ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

যে কারণে রংপুরে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ

  রফিকুল ইসলাম, রংপর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২০, ১৮:৪৪

যে কারণে রংপুরে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ

দেশের উত্তরের বিভাগ রংপুর এখন করোনার ডেঞ্জার জোন। শুধু রংপুর জেলার আট উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭০৮ জন। আর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডেই আক্রান্ত ৪৯৮ জন। কিন্তু রংপুর নগরীতে কেন এত বেশী আক্রান্ত এ নিয়ে বিষ্মিত অনেকেই।

লকডাউন নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত কোন সিন্ধান্তে আসতে পারেনি বলে জানান সিভিল সার্জন। তাই দ্রুত রংপুর নগরীকে লকডাউনের আওতায় আনার দাবি নাগরিক সমাজের।

জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনার নমুনা সংগ্রহের বুথ মাত্র ১টি। তাও আবার নতুন ২০ জন আর পুরাতন ২০ জনের নমুনা নিতে পারে এই বুথ। সব মিলিয়ে প্রতিদিন মাত্র ৪০ জনের নমুনা সংগ্রহ করতে পারেন তারা। যেখানে প্রতিদিন কয়েকশ' লোক নমুনা দেয়ার জন্য তাদের ফোন করেন বা অপেক্ষায় থাকেন।

এদিকে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআরে সংগ্রহ করা ১ হাজারের বেশি নমুনা ফলাফল দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

করোনা নিয়ে কাজ করছেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে কেন রংপুর সিটিতে হঠাৎ এত সংখ্যক লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে।

তারা জানিয়েছেন, নমুনা দেয়ার পর ফলাফল হাতে না পাওয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি নমুনা দিয়ে ফলাফল পেতে সপ্তাহখানেক লেগেই যাচ্ছে। যেহেতু নমুনা দেয়া ব্যক্তি জানেন না যে তিনি করোনায় আক্রান্ত কিনা, তাই তিনি স্বাভাবিকভাবে সবার সঙ্গে চলাফেরা করছেন। এই চলাফেরা থেকেই সংক্রণ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছে বলে ধারণা তাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নমুনা দেয়ার পর যদি দ্রুত ফলাফল জানিয়ে দেয়া হতো এবং নমুনা দেয়া ব্যক্তি নমুনা দেয়ার পর ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত কোয়ারাইনটাইনে থাকতো, তাহলে সংক্রম দ্রুত ছড়াতো না। অর্থাৎ নমুনা দেয়া ব্যক্তিকেই সবার আগে সচেতন হতে হবে সংক্রমণ রোধে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীসহ জেলার মাত্র ৫ হাজার ৮৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭০৮ জনের পজিটিভ এসেছে। আক্রান্তের হার ২০ ভাগেরও বেশি। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৩টি ওয়ার্ডে লোকসংখ্যা ১২ লাখ হলেও এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে সক্ষম হয়েছেন। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৪৯৮ জনে।

এদিকে নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি করোনা পজিটিভ রোগী রয়েছে, যাদের সংখ্যা ১২৫ জন। এ ছাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩ জন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৯ জন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২ জন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬ জন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৬ জন, এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৪ জন।

নগরীর ৮টি ওয়ার্ডে একজনও কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী নেই, আবার ৯টি ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১ থেকে ৩ জন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ওয়ার্ডে নমুনা পরীক্ষা করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অর্থাৎ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা না করায় হয়তো সংক্রমণ ধরা পড়েনি।

সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজ জানান, প্রশাসনকে বলেও নমুনা পরীক্ষার বুথ স্থাপন করানো যায়নি। তাতেই আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সব ওয়ার্ডে পরীক্ষা করালে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রমজানের ঈদের কিছুদিন আগ থেকেই রংপুর অনেকটা স্বাভাবিক। সামাজিক দূরুত্ব বা ব্যক্তিগত দূরত্ব মানার দৃশ্য খুব একটা চোকে পড়ে না। গণপরিবহন বলতে নগরী এবং নগরীর বাইরে অটোরিকশা চলাচল করতে ৪ জনের জায়গায় ৬ জন। এ নিয়েও সংশ্লিষ্টরা কেউ কিছু বলছে না। এমনকি নগরীর ভেতর সবচেয়ে বড় বাজার সিটি বাজার। সেখানকার দৃশ্য আরো ভয়াবহ। সব মিলিয়েই রংপুর এখন করানার নিরাপদ ছোবলের জায়গা বলে মনে করছেন করোনা প্রতিরোধ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু।

রংপুর সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার জানান, আমরা নগরীর বিভিন্ন এলাকাকে রেডজোন, ইয়েলো জোনে চিহ্নিত করেছি। লকডাউন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করছি কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার জানান, রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সিটি বাজার লকডাউন করার। আমি তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কথা বলেছি। বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন। কিন্তু এখন তা বাস্তবায়ন হয়নি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত