ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪০ মিনিট আগে
শিরোনাম

নরসিংদীতে করোনা যুদ্ধে সুপার হিরোর ভূমিকায় জেলা পুলিশ

  নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২০, ১৫:৪৮

নরসিংদীতে করোনা যুদ্ধে সুপার হিরোর ভূমিকায় জেলা পুলিশ

করোনা যুদ্ধ জয়ে নরসিংদীতে সুপার হিরুর ভূমিকা পালন করছেন জেলা পুলিশের সদস্যরা। অব্যাহত রেখেছেন আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণসহ লকডাউন নিশ্চিতে সচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ। একই সঙ্গে চালাচ্ছেন সামাজিক দুরুত্ব নিশ্চিত ক্যাম্পেইন।

রাজনীতিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা মাথায় গামছা বেধে কাটছেন অসহায় কৃষকের জমির পাকা ধান। বাড়ি বাড়ি গিয়ে

বিতরণ করছেন ত্রাণসামগ্রী। হট লাইনে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে পৌছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। এতিম, প্রতিবন্ধী ভাসমান ও ছিন্নমূল অনাহারী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে ইফতার।

স্ব্যাস্থ্য সেবা মানুষের দূরগোড়ায় পৌছে দিতে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ ফ্রি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তারদের সঙ্গে নিয়ে তৈরী ভ্রাম্যমাণ টিম এম্বোলেন্স সহ গাড়ী বহর স্ব্যাস্থ্য সেবা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এলাকা থেকে এলাকায়। সম্প্রতি মানুষকে ঘরে রাখতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে সূলভ মূল্যে দৈনন্দিন বাজার সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্ধোধন করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, করোনার ছোবল থেকে পুলিশ বাহীনির সদস্যদের রক্ষা করতে পুলিশ লাইনস ও পুলিশ সুপার কার্য়ালয়ে জীবাণু নাশক টার্নেল বসানো হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে এলাকাবাসী ভয় পেলেও পুলিশ সদস্যরা স্বমহিমায় এসব লাশের দাফন সম্পূর্ণ করছেন।

করোনার দূর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে সর্বাধিক সেবা প্রদান করে আলোচনায় এখন জেলা পুলিশ। তাই সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন জেলা পুলিশের ভূয়সি প্রশংসা। সর্বশেষ লকডাউন নিশ্চিতে জেলা পুলিশের কর্মকান্ড ও কৃষকের ধান কেটে দিয়ে আলোচনায় চলে আসেন এই বাহিনীর সদস্যরা।

জেলা পুলিশ তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংকট মোকাবেলায় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান, অসহায় দুস্থ ও পরিবহন শ্রমিকদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ নানামূখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রমজান মাসের শুরুতেই নরসিংদী জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় সূলভ মূল্যে ঘরের বাজার কার্যক্রম উদ্ধোধন করা হয়েছে।

এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, ডাল, তেল, ছোলা, বেশন, লবন, চিনি, আলু, পিয়াজ, বেগুন, ইত্যাদি সূলভ মূল্যে মানুষের দ্বার প্রান্তে পৌছে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় কমানো সম্ভব হয়। এবং মানুষ জনকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো যায়। তাছাড়া পবিত্র মাহে রমজানে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে খুচরা বাজারের চেয়ে কম মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয় করা হচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সবজি ক্রয় করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা সবজির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে।

নরসিংদী সদরসহ, মাধবদী, পলাশ, শিবপুর মডেল, মনোহরদী, রায়পুরা ও বেলাব থানাধীন বিভিন্ন স্থানে গণজমায়েত রোধ, অযথা ঘোরাঘুরি বন্ধে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করছে জেলা পুলিশ। এছাড়া আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে না দেয় সে লক্ষ্যে বাজার গুলোতে অভিযান চালানো হয়। মত বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করা হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সকলকে ঘরে অবস্থানের জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এর বাহিরেও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, এতিম, পথ শিশু, রিক্সাচালক, ভিক্ষুক, দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে জেলার ৬টি উপজেলার ৭টি থানায় ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

লকডাউন নিশ্চিতে জীবনবাজী রেখে দিনরাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা পুলিশের সদস্যরা। করোনার কবল থেকে মানুষকে সুস্থ রাখতে শহরে সচেতনা মূলক লিফলেট বিতরন ও মাইকিং করা হচ্ছে। জোরদার করা হয়েছে পুলিশি টহল। নরসিংদী জেলার সাথে অন্যান্য জেলা থেকে প্রবেশ ও প্রস্থান রোধে সড়ক মহাসড়ক ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে পুলিশের চেক পোষ্ট বসানো হয়েছে। সমস্যায় পড়া মানুষগুলোকে সাহায্যে স্বশরীরে উপস্থিত হচ্ছেন জেলা পুলিশের কর্নধার প্রলয় কুমার জোয়ারদার (বিপিএম বার,পিপিএম বার) ।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও মিডিয়া সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক রুপম কুমার সরকার (পিপিএম) বলেন, নরসিংদী জেলা পুলিশের সুপার হিরো হলো আমাদের এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার স্যার। স্যারের সুদক্ষ নির্দেশনায় ৬ উপজেলার ৭ থানার সকল পুলিশ সদস্যরা করোনা সংকট মোকাবেলায় ও লকডাউন নিশ্চিতে দিবানিশি কাজ করে যাচ্ছে। অসহায়দের খ্যাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে হ্যান্ড স্যানিটেইজার ও মাক্স বিতরণসহ সকল ধরনের কাজ করা হচ্ছে।

নরসিংদী পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার (বিপিএম বার,পিপিএম বার) বলেন, পুলিশের প্রধান কাজ হলো জনগনের জানমালের নিরাপত্তা ও আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই দুটি কাজের পাশাপাশি এখন আমরা কোভিড- ১৯ মোকাবেলা দিন রাত কাজ করে চলেছি। লকডাউন নিশ্চিত ও মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জেলা থেকে মানুষের প্রবেশ ও প্রস্থান রোধে সিমান্তবর্ত্তী এলাকায় ৭২টি চেক পোষ্ট বসানো হয়েছে।

এ পযর্ন্ত দশ হাজারেরও বেশি পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মানুষের স্ব্যাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিম করা হয়েছে। একই সঙ্গে টেলি সেবা চালু করা হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃতদের দাফন কাফন করছে পুলিশ সদস্যরা।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত