ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

ট্রেন-সড়ক বিচ্ছিন্ন, পানিবন্দি সাড়ে ৪ লাখ মানুষ

  শওকত জামান, জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২০, ২০:৪৩

ট্রেন-সড়ক বিচ্ছিন্ন, পানিবন্দি সাড়ে ৪ লাখ মানুষ

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৭টি উপজেলায় ৫২টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। জেলা প্রশাসনের বরাদ্ধকৃত ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ত্রাণের আশায় দুর্গতরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে।

এদিকে পানির চাপে মাহমুদপুর-মাদারগঞ্জ বন্যা নিয়ন্ত্রণ সড়ক বাঁধের লালডোবা এলাকার অংশে ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে ওই অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ইসলামপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জ ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ি সড়কের জলব্রিজ ও কান্দির গ্রামে পাকা সড়কের ওপর দিয়ে বইছে পানি। ফলে দেওয়ানগঞ্জ-তারাটিয়া-সানন্দবাড়ি সড়কে যানবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ইসলামপুরে বন্যার পানিতে ডুবে কটা মন্ডল (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

ইসলামপুরের সাপধরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানান, বুধবার সকালে সাপধরী ইউনিয়নের কাশারী ডোবা গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে কটা মন্ডল নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত কটা মন্ডল কাশারীডোবা গ্রামে মৃত নয়ন মন্ডলের ছেলে। সে মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলো। সকালে বাড়ি থেকে বাজার যাওয়ার পথে বন্যার পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। পরে তার মৃতদেহ পানিতে ভেসে উঠলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে।

জামালপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার শেখ উজ্জল মাহমুদ জানান, মঙ্গলবার রাতে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনের রেললাইন পানিতে ডুবে যাওয়ায় ইসলামপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ লাইনে জামালপুর থেকে ইসলামপুর স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগ চালু রয়েছে।

মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, প্রবল বন্যার পানির ধাক্কায় মঙ্গলবার রাতে মাদারগঞ্জ-মাহমুদপুর যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ সড়ক বাঁধ লালডোবা অংশে ৫০ মিটার ভেঙে গেছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে নতুন করে মাদারগঞ্জে ১০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এই বাঁধের আরো একটি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ ছাড়াও যমুনা নদী বন্য নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বালিঝুড়ি অংশ ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোন সময় বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন তিনি।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন আগে কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণে যমুনার পাড়ে মাদারগঞ্জ-মাহমুদপুর সড়ক বাঁধটি নির্মিত হয়েছিলো। সড়কটি এলজিইডি’র নিয়ন্ত্রণে থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। সংস্কারের অভাবে বাঁধটি ভেঙে গেছে।

জেলা ৭টি উপজেলার মধ্যে যমুনাপাড়ের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা সবচেয়ে বেশি বন্যায় আঘাত হেনেছে। এই দুটি উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত। পানিতে ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। এখানকার দুর্গত এলাকাগুলোতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ চালু রয়েছে নৌকা ও ভেলায়।

পানিবান্দি মানুষজন ঘরে মাঁচা ও চালের উপরে অবস্থান করছে। যমুনার দুর্গম চরদ্বীপগুলোতে নৌকার অভাবে তীরে আসতে পারছে না সিংহভাগ মানুষ। যারা নৌকার ব্যবস্থা করতে পারছে তারা সড়কে, উঁচু স্থানে, আত্মীয়ের বাড়িতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার পরিজন ও গৃহপালিত গরু ছাগল নিয়ে উঠেছে। এসব মানুষ শুকনো খাবার বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সঙ্কটে ভুগছে। মানবেতর জীবনঝাপন করছে ভানবাসীরা।

বাড়িঘরে পানি ওঠায় উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে সাপধরী ইউনিয়নের কাশারীডোবা গ্রামের ৫০ বছর বয়সি মারফতি বেগম। পাশে বসা মিছিয়া রানী। অবশিষ্ট যা চাল ছিল তাই দিয়ে চুলায় ভাত রাঁধছেন।

ত্রাণ পেয়েছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে রান্নারত অবস্থায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'বাবা কাল কি খাবো তাও জানি না। ত্রাণ পাই নাই। ত্রাণের স্লিপ মুখ দেখে দেখে দেয়। আমগো লোকও নাই, আমাগো কফালো (কপালে) গেল বানেও ত্রাণ জোটে না। এইবার পামু কিনা জানি না।'

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী বলেন, পূর্বের ৩১০ মে. টন জিআর চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়নি। বিতরণ সম্পন্নের পর পুনরায় চাল বরাদ্দ দেয়া হবে। দুর্গত এলাকাগুলোতে ৫১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার সরবরাহে নগদ ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক ত্রাণের বিষয়ে বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। বরাদ্ধকৃত ত্রাণ দুর্গত এলাকায় বিতরণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পোঁছবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

নৌকা সঙ্কটে দুর্গতদের উদ্ধার বিষয়ে তিনি বলেন, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যমুনার দুর্গম এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থা করে আটকে পড়া দুর্গতদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত