হরিণাকুন্ডুতে হরিলুট!

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় টিআর, কাবিখা, কাবিটা, রেজিস্ট্রি অফিস এবং হাট-বাজার ইজারার ওয়ান পার্সেন্ট ও এলজিএসপির টাকা কাজ না করেই হরিলুট করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন) অফিসকে ম্যানেজ করে সরকারি অর্থ লুটপাটের এই মহোৎসব চললেও প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপ নেই। চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দায়সারা বক্তব্য দিয়ে কার্যত চেয়ারম্যানদের পক্ষেই অর্থ লুটের সাফাই গেয়ে থাকেন।

ইতিমধ্যে এরকম অবৈধ আবদার পূরণ না করায় লাঞ্ছিত করা হয়েছে হরিণাকুন্ডু উপজেলার এক প্রকৈাশলীকে। এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ফজলুর রহমান নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান।

দিনাজপুরে ভোট গণনার পর উত্তেজনা, গুলিতে নিহত এক

এদিকে হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৭ নং রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দকৃত কিছু অর্থের কোন কাজ করেননি চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান রাসেল। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বশির উদ্দিন, ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য সাইদুল ইসলাম, ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম সরোয়ার, ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য আতিয়ার রহমান ও সংরক্ষিত ৭, ৮ , ৯- এর মহিলা ইউপি সদস্য মোমেনা খাতুন।

অভিযোগ দেয়ার পর ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা অভিযোগের জবাব দিতে চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন।

অন্যদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে চেয়ারম্যান চরপাড়া বাজারে ইট-বালু ফেলেছেন কাজ করার জন্য। ইউনিয়ন পরিষদে তড়িঘড়ি করে পানির লাইনের সংস্কার কাজ শুরু করেছেন।

প্রশ্ন উঠেছে যদি প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেই ইউএনও এবং পিআইও সরকারি অর্থ ছাড় করে থাকেন, তবে এখন এতো চিঠি চালাচালি আর মেম্বরদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার বিষয় আসছে কেনো?

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান রাসেল পরিষদের কোন সভা ছাড়াই ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের কাজের জন্য নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্প দাখিল করে তার সমুদয় অর্থ উত্তোলন করেছেন। এছাড়াও হাট-বাজারের অর্থের ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকার কাজ না করে তা উত্তোলন করে তিনি নিজের ইচ্ছামতো ব্যয় করেছেন। মান্দিয়া গ্রামের মোশারফের স্ত্রী শিরিন সুলতানার নামে ভিজিডির ৩০ কেজি চালের কার্ড থাকলেও ১৮ মাস চেয়ারম্যানের লোকজন তা উত্তোলন করছেন। এছাড়া জন্মনিবন্ধনের টাকাও তিনি নয়ছয় করেছেন।

অভিযোগে ওই ইউপি সদস্যরা আরও জানান, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পরিষদের ট্যাক্স বাবদ আদায়কৃত ৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা আদায় করলেও সদস্যদের সম্মানি ভাতা না দিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ব্যয় দেখিয়েছেন। এছাড়া পরিষদের ১% এর ২ লাখ ১২ হাজার টাকা, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাবিখা প্রকল্পে (২য় কিস্তি) কাচারীতোলা মিঠু হোসেনের বাড়ির পাশ হতে সাজ্জাতের বাড়ি অভিমুখে রাস্তাটি মাটি দ্বারা পুনর্নির্মাণে প্রায় ৭ মেট্রিকটন গম বরাদ্দ থাকলেও ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি ভরাট, বিগত চার বছরের ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আদায়ের প্রায় ৩ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ পরিষদের সভার অনুমোদন ছাড়াই তিনি উত্তোলন করেছেন।

এসব অভিযোগ ছাড়াও টিআর ও কাবিখাঁ প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষের নামে টিউবওয়েল আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইউপি সদস্য আড়ুয়াকান্দি গ্রামের বশির উদ্দিন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের টিআর প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টিউবওয়েল প্রকল্পের আওতায় ওই ইউনিয়নের চর আড়ুয়াকান্দি গ্রামের আসাদুল, একই গ্রামের আত্তাব আলী, পেড়াহাটি গ্রামের আয়ুব আলী, কাচারিতোলা গ্রামের সাহেব আলী, একই গ্রামের শাহিন, নিত্যানন্দপুর গ্রামের আজাদসহ আরও অনেকের নামে টিউবওয়েল বরাদ্দ দেখিয়ে দেননি।

চর আড়ুয়াকান্দি গ্রামের আত্তাব আলী ও আসাদুল ইসলাম জানান, তারা শুনেছেন তাদের নামে টিউবওয়েল বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু তারা তা পাননি। কাবিটার সোলার প্রকল্পে নাম দেয়া হলেও তারা এখনও সোলার পাননি।

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেযারম্যান রাকিবুল হাসান রাসেল বলেন, আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তিনি বলেন, কয়েকজনের নামে বরাদ্দকৃত টিউবওয়েল পরিষদেই আছে। সেগুলো দ্রুত ভুক্তভোগীদের বাড়িতে স্থাপন করা হবে। হাট-বাজারসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। সেখানে কোন অনিয়ম হয়নি।

এ বিষয়ে হরিণাকুন্ডুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, আমরা রঘুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে একটা চিঠি দিয়েছি। তাছাড়া সরেজমিনে গিয়ে আমি প্রকল্পগুলো তদন্ত করে দেখবো।

হরিণাকুন্ডুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জামাল হোসেন বলেন, আমরাতো প্রকল্প দেখেই বিল দিয়েছি। তারপরও আমি এ বিষয় নিয়ে পরে আপনার সাথে কথা বলবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে