ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

‘অবহেলায়’ শিশুর মৃত্যু, আদালতের নির্দেশে তোলা হলো লাশ

  ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:২১

‘অবহেলায়’ শিশুর মৃত্যু, আদালতের নির্দেশে তোলা হলো লাশ
ছবি- প্রতিনিধি

ময়মনসিংহ নগরীর রেজিয়া ক্লিনিকে চিকিৎসকের 'অবহেলায়' সাত বছরের শিশু সাজ্জাদ হোসেন মৃত্যুর সাড়ে চার মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার ৬ নম্বর চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের চর লক্ষীপুর গ্রামের চর লক্ষীপুর কাছিমুল উলুম মাদ্রাসার কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেনের উপস্থিতিতে লাশ তোলা হয়।

এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর আবুল কাশেমসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

লাশ দেখতে স্থানীয় এলাকাবাসী ভিড় জমায়। নিহত শিশুর মায়ের কান্নাকাটিতে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম জানান, গত বছরের ১ অক্টোবর সাজ্জাদের এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা হলে নগরীর চরপাড়ার ব্রাহ্মপল্লী এলাকার রেজিয়া ক্লিনিকে অপারেশ হয়। পরদিন সকালে সাজ্জাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। সেখানে সাজ্জাদকে ভর্তি করা হলে কিছুক্ষণ পরেই সে মারা যায়।

এ ঘটনায় রেজিয়া ক্লিনিকের পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান ও তার স্ত্রী ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জন ডিসি বর্মণ ও এনেসথেসিয়ার চিকিৎসক টিকে সাহা এবং প্রীতি রঞ্জন রায়কে আসামি করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন নিহতের মা আনোয়ারা বেগম। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর লাশ উত্তোলনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ দেন।

ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম জানান, ২ ফেব্রুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হলে সোমবার ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তোলা হয়। অচিরেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়া হবে। সুষ্ঠু বিচার থেকে যেন কোনোভাবেই শিশুটির পরিবার বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে মামলার তদন্তকাজ সম্পূর্ণ করা হবে।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেন বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশেই কবর থেকে লাশ তোলা হয়েছে। পরবর্তীতে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণ করে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন পেশ করবে। ময়নাতদন্ত শেষ হলে পুনরায় লাশ একই জায়গায় দাফন করা হবে।

নিহত শিশুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ১ অক্টোবর সাজ্জাদের এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা উঠলে নগরীর চরপাড়ার ব্রাহ্মপল্লী ক্লিনিকের মালিক হাসানুজ্জামান তার ক্লিনিকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। ভর্তি হওয়ার পরপরই রাতে অপারেশন করতে ১৩ হাজার টাকা লাগবে বলে জানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পরে ৯ হাজার টাকা জমা দিলে তাড়াহুড়া করে ডাক্তাররা অপারেশন করে চলে যায়।

‘মধ্যরাতে ছেলের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তখন ক্লিনিকের লোকজনের সহযোগিতা চাইলে কেউ সহযোগিতা করেনি। ছেলের খারাপ অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো দায়ভার নিবে না বলে ভোররাতে তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়া হয়।’

আনোয়ারা বেগম বলেন, পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই সাজ্জাদ মারা যায়। সাজ্জাদ জন্মের কিছুদিন পরেই তার বাবা মারা গেছে। দুই সন্তান নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সাজ্জাদ মারা গেলেও কোনো বিচার পাইনি। আল্লাই ভালো জানে কোনোদিন বিচার পাবো কিনা।

স্থানীয় আবুল কালাম বলেন, নিহত শিশু সাজ্জাদ চর লক্ষীপুর গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে। গরীবের কেউ নেই, এর বড় প্রমাণ হলো সাজ্জাদ মারা যাওয়ার পর। যাদের অবহেলায় ছেলেটা মারা গেল, তারা শান্তনার বদলে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। এতো বড় অন্যায় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমাদের দাবি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।

রেজিয়া ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অপারেশন করলে রোগী মারা যেতেই পারে। এ নিয়ে কারো সাথে আপোষ নয়। সাজ্জাদের মৃত্যুর বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মোকাবিলা করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত