ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

অনাবৃষ্টির কারণে বোরো ধান নিয়ে কৃষকের চিন্তা

  হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২০, ১২:১১

অনাবৃষ্টির কারণে বোরো ধান নিয়ে কৃষকের চিন্তা

চৈত্রের শেষ প্রায়। অন্য বছর এই সময়ে হবিগঞ্জের হাওরে হাওরে ধান কাটার উৎসব শুরু হয়ে যায়। কিন্তু অনাবৃষ্টি কারণে এ বছর দেখা দিলো ভিন্ন রূপ। এখনও হাওরের কোন জমিতেই ধানে চাল বাঁধেনি। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। একদিকে ধান পাঁকা পিছিয়ের যাওয়ার কারণে বন্যা কবলে পড়া অন্যদিকে, ধানে চাল কম হওয়ার আশঙ্কায় কপালে ভাজ পড়েছে কৃষকদের।

জানা যায়- হাওর অঞ্চলিয় জেলা হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলার সব কয়টিতে ব্যাপক পরিমাণে ধানের উৎপাদন হয়। কিন্তু গেল বছর ছাড়া বিগত ৩-৪ বছর ধরে বন্যায় ফসলহাণীর ঘটনা ঘটে। এতে বিশাল অংঙ্কের লোকসানের পাশাপাশি পথে বসেন কয়েক হাজার কৃষক। আর গত বছর বাম্পার ফল ঘরে তুললেও ন্যার্যমূল্য না পেয়ে এ বছর বোরো চাষ কমিয়ে দেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর বোরোর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। কিন্তু ধানের ন্যার্যমুল্য না পেয়ে অভিমানি কৃষক অনাবাদি রেখে দেন অনেক বোরো জমি। ১ লাখ ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়।

এদিকে, চলতি বোরো মৌসুমে দেখা দেয় অনাবৃষ্টি। ফলে অধিকাংশ জমিই শুকিয়ে মাঠির উর্বর শক্তি হারিয়ে পেলে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পিছিয়ে যায় জমিতে ফসল আসাও। এখন ধান কাটার ভরা মৌসুমে এসেও বিস্তুীর্ণ হাওরের কোন জমিই পাকেনি। এতে বেড়ে গেছে বন্যায় ফসলহাণীর শঙ্কা ও ফলনে বিপর্যয় ঘটার।

বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের কৃষক লক্ষণ দাস বলেন, অন্য বছর চৈত্রের মাঝামাঝিতে ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর সঠিক সময় বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ধানে চাল বাধেনি। ফলে ধান ঘরে তুলতে তুলতে বৈশাখ প্রায় শেষ হয়ে যাবে। এতে আগাম বন্যা না হলেও অনেক জমির ধান ঘরে তুলা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র বন্যার আশঙ্কা না। পাশাপাশি পানি না থাকার কারণে ধান গাছের গুড়া শুকিয়ে গেছে। যার কারণে ধান পাকা শুরু করলে গাছ মাটিতে শুয়ে যাবে। এতে ধান কাটতে অতিরিক্ত অনেক শ্রমিক লাগবে এবং ধান ঝড়ে যাবে।

একই উপজেলার আতুকুড়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ফালগুণের শেষের দিকে ধান গাছে ফুল আসে। তখন হালকা বৃষ্টি হলে ধানের ছারা সতেজ থাকে এবং ভালো ফলন হয়। কিন্তু এ বছর পুরো মৌসুমজুড়ে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে গাছের ফুল শুকিয়ে গেছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে ফলন কমে যাবে।

তিনি আরো বলেন, অন্য বছর যে জমিতে ২৫/৩০ মন ধান হতো, সেই জমিতে এ বছর ২০ মন ধানে হবে কি-না সন্দেহ আছে। এছাড়া, ধান কাটা পিছিয়ে যাওয়ার কারণে বন্যায় ফসলহাণীর শঙ্কাতো আছেই।

চুনারুঘাট উপজেলার দেওউন্দি এলাকার কৃষক বজলুল মিয়া বলেন- আমাদের জমিগুলো হাওর অঞ্চলের জমির চেয়ে উচুঁ হওয়ায় বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে জমির মাটি শুকিয়ে পাথরের মতো সাদা হয়ে আছে। ভালো ফলন হওয়াতো দূরের কথা, গাছই বড় হতে পারছে না।

সদর উপজেলার লুকড়া এলাকার কৃষক আল আমীন বলেন, ‘বোরো চাষ সব চেয়ে কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। বোরো আবাদ করতে বীজতলা তৈরি, সার প্রয়োগ, বীজ তলা থেকে চারা উত্তোলন, ধানি জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, আবার সার প্রয়োগ, কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, ধান কাটা, মাড়াই করা ও ধান শুকিয়ে ঘরে তুলা পর্যন্ত শুধু খরচ আর খরচ। অথচ এতো খরচ আর পরিশ্রমের পরও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ফলন হয়নি। সেই সাথে আবার ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। দেশে যে অবস্থা শুরু হইছে কিভাবে বাচব আমরা বুঝতে পারছি না।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, বৃষ্টি না হলেও ফসল তেমন কম হবে না। এছাড়া ধান কাটা যে খুব একটা পিছিয়ে গেছে তা বলা যাবে না। বৈশাখের শুরু থেকেই কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারবেন। তাই এতো দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। এছাড়া সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার জন্যতো কৃষি অফিস সব সময় কৃষকের পাশে আছেই।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত