ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

অস্বাভাবিক জোয়ারে দুই সড়ক বিচ্ছিন্ন, বহু গ্রাম প্লাবিত

  কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২০, ২০:১৭

অস্বাভাবিক জোয়ারে দুই সড়ক বিচ্ছিন্ন, বহু গ্রাম প্লাবিত

জলোচ্ছ্বাসের ক্ষত না শুকাতেই আবারও ক্ষত! মাত্র কয়ক দিনের মাথায় মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের ২৫টি গ্রাম। পানির স্রোত অতিরিক্ত হওয়ায় ভেঙে গেছে দুটি বড় কালভার্ট। এতে বিচ্ছিন্ন জনপথ।

উপজেলার সাহেবের হাট থেকে চর লরেন্স সড়ক ও মতিরহাট থেকে তোরাবগঞ্জ সড়কের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। যাতায়াত ও যান চলাচলের কোন ধরণের সুযোগ থাকছে না।

এছাড়াও জোয়ারে তেলিয়ে গেছে হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট, নবীগঞ্জ থেকে চর লরেন্স সড়কের দুটি বড় কালভার্ট পানির স্রোতে ভেঙে নিচে পড়ে গেছে। এতে যান চলাচলের আর কোন সড়ক থাকলো না।

স্থানীয়রা জানায়, তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট ও চর লরেন্স থেকে নবীগঞ্জ সড়ক দুটি দিয়ে মেঘনা নদীর অর্থনীতির সম্পর্ক ছিল। এসব সড়ক দিয়ে নদীর ইলিশ মাছসহ কৃষি ফসলের বড় চালান যাতায়াত করে। এ দুটি সড়ক দিয়ে লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত ছিল। বড় কালভার্ট দুটি ভেঙে পড়াতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সকল গ্রামের পুকুর, জলাশয় ডুবে গেছে। কাঁচা ঘর-বাড়ি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। পানির তোড়ে বিভিন্ন সড়ক ভেঙে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ।

এসব পরিবারে দু'দিন যাবৎ চুলায় আগুন জ্বলছে না। হচ্ছে না কোন ধরণের রান্না। এসব পরিবারের মাঝে এখনো কোন ধরণের শুকনো খাবার পৌঁছেনি।

বুধবার (১৯ আগস্ট) দুপুর থেকে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৬ ফুট বেড়ে যায়।

আজ শুক্রবার দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও নামছে না পানির স্রোত। ভেসে যাচ্ছে আগের মতো সবকিছু। হাজার পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা আর আতঙ্ক। একইভাবে গত ৫ আগস্টের কয়েক দফা জোয়ারে রামগতি ও কমলনগরে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

গত চার দশক ধরে রামগতি ও কমলনগরে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যায়। বেড়িবাঁধ না থাকায় এখন অরক্ষিত উপজেলা। যে কারণে জোয়ার এলেই প্লাবিত হয় এসব অঞ্চল।

দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। ফসলি জমি-মাঠ পেরিয়ে পানি ঢুকে পড়ে বসতঘরে। জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৬ থেকে ফুট বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জোয়ারে স্রোতের পানিতে রাস্তাঘাট ও পুল-কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এতে অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়কে যোগাযোগ ব্যাহত হয়, দুভোর্গে পড়ে চলাচলকারীরা।

উপজেলার চর কালকিনি, চর মার্টিন, চর লরেন্স, সাহেবেরহাট, ফলকন ও পাটারিরহাট ইউনিয়ন পানির নিচে ডুবে গেছে। নাছিরগঞ্জ, মাতাব্বরহাট, বাঘারহাটসহ উপকূলীয় হাট-বাজারগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। জোয়ারের পানিতে জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এছাড়া জলাশয়, পুকুরের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে।

কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী বলেন, জোয়ার এলেই কমলনগর ডুবে যায়। ফের অস্বাভাবিক জোয়ারে উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পানির নিচে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, জলোচ্ছ্বাসে উল্লেখযোগ্য বড় দুটি কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় উপজেলার চর লরেন্স থেকে নবীগঞ্জ, তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট সড়কের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে অর্থনীতির বড় ধরণের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

মাত্র কিছুদিন আগে জলোচ্ছ্বাসে পানিতে ডুবে গেছে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় অংশ। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি সম্মুখীন হবে এ অঞ্চলের মানুষ। দ্রুত সরকারকে বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত