ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

সড়কে ঝরলো ২০ প্রাণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২০, ২১:২৫

সড়কে ঝরলো ২০ প্রাণ

প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। করোনা মহামারির মধ্যেও মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে অসংখ্য নাম। এরইমধ্যে শনিবার দেশের বিভিন্নস্থানে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। এরমধ্যে ময়মনসিংহে ৭, চুয়াডাঙ্গায় ৬ জন, মানিকগঞ্জে দুজন, নারায়ণগঞ্জে দুজন, ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একজন, সাভারে একজন ও বগুড়ায় একজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়কের মুক্তাগাছায় রাজীব পরিবহনের একটি বাসের চাপায় সিএনজি অটোরিকশার চালকসহ সাতজন নিহত হয়েছে। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার মানকোন নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হচ্ছেন— সিএনজিচালক মুক্তাগাছার চেচুয়া গ্রামের আলাদুল (৩৫), মুক্তাগাছার ইচাখালি গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), মধুপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের নুরু (৩৫), তাসলিমা (২৮) ও লিজা (১২)। অপর দুজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।নিহতদের মধ্যে সিএনজির চালকসহ চারজন ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে নেয়ার পর আরও তিনজন মারা যান। দুর্ঘটনায় সিএনজি অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে গেছে।

এদিকে খবর পেয়ে মুক্তাগাছা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধারকাজ চালায়। পুলিশ বাসের চালককে আটক করেছে। মুক্তাগাছা থানার উপপরিদর্শক আমিনুল ঘটনাস্থল থেকে জানান, চেচুয়া বাজার থেকে মুক্তাগাছাগামী সিএনজিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসায় জামালপুরগামী রাজীব পরিবহনের বাস চাপা দিলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চুয়াডাঙ্গা সদরের সরোজগঞ্জ বাজারে রয়েল পরিবহনের একটি বাস আলমসাধু (শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন) এবং একটি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিয়েছে। এতে আলমসাধুর ৫ যাত্রীসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। মোটরসাইকেলের দুই আরোহীসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। আহতদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ মো. ফকরুল আলম খান এসব তথ্য জানান।

নিহতরা হলেন— ষষ্টি হালদার (৪০), পশু ডাক্তার মিলন (৩৬), রাজু মিয়া (৩৫), সোহাগ (২৫), শরিফ আলী (৪৫) ও কালু (৪০)। দুর্ঘটনাস্থলে একজন পড়ে আছে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে একটি আলমসাধু সরোজগঞ্জ বাজারে যাচ্ছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা চুয়াডাঙ্গাগামী রয়েল পরিবহনের একটি বাস সরোজগঞ্জ বাজারে পৌঁছালে ওই আলমসাধু ও একটি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সদর উপজেলার বসুভাণ্ডার দোহা গ্রামের নিতাই হালদারের ছেলে ষষ্টি হালদার, খাড়াগোদা গ্রামের মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে পশু ডাক্তার মিলন এবং তিতুদহ গ্রামের রাজু মিয়া নিহত হন। সোহাগ, শরিফ আলী ও কালুসহ কমপক্ষে ১৩ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে সোহাগ, শরিফ ও কালুকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মধ্যে পশু ডাক্তার মিলন সকালে হাঁটতে বের হয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হন।

ওসি জানান, পরিবহনটি জব্দ করা হয়েছে। চালক পালিয়ে গেছে। তাকে আটক করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।এদিকে, জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।

মানিকগঞ্জ : গাবতলী-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের বাস্তা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মিতরা আইরমাড়া গ্রামের আছালত খানের ছেলে মোটরসাইকেলচালক আশরাফ খান (৩৮) এবং পিকআপে থাকা মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরতলা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল্লাহ (৮)। আহত ব্যক্তি মোটরসাইকেলচালক আশরাফের কর্মচারী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাগুরা থেকে ছেড়ে আসা পিকআপ আসবাবপত্র নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। পিকআপটি গাবতলী-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়েকর বাস্তা এলাকায় আব্দুল আলী চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় পিকআপটি যাত্রীসহ এবং মোটরসাইকেলটি আরোহীসহ রাস্তার দক্ষিণ পাশের খালের পানিতে পড়ে ডুবে যায়। স্থানীয়রা পিকআপের যাত্রীদের উদ্ধার করেন। এ সময় পিকআপে থাকা ৮ বছরের শিশু আব্দুল্লাহকে পাওয়া না গেলে সাভার ও মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় শিশুটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।

অপরদিকে, মোটরসাইকেলের চালক ও পিছনে থাকা কর্মচারী গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোটরসাইকেল আরোহী আশরাফকে মৃত ঘোষণা করেন। আর কর্মচারীকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বালুবাহী ট্রাক গোলাকান্দাইল-আড়াইহাজার সড়কের সাওঘাট এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয়। নিহত দুজন হলেন রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল মাজার এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশার চালক মো. নাসির ও আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচগাঁও চরপাড়া এলাকার আবু সাইদের ছেলে ওয়াজিব (১৪)। নাসির শরীয়তপুর ডামুড্যা থানার শীদল এলাকার সেলিম মাতবরের সন্তান। আহত দুজন হলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বাসিন্দা নুরুন্নবী ও নাসির। আহত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রূপগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পরিমল সূত্রধর বলেন, গোলাকান্দাইল থেকে তিনজন যাত্রী নিয়ে আড়াইহাজার যাওয়ার পথে বালুবাহী ট্রাকটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালক ও এক কিশোর নিহত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুজন সুস্থ আছেন বলেও জানান তিনি। দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ গ্রহণ করতে রূপগঞ্জ থানায় যান স্বজনরা। তারা দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সাভার : ঢাকার ধামরাইয়ে অজ্ঞাতনামা পরিবহনের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় পুলিশ জানতে পারেনি কী ধরনের পরিবহন মোটরসাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দিয়েছে। শনিবার সকালে ধামরাইয়ের কসমস এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে মোটরসাইকেল আরোহীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ নিহত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছে। নিহত ব্যক্তির নাম আলাউদ্দিন (৩২)। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়।

ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে কোনো একটি যানবাহন ধাক্কা দিয়েছে। তবে দুর্ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় কেউ জানাতে পারেনি কী ধরনের যানবাহন ধাক্কা দিয়েছে। সড়কে লাশটি পড়ে ছিল, সেটির কাছাকাছি দূরত্বে পড়ে ছিল মোটরসাইকেলটি। ধামরাই থানার পুলিশ জানায়, আলাউদ্দিন মোটরসাইকেলে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে ধামরাইয়ের কসমস এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দ্রুতগামী একটি যানবাহন তাকে ধাক্কা দেয়। যানবাহনের ধাক্কায় রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পারভেজ (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কে এম আজিজুল হক জানান, রাতে শনির আখড়ায় মোরটসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান পারভেজ। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকালে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে নিহত যুবকের পরিচয় শনাক্ত করেন ছোট ভাই সাব্বির আহমেদ। তিনি আরও জানান, পারভেজ পিকআপভ্যান চালতেন। কিছুদিন হলো তিনি মোটরসাইকেলে করে যাত্রী আনা-নেয়া করছিলেন। শুক্রবার রাতে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে শনির আখড়ার বাসায় ফিরছিলেন। তখনই এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানতে পেরেছি।

আজিজুল হক জানান, এক ছেলে ও স্ত্রীসহ পরিবার নিয়ে কাজলা ব্রিজ স্কুল গলির আমিরের বাড়িতে থাকতেন পারভেজ। এটিই তাদের স্থায়ী ঠিকানা। তার বাবার নাম হাসান।

বগুড়া : বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরে বাসের চাপায় নিহত হয়েছেন এক মোটরসাইকেল আরোহী তরুণ। বৃষ্টিভেজা পিচ্ছিল সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর সময় ওই তরুণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে পড়ে গেলে দ্রুতগামী বাসের নিচে চাপা পড়েন।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেরপুর পৌরশহরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোটরসাইকেল আরোহীর নাম দীলিপ কুমার রায় (২৫)। তিনি সিরাজগঞ্জে ‘উদ্দীপন’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার গাঁড়াই বক্সিগ্রামে। তার বাবার নাম তারাপদ রায়। ওই তরুণের পরিবারের লোকজন সংবাদ পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। পরে বগুড়ার শেরপুরের হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে শেরপুরের হাইওয়ে এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। মহাসড়ক ছিল একটু পিচ্ছিল। হঠাৎ দীলিপ কুমার রায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের ওপর পড়ে যান। এ সময় ঢাকাগামী অজ্ঞাতনামা একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত