ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাতক্ষীরায় বেড়েছে শিশুশ্রম, অকালে ঝরছে প্রাণ

  শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২০, ২১:২২  
আপডেট :
 ১৮ নভেম্বর ২০২০, ২১:৩৮

সাতক্ষীরায় বেড়েছে শিশুশ্রম, অকালে ঝরছে প্রাণ

সাতক্ষীরায় শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে উদ্বেগজনকভাবে। কোভিড-১৯ করোনা মহামারির এই সময়ে স্কুল বন্ধের কারণ ছাড়াও দারিদ্র্য বৃদ্ধি ও সামাজিক সেবা প্রাপ্তি কমতে থাকায় অধিক সংখ্যাক শিশুকে কর্মক্ষেত্রে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

জেলার বৈধ-অবৈধ ইটভাটা, চায়ের দোকানে, লেদ ওয়ার্কশপ, মাদক বহনসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কাজে শিশুদের নিযুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর দিন দিন শিশুশ্রমের সংখ্যাও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া সাতক্ষীরার ভাঙন ও বন্যা কবলিত উপকূলীয় অঞ্চল আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার হাজার হাজার পরিবারের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবিকার তাড়নায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। তাদের ভেতর ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা নেহাত কম নয়।

অর্থ উপার্জন করতে এসব শিশুরা যুক্ত হচ্ছে ভারী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকরা শারিরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেইসঙ্গে অঙ্গহানি ছাড়াও অবলীলায় মৃত্যু হচ্ছে শিশু শ্রমিকেদের।

এমনি এক দৃষ্টান্ত শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের ১০ বছর বয়সী শিশু শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম। সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে কুমিল্লার রামনগর এলাকার ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুশ্রমিক জাহিদুল ইসলাম শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের হামজার আলীর ছেলে।

গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়া রামনগর এলাকার এমএসডি নামের ইটভাটায় কর্মরত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শ্যামনগর কাশিমাড়ীর স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, হামজার আলী ও মোমেনা দম্পতির পরিবার চরমভাবে অস্বচ্ছল। দুবেলা দুমুঠো ভাত যোগাড় করা তাদের জন্য খুবই দুষ্কর। চরম দরিদ্র হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন বাবা-মায়ের ভরসা হয়ে পরিবারের জন্য দুমুঠো ভাতের সংস্থান করার আশা নিয়ে শ্রমিক সর্দারের হাত ধরে কুমিল্লা পাড়ি জমায় জাহিদুল। ইভাটার কষ্টকর কাজে যাওয়ার ১৫ দিন পর লাশ হয়ে বড়িতে ফিরলো শিশু শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম।

জাহিদুলকে ইভাটায় কাজ করতে নিয়ে যাওয়া শ্রমিক সর্দার রবিউল ইসলামের দাবি, মাটি ভেজানোর কাজে ব্যবহৃত মোটরের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার ভোরে জাহিদুলের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।

ইটভাটাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কঠোর পরিশ্রমের কাজে শিশুদের ব্যবহার করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাতক্ষীরার সুধীসমজ। শিশুশ্রম বন্ধ ও শিশু জাহিদুলের অকাল মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের আইনের আওতায় নেয়ার দাবি ও জানিয়েছে জেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত