ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

উপকূলে ‘জরুরি কাজ’ অজুহাতে লুটপাটের মহোৎসব!‍

  খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ মে ২০২০, ১৯:০৭

উপকূলে ‘জরুরি কাজ’ অজুহাতে লুটপাটের মহোৎসব!‍

খুলনা জেলার সর্বদক্ষিণে উপকূলের উপজেলা কয়রা। একেবারেই সুন্দরবনের মধ্যে। ভৌগলিক কারণে এই উপজেলার মানুষ অনকে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাছাড়া প্রতি বছরই প্রাকৃতি দুযোর্গ লেগেই থাকে।

নিকট অতীতে সিডর, আইলাসহ বড় বড় দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ। এ কারণে বিশাল জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতায় জীবনযাপন করেছেন। জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ফসল, গবাদিপশু ও মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। অনেকেই হয়েছেন সর্বশান্ত। কয়রা উপজেলায় আইল্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এলাকায় পরিদর্শন করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এলাকায় টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার।

অথচ সেই থেকে অবহেলিত উপকূলীয় উপজেলা কয়রা এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রতি অর্থ বছরে সরকার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আসছেন। এ টাকা কোথায় কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা দেখার যেন কেহ নেই। বাঁধ নির্মাণের নামে কথিত ‘জরুরি কাজ’ অজুহাত দেখিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে। শতভাগ কাজ বুঝিয়ে না দিয়ে যেনতেনভাবে কাজ শেষ করে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে সনদ দিয়ে টাকা উঠিয়ে নেয়ার নজির রয়েছে।

আবার প্রতিযোগিতামূলক উম্মুক্ত টেন্ডারও হচ্ছে না। ফলে সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঘুরেফিরে তাদের পছন্দের ঠিকাদাররাই কাজ করছে।

আসন্ন বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে আসা ঘুর্ণিঝড় ‘আম্পান’র আর্বিভাবে আবারও জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার আয়োজন চলছে। এজন্য বাজেট ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিহ্নিত সেই প্রকৌশলী ‘অতি জরুরি’ কাজ হিসেবে তার পছন্দের ঠিকাদারদের দেয়ার পায়তারা করছে। পানির প্রবল চাপে এসব কথিত ‘জরুরি কাজ’ নিয়ে এলাকাবাসি সংশ্লিষ্টদের অবিযোগ করলেও তা কাজে আসেনি। সুতরাং বরাবরের মতো এবারও ‘অতি জরুরি’ কাজের নামে লুটপাটের মহাযোজ্ঞ চলবে বলে আশঙ্কা করছে অনেকেই।

জানা গেছে, উপজেলাটি খুলনা জেলায় অবস্থিত হলেও এটি সাতক্ষীরা জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। যে কারণে এখানে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চললেও জোরালো কোনো তদারকি নেই। এটি দেখভাল করেন সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহি প্রকৌশলী, কয়রা আমাদি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও উপসহকারি প্রকৌশলী (এসও)।

তাদের নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে উপকূলীয় কয়রা উপজেলায় গত কয়েক বছরে কথিত ‘জরুরিভিত্তিতে’ উন্নয়ন প্রকল্প কাজ চলে আসছে। এসব উন্নয়নমূলক কাজ জনগণের কাজে না আসলেও প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কাজ করেছে পছন্দের ঠিকাদার। চলমান আরো কয়েকটি প্রকল্পে কাজের নামে নয়ছয়ের আয়োজন চলছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, এসব কাজে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের বাইরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা অন্য কোনো দক্ষ ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাতে পারছে না। চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে নিন্মমানের কাজ করানো হয়। এর নেপথ্য অসাধু প্রকৌশলীরা বছরের পর বছর ধরে একই জায়গায় কর্মরত থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। অন্যত্র বদলি করলেও উপরমহলকে ম্যানজ করে পুনরায় একই স্থানে থাকছেন তারা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়রা উপজেলা সদরের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ঘাটাখালি হরিণখোলা ও ২ কয়রা স্লুইজ গেট সংলগ্ন বেড়িবাঁধে ৩ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কয়েক কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ‘জরুরিভিত্তি’ দেখিয়ে বিনা টেন্ডারে পছন্দের ঠিকাদারদের দেয়ার সকল আয়োজন চলছে। অথচ নিন্মচাপ ‘আম্পান’ আঘাত হানলে গোটা বাঁধ ভেঙে গোটা এলাকায় পানি প্রবেশ করবে।

এর আগেও দায়সারাভাবে কাজ করায় ওই ৩টি স্থান মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘আম্পান’ আসলেই প্লাবিত হবে কয়রা উপজেলা সদরের অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার ঘর-বাড়ি। ভেসে যাবে গৃহপালিত প্রাণী, গাছ-পালা, রাস্তাঘাট জমির ফসল ও কোটি কোটি টাকার মৎস সম্পদ। এমনটাই আশঙ্কা সবার।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আমাদী উপ-বিভাগের ১৩/১৪-২ নং পোল্ডারের এই তিনটি প্রকল্পের কাজ বিগত ৩ মাস আগে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। পাউবোর ২ কর্মকর্তাসহ স্থানিয় জনপ্রতিনিধি মিলে সামান্য কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা লোপাটের পায়তারা করছে বলে জানা গেছে।

পাউবোর দায়িত্বরত কর্মকর্তা মশিউল আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ এখনো শেষ হয়নি।

কেনো জরুরিভিত্তিতে কাজ দেখিয়ে পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হলো- সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমারা যতদূর জানি একটি প্রকল্পের কাজ করাতে হলে প্রথমত প্রকল্পের নকশা তৈরি বরাদ্দের পরিমান টেন্ডারসহ আনুসাঙ্গীক প্রক্রিয়া সারতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। এরপর দরপত্র আহ্বান কাজের কার্যাদেশ প্রদানসহ বিভিন্ন কারণে আরো ৫-১০ দিন সময়ক্ষেপণ হয়ে থাকে। ফলে হঠাৎ করে বাঁধের কোথাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে সেখানেই শুধুমাত্র জরুরিভিত্তিতে মেরামতের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে।

জানা যায়, এই তিনটি স্থান গত কয়েক মাস আগে ঝুঁকি দেখা দিয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে নিজের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ঘাটাখালি হরিণখোলা ২টি প্রকল্পে মাত্র ৪ লক্ষ টাকার কাজ করা হয়েছে। আর ২ নং কয়রার স্লুইসগেট সংলগ্ন প্রকল্পে বালুভর্তি প্রায় ১৪ শত জিও বস্তা ফেলানো হয়েছে।

কিন্তু বস্তাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে দায়সারাভাবে বাঁধের কাছে এবড়ো-থেবড়োভাবে ফেলা হয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের কোন কাজে আসছে না। ওই প্রকল্পে মাত্র ৩০ হাজার টাকার মাটির কাজ করানো হয়েছে। সাইনবোর্ডবিহীন এই প্রকল্পগুলোর বরাদ্দের টাকার পরিমান কখনোই জানা সম্ভব হয় না। বেশি লাভের আাশায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৩টি প্রকল্পে বাঁধের নিচে বালু দেয়ায় ৩টি প্রকল্পের নিচ দিয়ে ছিদ্র হয়ে পানির চাপে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফলে বর্তমানে এই ৩টি প্রকল্পই মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত