ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভুয়া বিল-ভাউচারে প্রণোদনার টাকা হরিলুট!

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৪৭  
আপডেট :
 ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১৯:১২

ভুয়া বিল-ভাউচারে প্রণোদনার টাকা হরিলুট!
সংগৃহীত ছবি

করোনাকালীন সময়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা হোটেলে ছিলেন না। তবুও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে হোটেলে থাকা বাবদ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা ও খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য বিভাগে হৈচৈ পড়ে গেছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা) এই টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।

এভাবে করোনা প্রণোদনোর ৩ লাখ টাকা হরিলুট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠলে ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা) বলেছেন, তিনি সঠিকভাবেই প্রণোদনার অর্থ ব্যায় করেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত জুলাই মাসের ৫ তারিখ ডা. শামীমা শিরিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি (স্বারক নং- উঃজেঃস্বঃকমঃ/কালীঃ/ঝিনাইঃ/২০২০/৪৭৯) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত জুন মাসের ৬ তারিখ থেকে ৬ জন চিকিৎসক, ৬ জন নার্স ও অন্যান্য ১২ জন স্টাফের কালীগঞ্জের রহমানিয়া আবাসিক হোটেলে থাকা বাবদ ৫৭ হাজার ৬০০ এবং খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা দেখানো হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৬৬ হাজার টাকা খরচের কথা বলা হয়।

একই তারিখে মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে (স্বারক নং- উঃজেঃস্বঃকমঃ/কালীঃ/ঝিনাইঃ/২০২০/৪৭৮) উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ পরিচালনার জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, রহমানিয়া হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ২ জন, মে মাসে ১ জন, জুন মাসে ১৫ জন, জুলাই মাসে ১৪ জন, আগস্ট মাসে ২৯ জন অবস্থান করেছেন। কিন্তু উক্ত মাসগুলোতে হোটেল বোর্ডের রেজিস্ট্রারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন চিকিৎসক, নার্স ও কোন কর্মচারীর নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এছাড়া রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না।

রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, করোনার মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন ডাক্তার ও নার্স এখানে থাকেনি। রেজিস্ট্রার খাতায় যাদের নাম আছে, তারাই ছিলেন। এর বাইরে কেউ ছিলেন না। এছাড়া রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাঝহারুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই তিনি কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কখনো হোটেলে থাকেননি। এখনো পর্যন্ত সরকারের কোন প্রণোদনা তিনি পাননি। তিনি কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালনের সময় হাসপাতালের ডরমেটরিতে ছিলেন।

আরেক চিকিৎসক আর্জুবান নেছা বলেন, তিনি বিভিন্ন সময় হোটেলে থেকেছেন। কিন্তু তারিখ বা কোন মাসে থেকেছেন সেটা তিনি জানাতে পারেননি। তিনিও প্রণোদনার টাকা পাননি বলে স্বীকার করেন।

এছাড়া হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত স্টাফরাও কোন প্রকার সরকারি প্রণোদনার টাকা পাননি বলে জানান। তাই প্রশ্ন উঠেছে করোনাকালীন সময়ে সরকারের ৩ লাখ টাকা তাহলে কোথায় খরচ হলো?

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন বলেন, হোটেলে থাকা নিয়ে রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার কেন এমন বলেছেন আমি জানি না।

তিনি দাবি করেন, ডাক্তাররা রোস্টার মতো ডিউটি করেছেন। ওই সময় তারা হোটেলটিতে ছিলেন।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানা জানান, এমনটি তো হওয়ার কথা নয়। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত