ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছাত্রীকে গোপনাঙ্গের ছবি পাঠানো সেই শিক্ষক বহিষ্কার

  বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:২৫  
আপডেট :
 ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:০১

ছাত্রীকে গোপনাঙ্গের ছবি পাঠানো সেই শিক্ষক বহিষ্কার
ছবি: সংগৃহীত

বেগম ফায়জুন্নেসা মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. আশরাফুল হাসান লিটনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বরগুনার বামনায় প্রাক্তন ছাত্রীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিজের গোপনাঙ্গের ছবি পাঠিয়ে সমালোচিত হন। এরই মধ্যে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে মানববন্ধন করেছে কলেজের ছাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই উপজেলার লঞ্চঘাট সড়কে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ অংশ নেয়।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছাত্রী নিপু আক্তার, জান্নাতি আক্তার, অনন্যা অনু বলেন, আশরাফুল হাসান লিটন নামের ওই শিক্ষক কলেজের অনেক ছাত্রীকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিজের আপত্তিকর ছবি পাঠাতেন। সম্প্রতি এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। আমরা ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

বামনা বেগম ফায়জুন্নেসা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মানজুরুর রব মুর্তাযা আহসান বলেন, তাৎক্ষণিক ওই প্রভাষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত শেষে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া স্কীনসর্টে অভিযুক্ত শিক্ষককে ওই ছাত্রীর মোবাইল নম্বর চাইতে দেখা যায়।

এ নিয়ে ওই ছাত্রী তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসও দেন। যেখানে তিনি লেখেন, (কেউ কেউ) পড়তে নিলে পুরোটা পড়বেন। আধপড়া বিষয়ে পরে ভারী কটুক্তি ছুঁড়বেন না। আমার হজম হবে না। আমি জানি না আমি কি লিখতে যাচ্ছি। তবে এটুকু বুঝতে পারছি অন্তত কিছু মানুষের মুখোশ উন্মোচন অবশ্য প্রয়োজন। কোনদিনও ভাবিনি যে পরিচিত মানুষের নোংরা ম্যাসেজে আমার ফেসবুক ওয়াল নোংরা করতে হবে। আর আমি এতোটুকুও ভীত নই যে এজন্য পরবর্তীতে আরো ভয়াল কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় কি না!

আমি নিজের ব্যাপারে অন্তত এতোটা কনফিডেন্ট। একটি মানুষের সঙ্গে যে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে তিনি চাইলেও কখনো আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারবেন না। যদিও তিনি সম্পূর্ণ বিপরীত চিন্তার মানুষ। তাই আমার কিছুতেই কিছু যায় আসে না। কাল যদি লোকে ওই লুচুটার উপর না হেসে আমার উপর হাসে এই টপিক্স উল্লেখ করে তবে আমিও তাদের তথা এই সমাজের উপর উল্টো হাসি হেসে দিবো।

আমাদের সমাজের খুব একটা প্রবণতা আছে কোন প্রকার হ্যারাসমেন্ট হলে যদি ভিকটিম অভিযোগ করে সেক্ষেত্রে তাকেও এই হ্যারাসমেন্টের জন্য দায় নিতে হয়। আর কিছু মুখস্ত কথা তো থাকেই কুটনা মনোভাবের মানুষগুলোর। এরা বলবে ‘এক হাতে কি তালি বাজে’? তাদের জ্ঞাতার্থে পুরো কনভারসেশন আগা টু মাথা স্ক্রিনশট নিলাম। এরপরও যদি আপনার নোংরা কমেন্ট থেকে আমি নিজেকে প্রোটেক্ট করতে না পারি আমি মেনে নেব আমি সিরিয়সলি আপনার চিন্তার মতই নোংরা।

ওই ছাত্রী আরো লিখেন, ‘শুনে অবাক হবেন যে এই বাজে লোকটা আমার কলেজ শিক্ষক ছিল অন্যদিকে আত্মীয়। আমি মানুষটাকে কি শ্রদ্ধাটাই না করতাম! কতোটা মানসিক অবক্ষয় হয়েছে তার ভেবে দেখুন! কলেজে থাকতে শুনতাম সে বউকে মারধর করে পরক্ষণেই গরুর মাংস কিনে আনে খুশি করতে। তখন ভাবতাম দাম্পত্য জীবনে টুকটাক ঝগড়া তো হয়ই। তবুও তো তিনি মিটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিয়েও করেছে অন্তত ৪/৫ টা। এখন বুঝলাম যে সে কতোটা অসুস্থ। আর এই অসুস্থতা যতোটা না মানসিক তার অধিক শারীরিক। গতকাল ফুফুর বাসায় থাকতে অনলাইনে বারবার কল করছিল। আমি ভাবলাম কোন জরুরি প্রয়োজন কি না। নক করার পর বললাম, আপনি এখানে বলুন কেননা কথার ধরন অস্বাভাবিক লাগছিল। কিন্তু যে ভাবসাব দেখালো আমারই মনে হলো আমি হয়তো কোথাও ভুল করছি। তাই দিলাম নাম্বার। ফোনে কোন কল আসে নি। আজ আবার ম্যাসেজ দিচ্ছে দেখে আমি রিপ্লাই করলাম।

একপর্যায়ে সে ম্যাসেজে রিপ্লাই না করে ভিডিও কল দিল। রিসিভ হয়ে যাওয়ার পরপরই আবার কেটে দিলাম। এরপর আবার কল এলো। আমি অনেকটা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করি এটা বলতে যে- কি হয়েছে? কি এমন বলবেন আপনি? আমি দেখলাম তিনি ক্যামেরাটা ঘুরিয়ে তার উলঙ্গ শরীরের বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করছে। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিলাম। কল কাটার পরও সে আমাকে তার উলঙ্গ ছবি পাঠিয়ে যাচ্ছিলো আর সেই সঙ্গে ননস্টপ ভিডিও কল।

আমি অনুভব করলাম- আমার বুক কাঁপছে এবং চোখ থেকে টপাটপ পানি পড়ছে! কিছুতেই নর্মাল হতে পারছিলাম না। সারাটা জীবন আমি কি তবে শিক্ষকের ভুল সংজ্ঞা জেনে এসেছি না কি শিক্ষক হিসেবে একটা ভুল মানুষকে জেনেছি? মাথায় খেলছে বহু প্রশ্ন, উত্তর নেই একটিরও। আমি সত্যি কাঁদছি এজন্য যে আমার অনেক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের এখন অনেকে কবরে এবং অনেকেই প্রবীণ। মুহূর্তের জন্য হলেও নিজেকে ধিক্কার দিলাম কাকে আমি স্যার সম্বোধন করেছি? সে তো জানোয়ারের চেয়েও অধঃ। অথচ আমাদের পুরো পরিবার তাকে যথেষ্ট ভালো জানে, আজকের আগে আমিও জেনে আসতাম যেমনটা!

পরক্ষণেই ভাবলাম নিজেকে কেন দোষ দিচ্ছি? দোষ তো আমার না। এই তো একটা কালপ্রিট। এমন হাজার কালপ্রিট আছে যেগুলা ভণ্ড শিক্ষকের মুখোশ পরে এখানে ওখানে পড়াচ্ছে আর সুযোগ পেলে এরাই মুখোশ খুলে ধর্ষক হয়ে উঠছে। প্রত্যেকটার মুখোশ টেনে সত্যিটা দেখানোর অপেক্ষা,কিন্তু দেখাবোই।

ওই ছাত্রী আরও লেখেন, ‘আমার বোন এখন ঐ কলেজেই পড়ছে।প্রধান অভিভাবক প্রিন্সিপাল স্যার যিনি প্রত্যেকটা মেয়ের নিরাপত্তা ছাউনি তিনি কিছুদিন পর অবসরে যাবেন। তখন এদের নিরাপত্তা কে দেবে? এখন হাজারো বোন পড়ছে, ভবিষ্যতে আসবে আরো হাজার লাখ ছাত্রী। তাও আবার মহিলা কলেজ? আমাদের মায়েরা তাদের সন্তানকে সেখানে মানুষ হবার জন্য পাঠায় আর এসব অমানুষেরা, এই শেয়ালেরা যৌন লালাঝরানো জিভে ওৎ পেতে থাকে ওদের তৃষ্ণা নিয়ে। সুযোগ পেলেই যেন আর নিস্তার নেই। বরাবরের মত প্রার্থনা, এই পঞ্চম, না না শ্রেণিহীন বর্গের প্রাণিদের শিশ্ন বিপদজনক হয়ে ওঠার সাথে সাথে খসে পরুক।ঠিক টিকটিকির লেজ যেমন খসে পরে।’

সর্বশেষ ওই ছাত্রী লেখেন, ‘বিঃ দ্রঃ এই একটা পশুকে দিয়ে আমার সব শিক্ষকদের বিচার করবেন না,অনুগ্রহ রইলো। জানেনই তো দেবতার আড়ালেই অশুর হাসে। আর পিচাশটার সব ছবি আপ দিয়েছিলাম না কিন্তু ভাবলাম ও যেহেতু দেখাতে চায় দেখানোই ভালো। আর আমার সঙ্গে যে বোনরা ফেসবুকে সংযুক্ত আছো পশুটাকে চিনিয়ে দিও সবার কাছে। নিজেরাও চিনে নিও সবার আগে। Syed Murtaza Ahsan স্যার আপনি অবশ্যই বিষয়টা দেখবেন, আশা রাখছি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আসরাফুল হাসান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত