হট' চিলির হাতে!

সর্বশেষ ২০১৬ সালের স্পেশাল কোপা আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ স্টেডিয়াম। সেখানে টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করে পরাজয়ের ‘খলনায়ক’ মেসি। ২৯ বছরে এসেও একটিমাত্র শিরোপার জন্য এমন মাথা কুটে মরতে হচ্ছে তাকে। চিলির বিপক্ষে ফাইনালেই সবাই চেয়েছিল মেসি গোল করুক। তার গোলেই শিরোপা জিতুক আর্জেন্টিনা। কিন্তু হলো উল্টোটা। এই ফাইনালেও সেই ‘অভিশাপ’ কাটাতে পারেননি মেসি। হতাশায় লুটিয়ে পড়েন। টানা চতুর্থবারের মতো ফাইনাল তার কাছে হয়ে থাকল এক দুঃখগাঁথার করুণ ইতিহাস। সেবার ক্ষোভ কিংবা অভিমানে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণাই দিয়ে দিলেন ক্ষুদে জাদুকর। পরে অবশ্য মান ভাঙিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনা হয় আকাশী-সাদা শিবিরে।

এত কাছে, তবু কত দূরে। একবারও আর্জেন্টিনার জার্সিতে আন্তর্জাতিক ট্রফি ছুঁয়ে দেখার ‘যোগ্য’ হতে পারলেন না মেসি!

পেপ গার্দিওলার অধীনে বার্সেলোনায় মেসির ফুটবলশিল্পের বিকাশ। রাত জেগে ভিডিও দেখতে দেখতেই নাকি মেসিকে নিয়ে সেই বিখ্যাত ‘ফলস নাইন’ পজিশন তৈরি করেছিলেন পেপ। একবার লা লিগায় একটি দুর্বল ম্যাচের আগে বার্সা কোচকে সাংবাদিক সম্মেলনে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, 'কাল মেসিকে খেলাবেন?' পেপ এক লাইনে উত্তর দিয়ে দিলেন, 'আপনি মেসির খেলা দেখতে চান না?'

পরবর্তীকালে এই পেপ-ই হয়েছিলেন মেসির প্রতিপক্ষ। কিন্তু প্রাক্তন ছাত্রের মুখে পড়ে হার মানলেন ফুটবলের সেরা কোচও। কে ভুলবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গার্দিওলার বায়ার্ন মিউনিখকে একা মেসির ধ্বংস করে দেওয়া!

বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জিতছিলেন। সর্বশেষ কোপায় মেসি ক্লাব এবং দেশের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে যান। কিন্তু ওই যে শিরোপাটি জেতা হলো না। অনেকেই মনে করেন মেসি বিশ্বকাপ বা কোপা আমেরিকা না জিতলেও জনমানসে তার প্রভাব পাল্টাবে না। কাপ না জিতলেও তিনি পেলে বা ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনীয়। মেসি বুট পায়ে ব্যালে নৃত্য করেন। আর তা দেখতে দেখতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বসে থাকে গোটা বিশ্ব। তাকে সামলাতে কুল-কিনারা না পেয়ে কী দেশের জার্সিতে, কী ক্লাবের জার্সি, বল ছেড়ে তার পা’কেই বেশি টার্গেটে করেছে প্রায় সব প্রতিপক্ষ।

দরজায় কড়া নাড়ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। প্রশ্ন উঠেছে, এবার কি ঘুচবে মেসির শিরোপা অপেক্ষা? মাঠের বাইরের বয়স ৩২ হতে পারে। মাঠের মধ্যে এখনও তিনি রোজারিও থেকে ফুটবলের নেশায় বার্সেলোনার লা মাসিয়া অ্যাকাডেমিতে পা রাখা সেই উৎসাহী, কৌতূহলী কিশোর! অথচ সেই মেসিরই কিনা জাতীয় দলের হয়ে সাফল্যের জন্য কী আকুতি-মিনতি! একবার মেসি বলেছিলেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে এই একটিমাত্র শিরোপার জন্য প্রয়োজন হলে ক্লাবের সব ব্যক্তিগত অর্জন সমর্পন করতে পারি। তবুও যে কোনও মূল্যে ট্রফি জিততে চাই।’ কিন্তু তা আর হলো কই? তিন তিনটি কোপা, একটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে প্রতিবারই হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছে গ্রহের সেরা ফুটবলারকে! বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদে জাদুকরের কোটি কোটি ভক্তের প্রশ্ন, এবার কি হতাশা কাটাতে পারবেন মেসি?

  • সর্বশেষ
  • পঠিত