ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘এর আগে সাংবাদিককে মেরেছি, তোকে দেখে নিব’

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:২১  
আপডেট :
 ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:৩১

‘এর আগে সাংবাদিককে মেরেছি, তোকে দেখে নিব’

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলাধীন কাঁকড়া নদীর কারেন্টেরহাট বালুমহালের সংবাদ সংগ্রহে যান কয়েকজন সাংবাদিক। সেখানে সাংবাদিককে মারার হুমকি তথা অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন বালুমহালের ইজারার দায়িত্বে থাকা আতিকুর রহমান শাহ।

কাঁকড়া নদীর ব্রিজের পাশে এবং কারেন্টের হাট ডিগ্রি কলেজ মাঠের পাশে বড় বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে চিরিরবন্দরবাসীর বহুল প্রতিক্ষিত কয়েক কোটি টাকা মূল্যের নতুন কাঁকড়া ব্রিজ, রেল ব্রিজ ও কারেন্টেরহাট ডিগ্রি কলেজের শহিদ মিনারসহ পুরো মাঠটি।

সাধারণ মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার সরেজমিন বালুমহালের তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিকরা। এ সময় বালুমহালের দায়িত্বে থাকা আতিকুর রহমান শাহ সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারার হুমকি দেন। এর আগেও অনেক সাংবাদিককে তিনি মেরেছেন বলেও জানান।

বালুমহালটি দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের নামে ইজারা নেয়া হলেও দেখাশোনা করেন তার ভাই ভাই আজো শাহ এবং আতিকুর রহমান শাহ।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলা ১৪২৭ সালের জন্য চিরিরবন্দর উপজেলার কাঁকড়া নদীর কারেন্টেরহাট বালুমহালটি সরকারি ইজারা পায় দিনাজপুর শহরের আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তবে এই ঘাটটির দায়িত্বে রাখা হয় ইজারাদার যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের ভাই আজো শাহ ও হাজী আতিকুর রহমান শাহকে।

এলাকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের কারণে বালুমহাল নিয়ে কেউ সংবাদ প্রকাশ করতেও পারে না বলে জানা যায়।

সরকারি বালুমহাল হলেও কাঁকড়া নদীর কারেন্টেরহাট সংলগ্ন নতুন ব্রিজ এবং কারেন্টেরহাট ডিগ্রি কলেজের মাঠ ঘেঁষে দুই পাশে মোট ৭টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ ২টি ব্রিজ ও প্রতিষ্ঠানসহ কারেন্টেরহাট বাজার এলাকাটি। এছাড়াও বালুভর্তি ১০ চাকার অবৈধ বড় বড় ট্রাক চালানোর ফলে সরকারি রাস্তাসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে করে ওই এলাকার মানুষ পড়েছে ভোগান্তিতে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন এবং বালুমহাল ইজারা প্রদান ও আনুসাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন ২০১০ এর ধারা ৪ (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন, ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু বা মাটি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ।

কিন্তু সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে কাঁকড়া নদীর ওপর একটি রেল ব্রিজ, সরকারের নতুন একটি সড়ক ব্রিজ ও একটি কলেজসহ কারেন্টেরহাট বাজারটি হুমকির মুখে পড়েছে।

শনিবার কাঁকড়া নদীর কারেন্টেরহাট বালুমহালের ছবি তুলে দায়িত্বে থাকা আতিকুর রহমান শাহ'র কাছে ইজারার মালিক এবং ঘাট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হন আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অফিসে যান, অফিসে সবকিছু আছে। এইখানে আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে এরকম কোন ম্যানুয়াল আছে আমার? আপনি সাংবাদিক হইছেন তা কি হইছে?'

আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেন- জিজ্ঞেস করলে তিনি আরো রেগে গিয়ে বলেন, ‘তুই এগুলো আমার কাছ থেকে জানকে চাবি কেন? সরকারি অফিস আছে না? সরকারি অফিসে গিয়ে নে! এখানে কার লোম ছেড়ার জন্য আসছিস? তুমি আমাকে চেনো? আমি সাংবাদিককে পেটানো লোক। আমি এর আগে সাংবাদিককে মেরেছি! শুনে দেখিস! সেখানে কেস পর্যন্ত হইছে। তুমি কে, তোমাকে উত্তর দিব কেন? এখানে তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে কেন? এখানে ফাজলামো করার জন্য আসছেন! তুমি এখানে আসছ কেন? তুমি সাংবাদিক হয়েছো বলে আমি হাতে চুড়ি পরে থাকব না। পারলে আমার বিরুদ্ধে পেপারিং করে দিস যা! আমার কি ছিড়তে পারিস তোকে আমি দেখে নিব!’

কাঁকড়া নদীর বালুমহালের ইজারাদার যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত একাধিক নম্বরে কল করা হলেও তার সব নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিরিরবন্দরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইরতিজা হাসান বলেন, এর আগেও এই ঘাট মালিককে জরিমানা করা হয়েছিল। তাদের সর্তক করে দেয়া হয়েছে যাতে ড্রেজার মেশিন না চালায়। কিন্তু তারা কথা শোনেননি। বিষয়টা আমি ইউএনও স্যারের সাথে আলাপ করে দেখি। যা ব্যবস্থা নিতে বলে সেটা নিব। বড় পরিসরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছি আমরা।

জানতে চাইলে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আপনাকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি। আপনি থানায় অথবা ইউএনও অফিসে একটা অভিযোগ দিতে পারেন। আমরা ব্যবস্থা নিব। এর বাইরেও আমরা বিষয়টা দেখছি। তাদের বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেয়ার আমরা নিব।

তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, দেখা যায় আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে তাদের জরিমানা করে আসি, তারাও বলে অবৈধভাবে আর বালু তুলবে না। কিন্তু সেখান থেকে আমরা চলে আসার পর আবার অবৈধভাবে বালু তোলা হয়। আমরা এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে আছি। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।

এ বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। খুব দ্রুতই এক দুইদিনের মধ্যে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

গালাগালির অডিও শুনতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত